সাগরতলে রহস্যের খোঁজে

জানুয়ারির হিম হিম সকালে প্রথম বই হাতে আসার সে কী আনন্দ! সকালের সোনারোদে বসে মগভর্তি ঠান্ডা খেজুর রস পান করতে করতে ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বইটা নেড়েচেড়ে দেখা। হঠাৎ একটা পাতায় চোখ আটকে যায়। নিছক একটা প্রবন্ধ। ছেলেবেলায় এসব লেখা আকর্ষণ করার নয়। কিন্তু ইন্টারনেটবিহীন সেই নব্বই দশকে নিভৃত গ্রামবাংলার ছেলেমেয়েদের কাছেই এগুলোই অমূল্য রতন। আর লেখার শিরোনাম যদি হয় ‘সাগরজলের নানা প্রাণী’, সঙ্গে যদি থাকে মনকাড়া অলংকরণ, বালক-বালিকারা যে তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে, তাতে আর আশ্চর্য কী! তারপর যখন ওরা সেই লেখার গভীরে ঢুকে যায়, একঝটকায় সাগরতলের আশ্চর্য জগৎ উঠে আসে হাতের মুঠোয়।

আবদুল্লাহ আল-মুতীর পক্ষেই সম্ভব বিজ্ঞানের আশ্চর্য জগৎকে ছবির মতো সুন্দর করে ছেলেমেয়েদের মনে আগ্রহ তৈরি করা। এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে, তারার দেশের হাতছানি, মহাকাশে কী ঘটছে—আবদুল্লাহ আল-মুতীর এত এত বিখ্যাত বইয়ের ভিড়ে সবচেয়ে কম উচ্চারিত বই বোধ হয় সাগরের রহস্যপুরী। অথচ আক্ষরিক অর্থেই লেখক সিন্ধু সেচে মুক্তো এনে জড়ো করেছেন এই বইয়ের পাতায় পাতায়।

একটা নীল তিমির ছানা প্রতিদিন কত লিটার দুধ পান করে জানেন? মাত্র এক টন! এত বিশাল যে প্রাণী, সে কিনা খায় একেবারে ছোট ছোট মাছ! সমুদ্রে এমন কিছু প্রাণী আছে, যারা নিজের চেয়ে বেশি বড় প্রাণীকে গিলে ফেলতে পারে! এসব খবর জানতে হলে পড়তে হবে সাগরের রহস্যপুরী। সাগরের কিছু মাছ কেন আলো জ্বালে, কিছু মাছ কেন অন্ধ হয়? সাগরতলে কেন অত বড় বড় পাহাড়? কী কাজ সেগুলোর? এসব বিস্ময়কর তথ্য এই ইন্টারনেটের যুগেও অনেকে জানে না।

সাগরের রহস্যপুরী, আবদুল্লাহ আল-মুতী, প্রকাশক: অনুপম প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ: ১৯৯২ পৃষ্ঠা: ৮০ দাম: ২০০ টাকা

সাগরের রহস্যপুরী বইটি শুধু সাগরের আজব প্রাণীদের নিয়েই লেখা নয়, এতে উঠেছে সাগরের সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। সাগরের পানি লোনা কেন, কেন এর রং নীল, তার ব্যাখ্যা পাবেন এ বইয়ে। কীভাবে মানুষ সাগর জয় করল, সাগরের ভূপ্রকৃতি ও জীবজন্তু সম্পর্কে জানা গেল, এসব কৌতূহলী প্রশ্নের সহজ-সুন্দর জবাব পাবেন সাগরের রহস্যপুরীতে।

১৩টি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে ৮০ পৃষ্ঠার ছোট্ট এই বই। শুরু হয়েছে অথই পাথার ও আদিম সমুদ্রের সন্ধান দিয়ে। ঢেউয়ের খবর, ঝড়ের বিজ্ঞান, গভীর সমুদ্রের ডাক ইত্যাদি নিয়েও রয়েছে দারুণ সব ব্যাখ্যা। বইটা শেষ হয়েছে এ যুগে সাগর গবেষণার সাত-সতেরো দিয়ে।

বইটি ১৯৯২ সালে প্রথম প্রকাশ করে অনুপম প্রকাশনী। আজও সমান জনপ্রিয় এই বই পাওয়া যাচ্ছে দেশের সব অভিজাত বইয়ের দোকানে। এমনকি ঘরে বসে কিনতে পারবেন অনলাইন বুকশপগুলো থেকেও।