লোহায় মরিচা পড়ে কেন

মরিচা পড়ে উঠে গেছে গাড়ির রং

লোহার সঙ্গে মানুষের পরিচয় প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। তবে লোহার ব্যবহার শুরু হয়েছিল আরও পরে। সেই কালটি মানব ইতিহাসে পরিচিত লৌহযুগ নামে।

লোহার সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকে এর বিশেষ একটা ধর্মও মানুষ জানে। সেটা হলো, লোহায় মরিচা পড়ে। দেখতে লোহার ওপর একটা ভঙ্গুর আবরণের মতো সেটা। এর কারণে ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যায় লোহা বা লোহার তৈরি জিনিসপত্র। অথচ সোনা, রূপা, প্লাটিনামের মতো অন্যান্য ধাতুতে এভাবে মরিচা পড়ে না। তাই এদের বলা হয় ননফেরাস মেটাল। অন্যদিকে লোহাজাতীয় পদার্থকে বলে ফেরাস মেটাল (লোহার লাতিন নাম ফেরাম, সে থেকেই এ নাম)। গহনা তৈরিতে সোনার এত কদর এ জন্যই। অবশ্য আপনার সোনা-রূপা বা প্লাটিনামের গহনায় যদি মরিচা পড়ে, তাহলে এখনই স্যাকরার দোকানে দৌড়ে যাওয়া উচিত।

লোহাজাতীয় পদার্থকে বলে ফেরাস মেটাল (লোহার লাতিন নাম ফেরাম, সে থেকেই এ নাম)।

যাই হোক, লোহায় মরিচা কেন পড়ে, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল অনেক আগে থেকেই। তবে তার সঠিক কারণ জানা গেছে এই আধুনিক কালে এসে। এর পেছনে রয়েছে সরল এক রাসায়নিক কার্যকারণ। মরিচা আসলে একধরনের অক্সিডেশন বা জারণ বিক্রিয়া। সহজভাবে বললে, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো পরমাণু বা অণু যখন এক বা একাধিক ইলেকট্রন হারায়, তাকেই বলা হয় অক্সিডেশন বা জারণ বিক্রিয়া। লোহার ক্ষেত্রে এই জারণ ঘটে বাতাসে থাকা অক্সিজেন এবং লোহা বা ফেরাস মেটালের মধ্যে বিক্রিয়ায় কারণে।

মরিচা জমে গেলে লোহা ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং কমলা রঙের স্তুপ জমা হয়
সোনা বা রূপার মতো অন্য ধাতুতে মরিচা পড়ে না। তার পেছনেও রয়েছে রসায়নের কারিকুরি। এসব ধাতুতে লোহার মতো মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না।

লোহায় কিছু মুক্ত ইলেকট্রন থাকে। এই বিক্রিয়ায় বাতাসের অক্সিজেন পরমাণু লোহার ওই মুক্ত ইলেকট্রনের সঙ্গে মিলিত হয়। তাতে তৈরি হয় আয়রন অক্সাইড বা ফেরাস অক্সাইড নামের একটি যৌগ। দিনে দিনে লোহার ওপর এই যৌগটির একটা স্তর গঠিত হতে থাকে। ফলে দুর্বল হতে থাকে লোহার পরমাণুদের মধ্যে বন্ধন। পর্যাপ্ত ফেরাস অক্সাইড জমে গেলে লোহা ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং কমলা রঙের স্তুপ জমা হয়। আমাদের কাছে এটিই মরিচা নামে পরিচিত।

লোহার মতো তামাতেও একই ঘটনা ঘটে। এখানেও অক্সিডেশন বিক্রিয়ায় তামার মুক্ত ইলেকট্রনের সঙ্গে অক্সিজেন যুক্ত হয়। তৈরি হয় কিউপ্রাস অক্সাইড। তাতে তামা সবুজ রং ধারণ করে।

কিন্তু সোনা বা রূপার মতো অন্য ধাতুতে মরিচা পড়ে না। তার পেছনেও রয়েছে রসায়নের কারিকুরি। এসব ধাতুতে লোহার মতো মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না। কাজেই বাতাসের অক্সিজেন এসব ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। তাই এরা টিকে থাকে দীর্ঘদিন।

আরও পড়ুন