ভিনগ্রহে প্রাণের খোঁজে

বছর দুয়েক পর আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে অমর একুশে বইমেলা। পাঠকের পদাচারণায় মুখর এই বইমেলায় কবিতা-গল্প-উপন্যাসের পাশাপাশি এসেছে বেশ কিছু বিজ্ঞানের বই। অনুবাদ ও মৌলিক মিলিয়ে হরেক স্বাদের কল্প-বিজ্ঞানের বইও ঠাঁই পেয়েছে প্রকাশনার স্টল কিংবা প্যাভিলিয়নে। পাঠকদের জন্য সেগুলোর ভেতর থেকে নির্বাচিত কিছু বইয়ের পর্যালোচনা নিয়মিত প্রকাশিত হবে।

আজ আলোচনা করা হলো ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীর এলিয়েনের সন্ধানে বই সম্পর্কে।

ভিনগ্রহে কী প্রাণ আছে?

এ প্রশ্নের জবাব নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। যতদিন তারা না আসছে, ততদিন এই দোলচাল থেকেই যাবে। তবে অনুমান, গবেষণা কিংবা গাণিতিক হিসাব কষতে তো দোষ নেই! তাই বৈজ্ঞানিক তো বটেই দার্শনিক আলোচনাতেও প্রায়ই তর্কের বিষয় হয়ে ওঠে এলিয়েনেরা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখাতে এলিয়েন ছিল। এলিয়েনের চেহারা কেমন হবে, তার একটা স্কেচ এঁকেছিলেন সত্যজিৎ রায়। সেই ছবি আর কাহিনি ধার করে স্টিভেন স্পিলবার্গ বিখ্যাত ইটিকে হাজির করেছিলেন রুপালি পর্দায়। তারপর কতশত বিজ্ঞান কল্পকাহিনি আর এলিয়েননির্ভর সিনেমা তৈরি হয়েছে বিশ্বজুড়ে, তার হদিস রাখা কঠিন। কিন্তু বিজ্ঞান কী বলে? জানতে চাইলে এলিয়েনের সন্ধানে বইটা হাতে নিয়ে দেখতে পারেন।

‘ওরা কোথায়’ বলে এলিয়েনবিষয়ক বিতর্কটা উসকে দিয়েছিলেন বিখ্যাত পদার্থবিদ এনরিকো ফার্মি। তবে এলিয়েনের সন্ধানে বৈজ্ঞানিক অভিযাত্রা শুরু হয় কার্ল সাগানের হাত ধরে। তিনি ‘সেটি’ নামের একটা প্রজেক্ট দাঁড় করিয়েছেলিনে বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে। ফল অবশ্য ইতিবাচক হয়নি। কিন্তু ফার্মি যে প্রশ্নটা তুলেছিলেন—ভিনগ্রহে অতশত বুদ্ধিমান সভ্যতাই যদি থাকে, তাহলে ওরা কেন আসেনি—সে প্রশ্নের জবাবই আসলে খুঁজতে চেয়েছিলেন কার্ল সাগান বিশাল সব যন্ত্রপাতি সাজিয়ে। এলিয়েনেরা কখন পৃথিবীতে তাঁদের সুপারক্রাফট নামাবে তার অপেক্ষা না করে নিজেরাই তাদের খুঁজে দেখলে কেমন হয়, কে জানে হয়তো মহাকাশের দূর কোনো কোণ থেকে আমাদের জন্যই তারা সংকেত পাঠাচ্ছে! এটাই ছিল সাগানের দর্শন। তার আগে ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক অনেক হিসাব-নিকাশ আর সম্ভাবনার খতিয়ান মিলিয়ে দাঁড় করিয়েছিলেন একটা সমীকরণও। রুশ বিজ্ঞানী নিকোলাই কার্দশেভ দিয়েছিলেন কার্দাশেভ স্কেলের ধারণা। ছয় দশক পেরিয়ে এসে, আজও এগুলো ভিনগ্রহী বুদ্ধিমান সভ্যতার সংখ্যা ও উন্নত-অনুন্নতের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এলিয়েনের সন্ধানে || ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী|| প্রচ্ছদ : আরাফাত করিম || প্রকাশক : প্রথমা || পৃষ্ঠা : ১২০ || দাম : ২০০ টাকা

তবে এলিয়েনের সন্ধানে বইটি কেবল কার্ল সাগান, ড্রেক সমীকরণ আর কার্দশেভ স্কেলেই আটকে থাকেনি। মাহবিশ্বে বুদ্ধিমান সভ্যতার অস্তিত্ব আদৌ আছে কিনা, থাকলেও তার সম্ভাবনা কতটা, তারও তত্ত্ব-তালাশ করেছেন লেখক। গোল্ডিলকস জোন, গণিত ও সিগন্যালের মারপ্যাঁচ, প্রাণধারণের বিজ্ঞান, সভ্যতার উন্নয়নের সিঁড়ি, সেগুলোর বেড়ে ওঠা নিয়ে বৈজ্ঞানিক আলোচনার পাশাপাশি দার্শনিক আলোচিত হয়েছে এই বইয়ে। এন-বডি প্রবলেম, হ্যানসনের ফিল্টার, গেইয়ান ও বসট্রমের বটলনেক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, রবীন্দ্রনাথ যে ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণ নিয়ে ভেবেছিলেন, সেটা নিয়ে লিখেছিলেন—এ তথ্য বেশিরভাগ পাঠকের কাছেই নতুন। সেই নতুন তথ্যের পাশাপাশি আপনার চোখ কপালে উঠবে এটা জেনে যে সেটাই ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রথম লেখা!

সবমিলিয়ে ১২০ পৃষ্ঠার এলিয়েনের সন্ধানে বইটি পরিশিষ্টসহ ষোলটি অধ্যায়ে গড়া। প্রতিটি অধ্যায়েই বিজ্ঞান যেমন আছে, আছে দার্শনিক আলোচনা। নিঃসন্দেহে বইটি পাঠক মনস্তত্ত্বকে এলিয়েন সম্পর্কে নতুন ভাবনার খোরাক জোগাবে। সবশেষে আরেকটা কথা বলতেই হয়, এলিয়েনের এমন চুলচেরা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে বাংলাভাষায় খুব বেশি বই লেখা হয়নি।

বইটি পাওয়া যাবে অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এ প্রথমা প্রকাশনের প্যাভিলিয়নে, ২৫% কমিশনে। একই মূল্যে পাওয়া যাবে প্রথমা ডট কম ও রকমারি ডটকমসহ অন্যান্য অনলাইন বুক শপে।