চাকা পাংচার হওয়ার পরও কিছু গাড়ি কীভাবে চলে
গাড়ি বা সাইকেল নিয়ে রাস্তায় বেরোলে অনেকের মনেই একটা ভয় কাজ করে—যদি চাকা পাংচার হয়ে যায়! কিন্তু আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন, মাঝেমধ্যে চাকা পাংচার হলেও দিব্যি চালানো যায়। আবার কিছু গাড়ি আছে, যেগুলো পাংচার নিয়েও অনেক দূর চলতে পারে। এটা কীভাবে সম্ভব?
এর উত্তর নির্ভর করে, পাংচারটা কতটা হয়েছে? মানে পাংচার হওয়ার ছিদ্র কত বড়। পাংচার অল্প হলে বাতাস ধীরে বের হয়। তবে আরও কিছু ব্যাপার আছে। ধরুন, আপনার সাইকেলে একটা ‘স্লো লিক’বা অল্প ছিদ্র হলো। হয়তো আলপিন বা খুব সরু কোনো কাঁটা ফুটে সাইকেলের চাকা পাংচার হয়েছে। এই ছিদ্র এতই ছোট যে, বাতাস বের হতে অনেক সময় লাগে। আপনি সকালে হাওয়া দিলে, হয়তো সারা দিন দিব্যি চালাতে পারবেন। পরদিন দেখবেন, হাওয়া আবার কমে গেছে।
এ ধরনের ছিদ্র খুঁজে বের করা খুব ঝামেলার। কারণ ওই ছোট ছিদ্র থাকে প্রায় অদৃশ্য। এগুলো খুঁজে বের করার সবচেয়ে পুরোনো উপায় হলো, টিউবটা খুলে এক গামলা পানির মধ্যে চুবিয়ে ধরা। যেখান থেকে বুদবুদ বের হবে, বুঝবেন ছিদ্রটা ঠিক সেখানেই! তবে এই ঝামেলায় না যেতে চাইলে সোজা একটা নতুন টিউব লাগিয়ে নিতে পারেন।
কিন্তু গাড়ির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এখন অনেক আধুনিক। বর্তমানে অনেক গাড়িতেই ‘রান-ফ্ল্যাট টায়ার’ লাগানো থাকে। এই টায়ারগুলো সাধারণ টায়ারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। সাধারণ টায়ার একটা বেলুনের মতো। ভেতরে বাতাস আছে, তাই এটা শক্ত। যেই বাতাস বেরিয়ে যায়, ওমনি এটা চুপসে যায় এবং গাড়িটা চাকার ধাতব অংশের ওপর বসে পড়ে। কিন্তু রান-ফ্ল্যাট টায়ারের আসল জাদু হলো এর সাইডওয়াল বা পাশের দেয়ালে। এই দেয়ালগুলো রাবার দিয়ে শক্ত ও পুরু করে বানানো হয়।
এগুলো খুঁজে বের করার সবচেয়ে পুরোনো উপায় হলো, টিউবটা খুলে এক গামলা পানির মধ্যে চুবিয়ে ধরা। যেখান থেকে বুদবুদ বের হবে, বুঝবেন ছিদ্রটা ঠিক সেখানেই!
যখন এই টায়ার পাংচার হয় এবং সব বাতাস বেরিয়ে যায়, তখন সাধারণ টায়ারের মতো এটা চুপসে যায় না। এর ভেতরের শক্ত দেয়ালটাই একটা কঙ্কালের মতো গাড়ির পুরো ওজনটা বহন করে!
তবে এর মানে এই নয় যে, আপনি পাংচার নিয়ে সারাদিন ঘুরতে পারবেন। এই টায়ারগুলোর একটা নির্দিষ্ট সীমা আছে। সাধারণত, পাংচার হওয়ার পর আপনি কম গতিতে চালালে মানে ঘণ্টায় ৮০ কিলমিটার গতিতে চললে প্রায় ৮০-১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চালাতে পারবেন। এর উদ্দেশ্য হলো, আপনাকে নিরাপদে কাছের গ্যারেজে বা বাড়ি পৌঁছে দেওয়া।
এ ছাড়াও ‘টায়ার সিল্যান্ট’ নামে আরেক ধরনের প্রযুক্তি আছে। কিছু টায়ারের ভেতরে আগে থেকেই এক ধরনের আঠালো, ঘন তরল বা ম্যাজিক গ্লু ভরা থাকে। যখনই টায়ারে কোনো ছিদ্র হয়, ভেতরের বাতাস সেই ছিদ্র দিয়ে বেরোনোর সময় ওই আঠালো তরলকেও টেনে নিয়ে আসে। এই তরল ছিদ্রের মুখে এসে বাতাসের সংস্পর্শে শুকিয়ে গিয়ে ছিদ্রটা নিজে থেকেই বন্ধ করে দেয়!