কুকুর কেন জিহ্বা বের করে রাখে?

রাস্তাঘাটে অনেক সময় দেখা যায়, কুকুর জিহ্বা বের করে আছে। প্রায় ঝুলে পড়া জিহ্বা দেখিয়ে সে যেন দিব্যি হেঁটে যায় কিংবা বসে থাকে। কিন্তু কুকুর কেন জিহ্বা বের করে রাখে?

এটা আসলে কুকুরের ঘামের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রাণিজগতে মানুষ, বানর এবং আরও কিছু প্রাণী ঘামে। কিন্তু দুই ধরনের প্রাণীর কোনো ঘাম হয় না। যেসব প্রাণীর চামড়া পুরু লোমে ঢাকা থাকে, তাদের ঘাম হয় না। যেমন কুকুর ও ভালুক। এ ছাড়া যেসব প্রাণীর ত্বকে ঘামগ্রন্থি নেই, তাদের স্বাভাবিকভাবে ঘাম হয় না। যেমন সাপ ও সরীসৃপ।

প্রশ্ন জাগতে পারে, কুকুর বা ভালুকের মতো রোমশ প্রাণীদের তাহলে ঘাম ঝরে কীভাবে? এ প্রক্রিয়াকে বলে প্যান্টিং প্রসেস। প্যান্টিং মানে উর্ধ্বশ্বাস। এ প্রক্রিয়ায় প্রাণীরা জিহ্বা বের করে ঝুলিয়ে রাখে। যাতে বাইরের পরিবেশের অপেক্ষাকৃত শীতল বাতাসের সঙ্গে তার শরীরের অভ্যন্তরীণ তুলনামূলক উচ্চতাপকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বদলে নিতে পারে। অর্থাৎ, জিহ্বা এখানে কাজ করে বাইরের ও ভেতরের তাপীয় ভারসাম্য রক্ষাকারী মাধ্যম হিসেবে।

আরেকটু খোলাসা করি। দেহের অভ্যন্তরীণ তাপ তথা প্রাণীদেহে রক্তের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস স্নায়বিক সংকেত পাঠানো শুরু করে। প্রাণিদেহে তাপীয় ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রাখে হাইপোথ্যালামাস। সিগন্যাল পেয়ে মস্তিষ্কের থার্মোরেগুলেটর সেন্টার উর্ধ্বশ্বাস প্রক্রিয়া চালু করে। ফলে জিহ্বা পরিবেশের সংস্পর্শে আসে। তখন বাইরের পরিবেশের পরিস্কার এবং অপেক্ষাকৃত শীতল বাতাস জায়গা দখল করে নেয়। সেই সঙ্গে তুলনামূলক ভেতরের গরম বায়ু বের করে দেয় বাইরে। এ পরিবর্তনের বিষয়টা  ঘটে শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগে।

মোট কথা, প্রাণীদের ঘাম বের না হয়ে মূলত তাপ বাষ্প হয়ে বেরিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে লোম বা ঘামগ্রন্থির দায়িত্বটুকু পালন করে জিহ্বা। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কুকুর কেন জিহ্বা বের করে হাঁটে। এটা প্রভুভক্তির জন্য নয়। আবার র‍্যাবিস আক্রান্ত পাগলা কুকুর বলেও নয়। আসলে জিহ্বা বের করে রাখার মূল ভূমিকা রাখে এই প্যান্টিং।

আরেকটি তথ্য জানিয়ে রাখি। কুকুরের ঘামগ্রন্থি থাকে তাদের পায়ের নিচের প্যাড এবং কানের দিকে। তবে তা তাপীয় ভারসাম্য রক্ষায় খুব সামান্যই ভূমিকা রাখে। তাপনিয়ন্ত্রণের প্রধান তথা মূল প্রক্রিয়াটি হলো প্যান্টিং। সেজন্য কুকুরের জিহ্বা বের করে রাখতেই হয়। এ ছাড়া দেহে তাপীয় ভারসাম্য রাখার বিকল্প কোনো উপায় তাদের নেই।

লেখা: শিক্ষার্থী, এমবিবিএস ৫ম বর্ষ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ

সূত্র: গাইটন অ্যান্ড হল টেক্সটবুক অব মেডিক্যাল সাইকোলজি, ১৩তম মুদ্রণ, পৃষ্ঠা ৯১৫