বিনা মেঘে বজ্রপাত
আকাশে মেঘ না থাকলে কি বজ্রপাত হতে পারে? সাধারণত হয় না। তাই এই প্রবাদ। বিনা কারণে হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে বলা হয়, এ যে দেখছি বিনা মেঘে বজ্রপাত! প্রশ্ন হলো, সব সময় কেন বৃষ্টিপাতের সময়ই বজ্রপাত হয়? কারণ, বিদ্যুৎ ও বজ্রপাতের জন্য মেঘের বৃষ্টির পানির বিন্দুগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ-আধান বা ইলেকট্রন ও প্রোটনের পৃথকীকরণ ঘটতে হয়। বাতাসের জলীয় বাষ্প হালকা বলে ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরে উঠে যায় এবং ওপরে বায়ুমণ্ডলের চাপ কম বলে বাষ্প বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে জলীয় বাষ্প ক্রমেই ঠান্ডা হতে থাকে। এভাবে মেঘের জন্ম। একসময় জলীয় বাষ্প আরও ঠান্ডা ও ঘন হয়ে পানির বিন্দুতে পরিণত হলে বৃষ্টি ঝরে। এই সময় মেঘে সঞ্চিত ইলেকট্রন বা নেগেটিভ চার্জ ভূপৃষ্ঠে বা পাশের কোনো মেঘে সঞ্চিত পজিটিভ চার্জের সঙ্গে মিলিত হতে ইলেকট্রনের প্রবাহের সৃষ্টি করে। তখন বিদ্যুৎ চমকায়। বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে প্রচণ্ড তাপের সৃষ্টি হয়। ৫০ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে, যা সূর্যপৃষ্ঠের উষ্ণতার প্রায় পাঁচ গুণ! এই প্রচণ্ড তাপে বিদ্যুতের চলার পথে বাতাস ভীষণ তপ্ত হয়ে ‘সনিক বুম’ সৃষ্টি হয়, এটাই বজ্রপাতের কান ফাটানো শব্দ। সুতরাং মেঘ-বৃষ্টির ফলেই বজ্রপাত ঘটে। তাই আকাশে মেঘ না থাকলে বৃষ্টিও হবে না, বজ্রপাত তো পরের কথা। কিন্তু অনেক সময় বৃষ্টির ফোঁটা মাটিতে পড়ার আগেই প্রচণ্ড উষ্ণতায় তা উবে যেতে পারে, কিন্তু বিদ্যুৎ চমকাতে দেখব, এমনকি বাজের শব্দও শোনা যাবে। একে বলা হয় ‘শুষ্ক বজ্রপাত’। তখন প্রশ্ন দেখা দেয়, বৃষ্টি হচ্ছে না, তাহলে কেন বিদ্যুৎ চমকায়, বজ্রপাত ঘটে। আবার অনেক সময় মেঘ ও বৃষ্টি হয়তো একটু দূরে হচ্ছে, সেখানে বিদ্যুৎ চমকায়, বজ্রপাতের শব্দও আমরা শুনি। এই সময়ই আমরা বলি, যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত! যখন মাথার ওপর আকাশে মেঘ থাকে কিন্তু বৃষ্টি ছাড়াই বজ্রপাত ঘটে, অর্থাৎ ‘শুষ্ক বজ্রপাত’ ঘটে, তখন সেটা অনেকের জন্য বিপদ ডেকে আনে। কারণ, আকাশে বিদ্যুতের চমকানি দেখলেও যেহেতু বৃষ্টি শুরু হয়নি, তাই অনেকে ধরে নিতে পারেন যে বাজ পড়ার ভয় নেই। এটা বিপজ্জনক। তাই একটি ৩০-৩০ নিয়ম মেনে চলতে হয়। কখনো বিদ্যুতের চমক দেখলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়ে মনে মনে ১, ২, ৩...গুনতে হবে। যদি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে বজ্রপাতের শব্দ শোনা যায়, তাহলে বুঝতে হবে কাছাকাছি বজ্রপাত ঘটছে। এ অবস্থায় অন্তত ৩০ মিনিট নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে। এরপর ধরে নেওয়া যায় বজ্রাঘাতে মৃত্যুর আশঙ্কা কম।
