নিজের গায়ের গন্ধ নিজে বুঝি না কেন?

গত মাসে বেশ কয়েক দিন প্রচণ্ড দাবদাহ ছিল। ঘামে ভিজে জবজবা হয়েছি। ঘামে ভেজা জামাকাপড় শুকিয়ে গেলেও থেকে যায় একটু অস্বস্তিকর গন্ধ। কারও পাশে বসলে তিনি হয়তো সরে বসেন। দুর্গন্ধ সহ্য করা কঠিন। মজার ব্যাপার হলো, এমন বাজে গন্ধ কিন্তু আমি নিজে বুঝতে পারি না। অনেক সময় মুখে দুর্গন্ধ হয়। আমরা টের পাই না, কিন্তু কারও সঙ্গে কথা বললে তিনি ঠিকই বোঝেন। এই বিষয়টিকে বলা হয় ‘নাসিকা-বন্ধ্যাত্ব’। ইংরেজিতে একটি সুন্দর শব্দ আছে, ‘অলফ্যাক্টরি ফ্যাটিগ’ বা গন্ধ-অবসাদ। ‘নোজ ব্লাইন্ডনেজ’ও বলা হয়। আমাদের নাসিকারন্ধ্রের ভেতরের দিকে ওলফ্যাক্টরি এপিথিলিয়াম টিস্যু থাকে।

এগুলো মস্তিষ্কের অলফ্যাক্টরি নিউরনের সঙ্গে যুক্ত। বাতাসের সঙ্গে যখন কোনো ক্ষুদ্র কণা নাকের এই সেলগুলোকে উদ্দীপিত করে, তার খবর মস্তিষ্কে যায় এবং তখনই আমরা গন্ধ অনুভব করি। কিছু খাওয়ার পর খাদ্যকণার গন্ধও একইভাবে মস্তিষ্কে যায়। যখন নিজের গায়ের গন্ধ সব সময় নাকে যেতে থাকে, তখন নাকের নির্দিষ্ট ওলফ্যাক্টরি সেলগুলো একসময় আর উদ্দীপিত হয় না এবং মস্তিষ্কের গন্ধ বুঝতে পারার প্রক্রিয়াটিও সেই গন্ধের জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে। ফলে নিজের গায়ের ঘামের গন্ধ আর টের পাই না।

এটা হলো একই গন্ধ বারবার পাওয়ার ফল। একপর্যায়ে ওই গন্ধের প্রতি আমাদের অনুভূতি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু অন্যের গায়ের অন্য ধরনের গন্ধ ঠিকই বুঝতে পারি। এ অবস্থায় আমরা যদি পরিষ্কার বাতাসে কিছুক্ষণ বুক ভরে শ্বাস নিই, তাহলে নাসিকা-বন্ধ্যাত্বের অবসান হয়। তখন টের পাই নিজের গা থেকে কত দুর্গন্ধই না বের হচ্ছে।

*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার জুন সংখ্যায় প্রকাশিত