পুরোনো সংবাদপত্রের কাটিং বা বইপত্র খুললে দেখবেন, কাগজগুলো হালকা হলুদ হয়ে গেছে। কারণ, কাগজ সাধারণত এমন উপাদান দিয়ে বানানো হয়, যা সময়ের সঙ্গে অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে হলদে হয়ে যায়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাগজ তৈরির মূল উপাদান হিসেবে কাঠ ব্যবহৃত হয়। আর কাঠের মূল উপাদান সেলুলোজ ও লিগনিন। এই লিগনিন কোষের দেয়ালকে দৃঢ়তা দেয়, কাঠকে শক্ত ও মজবুত করে। অন্যদিকে সেলুলোজ বর্ণহীন। এটি আলো প্রতিফলিত করতে পারে। এ কারণে কাগজের রং সাধারণত সাদা হয়।
লিগনিন একটি পলিমার। আলো ও বাতাসের সংস্পর্শে এলে এ পলিমারের আণবিক গঠন বদলে যায়। লিগনিন ও সেলুলোজ সহজেই অক্সিডেশন বা জারণ ঘটিয়ে অতিরিক্ত অক্সিজেন অণু গ্রহণ করতে পারে। সেই অণুগুলো পলিমারের গঠন বদলে দেয়। এই পরিবর্তনের ফলে পলিমারের ভেতরে ক্রোমোফোরাস নামে একধরনের আণবিক অঞ্চল তৈরি হয়। গ্রিক ভাষায় ক্রোমোফোরাস অর্থ রং বহনকারী। এই ক্রোমোফোরাস আলোর নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলিত করে। লিগনিনের জারণের ক্ষেত্রে সেই রংটি হয় হলুদ বা বাদামী।
যারা বাদামী রঙের কাগজ তৈরি করে, তারা লিগনিনের সুবিধা নেয়।
সাধারণত কাগজ প্রস্তুতকারকেরা ব্লিচিং প্রক্রিয়ায় কাগজ থেকে লিগনিন সরিয়ে ফেলেন। যত বেশি লিগনিন সরিয়ে ফেলা যায়, কাগজ তত বেশি সাদা হয়। কিন্তু সাধারণত সংবাদপত্র তৈরি করা হয় কম টাকার কাগজে। তাই বইপত্রের কাগজের তুলনায় সংবাদপত্রের কাগজে লিগনিন বেশি থাকে। সে জন্য এটি অন্যান্য কাগজের তুলনায় দ্রুত হলদে-বাদামী হয়ে পড়ে।
তবে মজার বিষয় হলো, যারা বাদামী রঙের কাগজ তৈরি করে, তারা লিগনিনের সুবিধা নেয়। কারণ মুদি ব্যাগ, কার্ডবোর্ড শিপিং বাক্সের মতো পণ্যগুলো আরও মজবুত হয় এর ফলে। তাই এগুলো থেকে লিগনিন আলাদা করা হয় না।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা সিটি কলেজ
সূত্র: লাইভ সায়েন্স