বাঁ পাশ ফিরে ঘুমাব না ডান পাশ?

এর কোনো সর্বজনীন উত্তর নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী কোনটা ভালো, তা পাল্টে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা যখন ঘুমায় তখন তারা গড়ে ২৫% সময় বাঁ কাত, ২৫% সময় ডান কাত, ২৫% উপুড় এবং ২৫% সময় চিত হতে ঘুমায়। অর্থাৎ সব অবস্থানে সমান সময় ব্যয় করে। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনো এক পাশ ফিরে শোয়ার সময়কাল বেড়ে ৫৫% বা তারও বেশি হতে পারে। অর্থাৎ চিত বা উপুড় হয়ে শোয়ার প্রবণতা বয়স বাড়লে স্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এর কারণ কী, তা জানা যায়নি।

আমরা সাধারণত ঘুমের মধ্যে এপাশ–ওপাশ করি। কোন পাশ ফিরে ঘুমানো ভালো, সেটা চিন্তা করি না। তবে পারতপক্ষে উপুড় হয়ে না শোয়াই ভালো, কেননা এতে পাকস্থলীতে চাপ পড়ে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে উপুড় হয়ে শুয়ে পেট বা তলপেটের নিচে একটা নিচু বালিশ দিয়ে রাখলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়তে সুবিধা হয়। এই পদ্ধতির নাম ‘প্রোনিং’। অনেক সময় প্রোনিং করলে কোভিড-১৯ রোগীর বাড়তি অক্সিজেন লাগে না এবং দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমে যায়। অবশ্য অক্সিজেন কার কতটা লাগবে, সে বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ সর্বাগ্রে নেওয়া উচিত।

যাদের পিঠে ব্যথা আছে, তাদের মধ্যে কারও কারও ক্ষেত্রে চিত হয়ে শোয়া আরামদায়ক, কেননা এতে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক আকৃতি বজায় রাখা সহজ হয়। কখনো কখনো হাঁটুর নিচে একটা বালিশ দিয়ে রাখলে সেই আকৃতি রক্ষা করা আরও সহজ হয়। অবশ্য ঘুমের মধ্যে এত কিছু মেনে চলা সব সময় সম্ভব হয় না। পিঠে ব্যথার জন্য চিকিৎসক অনেক সময় বিশেষ ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন এবং শোয়ার সময় বিশেষ নিয়ম মানতে বলেন। সেগুলো সমস্যা অনুযায়ী একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। পরিচিত কাউকে চিকিৎসক কী বললেন, তা অনুকরণ করবেন না, বরং আপনাকে চিকিৎসক কী বলেছেন, সেই পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে।

যাদের চোঁয়া ঢেঁকুর ও অ্যাসিডিটি থেকে বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা আছে (চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘জিইআরডি’) তাদের চিত হয়ে না শোয়াই ভালো। উপুড়ও নয়। পাশ ফিরে শোয়া এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো। বিশেষ করে বাঁ পাশে। কেন, তার কারণ এখনো পরিষ্কার নয়। সম্ভাব্য ব্যাখ্যাটি এ রকম: আমাদের পাকস্থলীর অবস্থান পেটের বাঁ পাশে। সাধারণত আমরা রাতে খাওয়ার পর ঘুমাই। হয়তো তখনো পাকস্থলীতে আমাদের খাওয়া ডাল–ভাত–মাছ–মাংস পরিপাক প্রক্রিয়া চলছে। এ অবস্থায় আমরা কোন পাশ ফিরে ঘুমাচ্ছি, সেটা প্রধান ব্যাপার হয়ে উঠতে পারে। খাবার পরিপাকের পর পাকস্থলী থেকে ক্ষুদ্রান্ত্র–বৃহদান্ত্র হয়ে চলে যায়। কিছু খাদ্যের পরিপাক প্রক্রিয়া হয়তো ঘুমের মধ্যেই আরও কিছু সময় ধরে চলে। এই সময়ই কোন পাশ ফিরে ঘুমাচ্ছি, সে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বাঁ পাশ ফিরে ঘুমালে পাকস্থলীর ভেতরের পাচক রসের কিছু তলানি নিচের দিকেই থেকে যায়। ফলে এর ঝাঁজ কিছুটা ওপরে উঠে খাদ্যনালির দিকে যাওয়ার সুযোগ কম। ডান দিক ফিরে ঘুমালে পাচক রসের ঝাঁজ পাকস্থলী ও খাদ্যনালিতে জ্বালা বা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।

গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও বাঁ পাশে কাত হয়ে শোয়া ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, এতে গর্ভস্থ ভ্রূণে রক্ত চলাচল বাড়ে। কারণ অজানা। হার্ট ফেইলিউরের রোগীদের কারও কারও ক্ষেত্রে ডান পাশে কাত হয়ে শোয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। কেননা এতে করে তাদের শ্বাসকষ্ট কম হয়। এখানেও কারণ জানা নেই।

যাঁদের নাক ডাকার প্রবণতা আছে, তাঁরা বাঁ বা ডান যেকোনো পাশ ফিরে শুতে পারেন। নাক ডাকা কমবে। তবে তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি নাক ডাকার সমস্যা অবহেলা করা যাবে না। কেননা, তার পেছনে স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো জটিল ও প্রাণঘাতী সমস্যা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।