মহাকাশ আর জ্যোতিপদার্থবিদ্যার গল্প

একসময় মানুষের ধারণা ছিল পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র। গবেষকদের অনেকদিনের অনুসন্ধানে সে ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। জানা গেছে, কেন্দ্র তো দূর, মানুষের বসতি এই পৃথিবী মহাবিশ্বের গঠন অনুযায়ী বিশেষ কোন অবস্থানে নেই। এ নিয়ে সৌমেন সাহার মহাকাশ ও জ্যোতিপদার্থবিদ্যা বইয়ে রয়েছে বিস্তারিত আলোচনা। আছে মহাজাগতিক ঘটনার কারণ ও ব্যাখ্যা।

যেমন, মানুষ যখন মহাকাশ জয় করল, তখন শুরু হলো প্রাণের অনুসন্ধান। প্রাণ কি শুধু পৃথিবীতেই? দূর কোনো গ্রহ কি পাওয়া যাবে, যেখানে প্রাণ ছিল? পৃথিবী অবাসযোগ্যহীন হয়ে পড়লে মানুষের নতুন বসতি প্রয়োজন হবে। প্রজাতি টিকিয়ে রাখতে পাড়ি জমাতে হবে অন্য কোন গ্রহে। এজন্য পৃথিবীর বিকল্প গ্রহ অনুসন্ধান চলছে যুগ যুগ ধরে। বিজ্ঞানীদের অন্যতম লক্ষ্য শনির উপগ্রহ টাইটান। সায়েন্স ফিকশন বইয়ে অনেক গল্প পাওয়া যায় টাইটান নিয়ে। প্রাণ উপযোগী পরিবেশ কখনও ছিল না টাইটানে। তবে কখনো কি তৈরি হবে? বেশ কয়েকটি অভিযানে দেখা গেছে, টাইটানে এখন মানুষের বসবাসের পরিবেশ নেই। ওখানকার খুব ঠান্ডা পরিবেশ প্রাণের উপযোগী হয়ে উঠতে সময় লাগবে লাখো বছর। সূর্যের জীবনকাল শেষ হয়ে এলে টাইটানের উষ্ণতা বাড়বে। হয়তো তখন প্রাণের উদ্ভব ঘটবে। পৃথিবীতে ততোদিন মানুষ টিকে থাকলে পাড়ি জমাবে টাইটানে।

মহাকাশ ও জ্যোতিপদার্থবিদ্যা ।। লেখক: সৌমেন সাহা ।। প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ ।। প্রকাশক: পাণ্ডুলিপি ।।পৃষ্ঠা: ২০৮ ।। দাম: ৩৫০ টাকা

আবার কালপুরুষ তারামণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা আর্দ্রা। পৃথিবী থেকে এই তারার দূরত্ব ১৩১ পারসেক। এত দূরে থাকা সত্ত্বেও তারাটি কালপুরুষ মণ্ডলের অন্যান্য তারার চেয়ে উজ্জ্বল। খালি চোখে আকাশের যত তারা দেখা যায়, তার মধ্যে এটিই উজ্জ্বলতা সবচেয়ে বেশি। তবে সূর্যের তুলনায় এটি শীতল। মনে করা হয়, মূল জ্বালানি হাইড্রোজেন শেষ হয়ে এখন এর ভেতরে হিলিয়াম পুড়ছে। কম তাপমাত্রার আর বিশালাকৃতির জন্য একে শীতল দানব তারা বলা হয়। আমাদের ছায়াপথের প্রতি ১০ লাখ তারার মধ্যে একটি মাত্র এধরনের তারার সন্ধান পাওয়া যায়! এরকম চমৎকার সব ঘটনা নিয়ে এই বইয়ের গল্প।

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ২০২০ জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের এক মাইলফলক। পুরস্কার পেয়েছেন রজার পেনরোজ, আন্দ্রিয়া গেজ ও রাইনহার্ড গেনজেল। কৃষ্ণগহ্বর গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের উজ্জ্বল সমন্বয় ঘটেছে এই নোবেলে। গবেষকেরা এই পুরস্কার পাওয়া পর্যন্ত মহাকাশ গবেষণার পাড়ি দিয়েছেন পথ দীর্ঘ। ধারাবাহিকভাবে তাদের গবেষণার কথা উঠে এসেছে এই বইয়ে।

মহাবিশ্বের গঠন ও বস্তুজগতের বিজ্ঞান আর গল্প নিয়ে লেখা হয়েছে মকাশ ও জ্যোতিপদার্থবিদ্যা বইটি। লেখক সৌমেন সাহা ধৈর্য ধরে লিখেছেন মহাবিশ্বের বস্তুজগতের সকল গল্প। পর্যবেক্ষণভিত্তিক গবেষণায় জ্যোতির্বিদ আর গবেষকদের হাত ধরে জ্যোতিপদার্থবিদ্যার বিকাশ ঘটেছে। বইয়ে লেখক একে একে বলেছেন তাদের গল্প। একই সাথে গ্রহ-নক্ষত্র আবিষ্কারের স্বরূপ তুলে এনেছেন সহজ ভাষায়। সমীকরণ ছাড়া ঘটনাগুলোর এমনভাবে বর্ণনা করেছেন, যেন সাধারণ পাঠক সহজেই বুঝতে পারেন।

সকলের মনে জিজ্ঞাসা থাকে, কীভাবে কাজ করে এই মহাবিশ্ব? উত্তর পাওয়ার সাথে সাথে দূর আকাশের হাতছানিতে মহাবিশ্বকে আরও একটু কাছে থেকে অনুভব করবেন পাঠক।

বইটি দুটি খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডের নাম মহাকাশ ও জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যা। যেখানে অনেক ভাগে মহাবিশ্বের আদি অবস্থা থেকে শুরু করে বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়েছে। গ্রহ-নক্ষত্রের আশ্চর্য সব ঘটনার কথা যেমন এসেছে, নক্ষত্রখচিত মহাবিশ্বের পরিণতি নিয়েও আলোচনা আছে। মহাজাগতিক পদার্থ ও ঘটনাই বেশিরভাগ জায়গা দখল করে আছে। পরের অধ্যায়ে আছে মহাকাশ জয়যাত্রার গল্প। এই গল্পে পাঠককে আমন্ত্রণ।

বইটি প্রকাশ করেছে পাণ্ডুলিপি প্রকাশনী। মূল্য ৩৫০ টাকা। অনলাইন বইয়ের দোকানে ও বইমেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে।