মানুষ পানিতে ডুবে যায় কেন

প্রশ্ন: মানুষের ঘনত্ব পানি থেকে কম হলে মানুষ পানিতে ডুবে যায় কেন?

উত্তর: মানুষ পানিতে নামলে সঙ্গে সঙ্গে ডুবে যায় না। প্রায় ক্ষেত্রে তিন রকমের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। প্রথমে কিছুক্ষণ ভেসে থাকে। এরপর ক্লান্ত হয়ে পড়লে হয়তো ডুবে যেতে পারে। পানির নিচে বেশিক্ষণ থাকলে হয়তো আবার পানির ওপর ভেসে ওঠে। এই তিন ধরনের ঘটনা একটি অপরটির বিপরীত। ঘটনাগুলোর কারণ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। প্রথমত, ভেসে থাকে কারণ, মানুষের দেহের সার্বিক ঘনত্ব পানির চেয়ে কম, এটা সবাই জানি। সাধারণভাবে দেখলে মনে হয়, মানুষের দেহ বেশ ভারী। ডুবে যাওয়ারই কথা। কিন্তু দেহের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে কিছু ফাঁকা অংশ থাকে। সেই অংশগুলো সাধারণত বাতাস বা গ্যাসজাতীয় পদার্থে পূর্ণ থাকে। যেমন ফুসফুসের ভেতরে থাকে মূলত বাতাস। ফলে সাধারণ আয়তনের অনুপাতে দেহের ভর বা ওজন এবং সেই সঙ্গে সার্বিক ঘনত্ব কিছুটা কম থাকে। এ জন্য মানুষের দেহ দেখলে বেশ ভারী মনে হলেও প্রথমে পানিতে ভেসে থাকে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সাঁতার না জানলে বা অন্যান্য কারণে কিছুক্ষণের মধ্যেই অনেকে হাবুডুবু খেয়ে অতিরিক্ত পানি খেতে থাকে। তখন দেহের ভর বেড়ে যায় এবং এ কারণে পানিতে ডুবে যায়। এরপর পানির নিচে অনেকক্ষণ ডুবে থাকলে আবার ভেসে উঠতে পারে। কারণ, অতিরিক্ত পানি খাওয়ার পর সেই পানির ব্যাকটেরিয়া পেট ও বুকের ফাঁকা অংশে বিভিন্ন বিক্রিয়ার মাধ্যমে মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাস তৈরি করে। এই গ্যাসগুলো বেশ হালকা বলে দেহের সার্বিক ঘনত্ব তখন কমে যায় এবং দেহ আবার পানির ওপর ভেসে ওঠে। তাই সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, পানিতে পড়লে সাঁতার না জানা মানুষ কিছুক্ষণ ভেসে থাকে, তারপর ডুবে যেতে পারে। কিন্তু অনেকক্ষণ পানিতে ডুবে থাকলে আবার হয়তো ভেসে ওঠে। অবশ্য তখন সেই মানুষ হয়তো প্রায় অজ্ঞান বা নিষ্প্রাণ।

*লেখাটি ২০২৪ সালে বিজ্ঞানচিন্তার জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত