পেট্রোলিয়াম জেলি কি ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে

শীতকালে ঠোঁট ফেটে যাওয়া, খসখসে ত্বক বা কনুইয়ে শুকনো ভাব—এসব খুব সাধারণ বিষয়। শীতের সময় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায়। সে জন্যই ত্বক এরকম শুকিয়ে যায়, ফেটে যায়। এ বিপদের ওষুধও আমাদের সবার জানা। পেট্রোলিয়াম জেলি। শীতের মৌসুমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পেট্রোলিয়াম জেলির বিজ্ঞাপন নিয়ে হাজির হয়। এসব বিজ্ঞাপন দেখে পেট্রোলিয়াম জেলিকে কেউ যদি রাতারাতি জাদুমন্ত্র বলে ভেবে বসেন, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই! কিন্তু পেট্রোলিয়াম জেলি আসলেই কি ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে? নাকি এটা শুধুই মার্কেটিং স্ট্যান্ট?

পেট্রোলিয়াম জেলি মূলত একধরনের হাইড্রোকার্বন যৌগ। আরেকটু সঠিকভাবে বললে, উদ্বায়ী হাইড্রোকার্বন যৌগ। অপরিশোধিত তেল থেকে এই হাইড্রোকার্বন তৈরি করা হয়। ১৮৫৯ সালে রবার্ট চেসব্রো নামে এক মার্কিন বিজ্ঞানী এটি আবিষ্কার করেন।

আমরা যখন ত্বকে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করি, তখন এটি ত্বকের ওপর একটি পাতলা স্তর তৈরি করে। ফলে ত্বকের আর্দ্রতা বাইরের পরিবেশে মিলিয়ে যেতে পারে না। অর্থাৎ এটি ত্বকের নিচে থাকা প্রাকৃতিক আর্দ্রতা আটকে রাখে। কীভাবে?

আমাদের দেহকোষে থাকা পানির কারণে ত্বকে প্রাকৃতিকভাবেই আর্দ্রতা তৈরি হয়। গরমের সময় বাতাসের জলীয় বাষ্প অর্থাৎ, আর্দ্রতা বেশি থাকে। ফলে গরমে ত্বকের আর্দ্রতা শুকায় না। কিন্তু শীতের দিনে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায়। কারণটা বোঝা খুব সহজ। বাতাসে পানি বা আর্দ্রতার পরিমাণ ত্বক থেকে কম, তাই পানি বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। সে জন্যই শুষ্ক বাতাসে ত্বক দ্রুত আর্দ্রতা হারায়। ফলে শুকনো পাতার মতো ত্বকের বাইরের কোষ ঝরে পড়তে শুরু করে। ঠোঁটের মতো স্পর্শকাতর ত্বকের যে সব অংশে পেশির চাপ বেশি থাকে, সেখানে ফেটে যায়। কিন্তু পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে এটি ত্বকের ওপরে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে। এই স্তর ত্বকের পানি বাষ্প হয়ে বাইরে চলে যাওয়া ঠেকায়। ফলে ত্বক বেশি সময় ধরে নরম ও মসৃণ থাকে।

পেট্রোলিয়াম জেলি শুধু আর্দ্রতা রক্ষা করে না, এটি ত্বকের সুরক্ষায়ও কাজ করে। ঠান্ডা বা গরম আবহাওয়ায় ত্বক রুক্ষ হয়ে পড়লে এটি আরামদায়ক প্রলেপ হিসেবে কাজ করে।

অনেকে মনে করেন, পেট্রোলিয়াম জেলি ত্বকে আর্দ্রতা যোগায়। ধারণাটা ভুল। পেট্রোলিয়াম জেলি ময়েশ্চারাইজার বা আর্দ্রকারক প্রসাধনী নয়। অর্থাৎ সরাসরি ত্বকে আর্দ্রতা যোগায় না। বরং ত্বকের নিজস্ব আর্দ্রতা ধরে রাখে। এর মানে হলো, ত্বক যদি আগে থেকেই শুষ্ক হয়ে থাকে, তাহলে পেট্রোলিয়াম জেলি খুব একটা কাজ করে না। সে ক্ষেত্রে ত্বককে আর্দ্র কীভাবে করা যায়, তা জানতে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া যেতে পারে।

পেট্রোলিয়াম জেলি শুধু আর্দ্রতা রক্ষা করে না, এটি ত্বকের সুরক্ষায়ও কাজ করে। ঠান্ডা বা গরম আবহাওয়ায় ত্বক রুক্ষ হয়ে পড়লে এটি আরামদায়ক প্রলেপ হিসেবে কাজ করে। এমনকি ছোটখাটো কাটা-ছেঁড়া বা পোড়া জায়গায়ও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ক্ষতের ওপর নতুন কোনো ধুলোবালি পড়ে না। তবে মনে রাখা জরুরি, ক্ষতস্থানে এটি ব্যবহার করার আগে জায়গাটি অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। না হলে ধুলোময়লা বা জীবাণু আটকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বলা বাহুল্য, এটি এন্টিসেপটিকের বিকল্প নয়। বরং হাতের কাছে এন্টিসেপটিক না থাকলে প্রাথমিকভাবে ছোটখাটো কাটায় যেন ধুলোবালি না পড়ে, সে জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

পেট্রোলিয়াম জেলি একটি তৈলাক্ত রাসায়নিক। অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ত্বকে ভারী, চটচটে অনুভূতি হতে পারে। ব্রণপ্রবণ ত্বকে এটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এটি ত্বকের ছোট ছোট ছিদ্র বন্ধ করে ব্রণ বাড়িয়ে দিতে পারে, এমনটাই মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

সূত্র:  ওয়েবমেড, মেডিকেল নিউজ টুডে, উকিপিডিয়া