সূর্যের ভর অর্ধেক হলে কি হত?

সূর্যের ভরের উপর নির্ভর করে এর তাপমাত্রা, রং এবং ব্যাসার্ধ। বড় নক্ষত্রগুলো সূর্যের তুলনায় বেশি উত্তপ্ত এবং রং নীলাভ হয়। আর ছোটগুলো হয় কিছুটা কম উতপ্ত আর লালচে রঙের। সূর্যের অবস্থান মাঝামাঝি। এ কারণে এর প্রকৃত রং সাদাটে হলুদ।

লাল বামন নক্ষত্রের চারপাশে খুব সামান্য এলাকাজুড়ে থাকে হ্যবিটেবল জোন বা বাসযোগ্য স্থান। যেখানে গ্রহের পৃষ্ঠে পানি তরল অবস্থায় থাকতে পারে। পৃথিবীর সূর্যের বাসযোগ্য অঞ্চলের মধ্য অবস্থিত। শুক্রগ্রহ একটু বেশি কাছে। অন্যদিকে মঙ্গলগ্রহ এই বাসযোগ্য স্থানের শেষ প্রান্তে অবস্থিত।

সূর্যের ভর এর অর্ধেক হলে, বাসযোগ্য অঞ্চল হতো সূর্যের আরও কাছে। সেক্ষেত্রে পৃথিবী যদি বর্তমান কক্ষপথেই থাকতো, তাহলে তাপের অভাবে পৃথিবী পরিণত হতো, শীতল বরফ আচ্ছাদিত গ্রহে।

ধরা যাক, সূর্যের ভর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর কক্ষপথও পরিবর্তন হলো। বর্তমানে বুধের কক্ষপথে যদি পৃথিবীকে বসানো যায়, তাহলে পৃথিবী এখনকার অবস্থাতে থাকার মতো প্রয়োজনীয় তাপ পাবে। তবে সেক্ষেত্রেও ঝামেলা আছে।

লোহিত বামন নক্ষত্র হিসেবে সূর্যের ভর পরিবর্তন হলে এর বাসযোগ্য অঞ্চল কেমন বা কতোখানি এলাকাজুড়ে হবে, তা তর্কসাপেক্ষ। ছোট নক্ষত্রগুলোর পৃষ্ঠে ঘন ঘন বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণের মারাত্মক প্রভাব পড়বে বুধের মতো কাছে থাকা গ্রহ, অর্থাৎ পৃথিবীতে। তাই পর্যাপ্ত তাপ পেলেও সৌর ঝড়ের কবলে প্রাণের টিকে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

আরও একটা সমস্যা আছে। ভরের তুলনায় দূরত্ব কম হলে, নিজ অক্ষে গ্রহের ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চাঁদের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছে। নিজ অক্ষে ঘূর্ণন না থাকার কারণে আমরা চাঁদের কেবলমাত্র একটি পৃষ্ঠের দেখা পাই পৃথিবীতে। সূর্যের আলোতে চাঁদের একটা অংশ শুধু আলোকিত হয়। পৃথিবী অর্ধেক ভরের সূর্যের বাসযোগ্য অঞ্চলে থাকলে এর পাশ চিরকাল আলোকিত এবং অন্যপাশ চিরকাল অন্ধকার থাকতে পারে।

কোনভাবে যদি জীবন ধারণের উপায় বের হতো, বা গাছেরা অভিযোজন করে নিত, তাহলে গাছের পাতার রঙ দেখাতো কালো। কারণ সালোকসংশ্লেষণের জন্য পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যেত না মিটমিটে নক্ষত্র থেকে। বর্তমানে সূর্যের আলোর প্রায় সবটুকুই শোষণ করে সবুজ আলো প্রতিফলিত করে গাছের পাতা। এ কারণে সবুজ দেখায়। মিটমিটে আলোর পুরোটুকু শোষণ করার ফলে গাছপালার রঙ হয়ে যাবে কালো। এমনটাই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের মেইনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিল কমিনস।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: লাইভ সায়েন্স