হাম, চিকেন পক্স, চোখ ওঠা একবারই আক্রমণ করে?

প্রশ্ন:

হাম, চিকেন পক্স, চোখ ওঠা এই রোগগুলো কি একজন মানুষকে কেবল একবারই আক্রমণ করে?

নাফিসা তাবাসসুম, ৯ম শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল আজিমপুর, ঢাকা।

আব্দুল কাইয়ুম

হাম, চিকেন পক্স, চোখ ওঠা এই তিনটি রোগ আমাদের বেশ ভোগায় বটে, কিন্তু এই রোগগুলোকে এক সারিতে ফেলা যায় না। এদের মধ্যে হাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। অবশ্য চিকেন পক্স বা জল বসন্তও কম না। চোখ ওঠা তো আমাদের অনেকের প্রায়ই হয়। এগুলো সবই ছোঁয়াচে রোগ। শিশুদের হাম হলে এমন কি মৃত্যুর আশংকাও থাকে। সেজন্য জন্মের মাস খানেকের মধ্যেই শিশুকে হামের টিকা দেওয়া হয়। এর নির্দিষ্ট ডোজ রয়েছে। নিয়ম মেনে হামের টিকা নিলে পরবর্তীকালে সাধারণত হামের আশংকা আর থাকে না। কারণ হামের টিকা শিশুর শরীরে প্রায় স্থায়ী হাম–প্রতিরোধ শক্তি তৈরি করে। তাই আর ভয় থাকে না। কিন্তু জল বসন্তের বেলায় সে রকম সুযোগ নেই। জলবসন্তের টিকাও সে রকম নেই। কারণ এ রোগের ভাইরাস বিভিন্ন রকমের হতে পারে। এক ধরনের টিকায় রোগ প্রতিরোধ হলেও কাছাকাছি ধরনের অন্য ভাইরাসে আক্রান্তে হওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে একবার কারও জল বসন্ত হলে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার আশংকা কম। হাম হলে প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি–কাশি, গলা ব্যথা, গায়ে গুড়ি গুড়ি ফুসকুড়ি, চোখমুখ-গলা ফুলে যাওয়াসহ অনেক সমস্যা হয়। কিন্তু জলবসন্তে জ্বর সামান্য হয়, দু–এক দিনের মধ্যেই জ্বর চলে যায়। এর পর মুখ ও শরীরে ফুসকুড়ি ওঠে। এর ভেতর দূষিত তরল থাকে। তিন–চার সপ্তাহের মধ্যে ফুসকুড়িগুলো শুকিয়ে খোসা পড়ে যায়। এই খোসাগুলো জীবাণু ছড়ায়। তাই সাবধানে থাকতে হয়। না হলে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে। চোখ ওঠা তেমন ভয়ঙ্কর রোগ না হলেও খুব বেশি ছোঁয়াচে। একজনের হলে বাসার অন্য সবারই হতে পারে। সাধারণত আমরা হাত দিয়ে চোখ মুছি, সেই হাতের স্পর্শে অন্যরা আক্রান্ত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চোখ ওঠা রোগ মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। দেশের ভেতর এবং ভারতে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। প্রায় সব পরিবার চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। এ সময় পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এই রোগটি ‘জয়–বাংলা’ রোগ নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। কারও একবার চোখ উঠলে আবারও সে একই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।