পৃথিবীর বাতাস কি কখনো অক্সিজেনশূন্য হতে পারে?

মানুষ সব সময় বাতাস থেকে অক্সিজেন নিচ্ছে, কার্বন ডাই–অক্সাইড বাতাসে ছাড়ছে। তাহলে এমন সময় কি আসতে পারে, যখন বাতাসে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকবে না, আমাদের বেঁচে থাকাই কঠিন হবে? না, আপাতত এ রকম কোনো আশঙ্কা নেই। কেন? কারণ, একদিকে আমরা যেমন অক্সিজেন ব্যবহার করছি, অন্যদিকে গাছপালা বাতাসের কার্বন ডাই–অক্সাইড ও পানি ব্যবহার করে কার্বোহাইড্রেট তৈরি করছে। অবশ্য সবুজ বন কমে যাচ্ছে, তাই হয়তো একদিন অক্সিজেনে টান পড়বে? সেটা ভিন্ন সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বের সব দেশই সম্মিলিত উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু এমন কি হতে পারে না যে বাতাসের অক্সিজেন গ্যাস ধীরে ধীরে পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশে বিলীন হয়ে গেল? না, সে সম্ভাবনাও খুব কম। কারণ, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল অক্সিজেনকে দৃঢ়ভাবে টেনে রাখছে। সহজে যেতে পারবে না। তারপরও বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে গবেষণা করছেন।

নেচার জিও সায়েন্স সাময়িকীতে ২ এপ্রিল ২০২১ প্রকাশিত নিবন্ধে বায়োকেমিক্যাল অ্যান্ড ক্লাইমেটের গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাঁদের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীর অক্সিজেনসমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল আগামী অন্তত ১০০ কোটি বছর টিকে থাকবে। তারপরও আসুন আমরা হিসাব করে দেখি, বাতাসে অক্সিজেন না থাকলে অবস্থাটা কী দাঁড়াতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই সূর্যের তীব্র রশ্মিতে গায়ে ফোসকা পড়বে। বায়ুচাপ প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ কমে যাবে, আমাদের কানের পর্দা ফেটে যাবে। ওজোন স্তরে রয়েছে অক্সিজেন, তাই ওজোন স্তর নষ্ট হবে, পৃথিবীতে অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি চলে আসবে। পানির এক–তৃতীয়াংশ অক্সিজেন। সেটা চলে গেলে থাকবে হাইড্রোজেন। মুক্ত হাইড্রোজেন সম্প্রসারিত হবে। সব সাগর শুকিয়ে যাবে। আসলে আমাদের পায়ের নিচে পৃথিবীটাই থাকবে না, আমরা পড়ন্ত বস্তুর মতো অবস্থায় থাকব। নিষ্প্রাণ। কারণ, অক্সিজেন ছাড়া কোনো প্রাণীই বাঁচবে না। এমন অবস্থা আসতে এখনো অনেক সময় বাকি।