সকালে কেন ঘুম ভাঙে?

সকালে ঘুম থেকে ওঠা এতই স্বাভাবিক ব্যাপার যে এটা নিয়ে সাধারণত প্রশ্ন দেখা দেয় না। আদিমকাল থেকেই মানুষ সূর্যাস্তের পর রাতে ঘুমিয়ে পড়ে আর ঘুম ভাঙে সকালে সূর্যোদয়ের পর। আদিম যুগে সন্ধ্যার পর অন্ধকার গুহায় ঘুমানো ছাড়া মানুষের আর কিছু করার ছিল না।

আবার সকালে ঘুম থেকে জেগে শিকারে না বেরোলে খাবার জুটবে না, তাই সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘুম থেকে উঠতে হতো। মনে হয়, এটা মানুষের অভ্যাস হয়ে গেছে। সেটা তো আছেই, কিন্তু আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য মস্তিষ্কের ওপর আলোর ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও মনে রাখতে হবে। ঘুম নিয়ন্ত্রণে মস্তিষ্কে কিছু রাসায়নিক প্রক্রিয়া প্রভাব ফেলে। কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পরীক্ষাগারে বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় বিষয়টি নতুনভাবে সামনে এসেছে। সে বিষয়ে ওয়েনডি চেনের একটি গবেষণা নিবন্ধ নিউরন–এ ছাপা হয়েছে।

তিনি মস্তিষ্কের প্রক২ প্রোটিন (Prok2 protein) নিয়ে করা তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছেন। প্রক২ প্রোটিন যে ঘুম নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে, তা আগেই জানা ছিল। কিন্তু বিস্তারিত কিছু পরিষ্কার ছিল না। সম্প্রতি বিজ্ঞানী চেন জেব্রাফিশে এই প্রোটিন অতিমাত্রায় অথবা প্রোটিনের জিনকে রূপান্তর ঘটিয়ে জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োগ করে দেখেছেন ঘুম–জাগরণের অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়। হয়তো বেশি ঘুম হয় বা ঘুমের আবর্তন ধারা পরিবর্তিত হয়। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই তা আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আগের ঘুম–জাগরণ আবর্তন ধারার প্রভাব তেমন থাকে না।

এই পরীক্ষা দিয়ে বোঝা গেল যে ঘুম–জাগরণ আবর্তন বিশেষভাবে প্রভাবিত হয় আলো দিয়ে। রাতে আলো নিভিয়ে দিলে ভালো ঘুম হয়। সকালে সূর্যালোক ছড়িয়ে পড়লে ঘুম ভাঙে। সে জন্যই রাতে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেলে চোখজুড়ে ঘুম আসে। সকালে সূর্যোদয়ের পর আমরা জেগে উঠি। যদি বেশি ঘুমাতে চাই, তাহলে দরজা–জানালা বন্ধ করে ঘর অন্ধকার করে রাখতে হয়।