রোবট বানাতে চাইলে

কয়েক বছর ধরে রোবট ও রোবটিকস একটু নীরবেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাংলাদেশে। তার একটা বড় প্রমাণ হল আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে আমাদের নয়-দশ বছরের শিশুদের টানা চার বছর ধরে গোল্ড মেডেল পাওয়া। রোবটিকস শেখার মজাটা হল এখানে একইসঙ্গে একটা সমস্যা নিয়ে নানারকম ক্রিয়েটিভ উপায়ে সমাধান করা নিয়ে ভাবা যায় হাতেকলমে। শুধু যে শিশুরা রোবটিকসে মেতে উঠছে তেমন নয়, ছোট-বড় যে-কেউ এখন সানন্দে রোবটিকস নিয়ে কাজ করছে। আর আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে আমাদের শিশুদের প্রস্তুত করার জন্য যারা নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের সমন্বয়ক মিশাল ইসলাম। কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছেন। একসময় তিনি উপলব্ধি করেন রোবটিকসে এগিয়ে যাবার জন্য প্রয়োজন বিস্তারিত হাতেকলমে দিকনির্দেশনা সম্বলিত রোবটিকসের বাংলা রিসোর্স দরকার। এজন্যই তিনি দুই বছর ধরে ‘সৃষ্টির উল্লাসে রোবটিকস’ সিরিজ লিখছেন।

গতবছর যখন সৃষ্টির উল্লাসে রোবটিকস-এর প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ পায়, ওখানে একদম বেসিক ইলেকট্রনিকস, প্রোগ্রামিং ও আরডুইনো নিয়ে ৩৬টা হাতেকলমে প্রোজেক্ট ছিল। বইগুলো এমনভাবে লেখা যেন সববয়স পাঠক পড়ে বুঝতে পারে। প্রথম দুইটা খণ্ড থেকে ভোল্টেজ, রোধের কনসেপ্ট থেকে শুরু করে হাতেকলমে নানারকম সকার বট, রিমোট কন্ট্রোল বট, লাইন ফলোয়ার রোবট, গাছে পানি দেয়ার রোবট ইত্যাদি বানানো শিখিয়েছিলেন মিশাল। পাশাপাশি ছিল আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের নানা ক্যাটাগরির প্রস্তুত হওয়ার জন্য বিস্তারিত দিকনির্দেশনা। যেন আমাদের শিক্ষার্থীরা দলে দলে প্রস্তুত হতে পারে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্য।

সৃষ্টির উল্লাসে রোবটিকস ।। মিশাল ইসলাম ।। প্রকাশক: আদর্শ ।। প্রচ্ছদ: সব্যসাচী মিস্ত্রী ।। মূল্য: ৩য় খন্ড ৪৪০ টাকা ও চতুর্থ খন্ড ৪৮০ টাকা

প্রথম দুই খণ্ড পাঠকের কাছে ভালো সাড়া পাবার পর, এবারে মিশাল লিখেছেন ইন্টারনেট অব থিংস নিয়ে। রোবটের সঙ্গে রোবটের বা অন্য যন্ত্রের যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি একটা জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে যাচ্ছে এখন। ইন্টারনেট অব থিংসের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসেই যেকোনো স্থানে থাকা একটা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নিজের ইচ্ছামত। এই বিষয়েই এবার প্রকাশিত হয়েছে সৃষ্টির উল্লাসে রোবটিকসের ৩য় ও ৪র্থ খণ্ড।

কী আছে এই বই দুইটাতে? ইন্টারনেট অব থিংসের জগতে ইএসপি৩২ বোরড দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। একটা হাতের তালুর সাইজের বোর্ড দিয়েই সাড়া বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে ফেলা যাচ্ছে! এই ইএসপি৩২ বোর্ড দিয়ে রোবটকে নানারকম কমিউনিকেশন প্রটোকল শেখানো, সেটা দিয়ে বাড়ি, রাস্তা, অফিস, স্কুল সব জায়গায় এক মুহূর্তে কোন রোবট বা ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণ করা শেখা যাবে বই দুইটি পড়ে।

এই বইগুলো থেকে রোবটিকস আর ইন্টারনেট অব থিংস নিয়ে শিখতে পারবেন সহজেই। ধরুন আপনার বাসায় আগুন লেগে গেছে, কিন্তু আপনি অফিসে। সঙ্গে সঙ্গে আপনার মোবাইলে একটা এসএমএস চলে যাবে, পাশাপাশি নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিসেও যোগাযোগ করবে রোবট। আবার অফিসে ভুলে ফ্যান চালু রেখে বের হয়ে গেছেন, রাস্তায় মনে পড়ল। নিজের মোবাইল থেকেই কীভাবে সেই ফ্যান বন্ধ করতে পারবেন সেটাও শিখতে পারবেন। Whatsapp-এর মত চ্যাট সার্ভিস থেকে কমান্ড দিয়ে বাসার দরজা খোলার মতো প্রোজেক্টও এখানে পাবেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা হল আপনি এতদিন নানারকম যে সমস্যা নিয়ে ভাবতেন সেগুলোকে সমাধান করার অনেকগুলো টেকনিক এরপর থেকে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।

আপনি হয়ত চান বাসায় কেউ ঢোকার আগে দরজার সামনে রাখা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে অটোমেটিক হাত ধুয়ে, নিজের শরীরের তাপমাত্রা দরজার সামনে মেপে তারপর বাসায় ঢুকতে পারবে। এরকম নানা হাতেকলমে রোবটিকস ও আইওটি প্রকল্প শেখা যাবে সৃষ্টির উল্লাসে রোবটিকসের ৩য় ও ৪র্থ খণ্ড পড়ে।

রোবট নিয়ে যদি একটু শেখার আগ্রহ থাকে তাহলে তার জন্য একটি ভালো রিসোর্স হতে পারে সৃষ্টির উল্লাসে রোবটিকস এর সিরিজটি।

বইটি অমর একুশে বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে আদর্শের স্টলে। দেশের সব অনলাইন বুকশপ থেকে কেনা যাবে ঘরে বসেই।

লেখক: একাডেমিক কাউন্সিলর, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি