হাইলাইটার রঙের রসায়ন

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কাজে নিত্যসঙ্গী হাইলাইটার। পড়াশোনা বহুদূরে ফেলে এলেও ব্যক্তিগত জীবনে, অফিসের কাজে হাইলাইটারের দরকার পড়েই। তাদের উজ্জ্বল রঙের পেছনে রয়েছে বেশ কিছু রাসায়নিক পদার্থ।

প্রয়োজনীয় কালির রঙের ওপর নির্ভর করে হাইলাইটার কলমে বিভিন্ন রং ব্যবহার করা হয়। হলুদ হাইলাইটারে সাধারণত পাইরিনভিত্তিক রঞ্জক ব্যবহৃত হয়। যেমন পাইরানিন, এ ছাড়া ফ্লুরেসিনও ব্যবহার করা যেতে পারে। ট্রাইফেনাইলমিথেন রঞ্জকগুলো নীল হাইলাইটার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে পাইরিনভিত্তিক রঞ্জকের সঙ্গে মিশিয়ে সবুজ কালি তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। গোলাপি হাইলাইটার তৈরিতে ব্যবহৃত রোডামাইন রঞ্জকের সঙ্গে ট্রাইফেনাইলমিথেন মিশিয়ে তৈরি করা হয় বেগুনি কালি। আর কমলা কালির জন্য ব্যবহার করা হয় একটি কুমারিন রঞ্জক এবং একটি জ্যান্থিন রঞ্জকের সংমিশ্রণ।

বিভিন্ন রঙের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিকগুলোর সবই বেশ ভালো। কিন্তু তারা কেন এ রকম বিভিন্ন ধরনের রং তৈরি করে? ব্যাখ্যা করার জন্য আমাদের আলো এবং বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক কাঠামোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে জানতে হবে।

সাধারণত আলোর কিছু তরঙ্গদৈর্ঘ্য শোষণ করার ফলে রাসায়নিকগুলো রঙিন হয়। এটা হয় কীভাবে? যেসব রাসায়নিকের অণুতে নানা ধরনের একক ও দ্বিবন্ধন আছে, তারা বর্ণালির দৃশ্যমান পরিসরের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করতে পারে। ফলে শোষিত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রং দেখা যায়।

তার মানে, আমাদের হাইলাইটার কালির রঞ্জকগুলো তাদের মধ্যকার বিপুলসংখ্যক একক ও দ্বিবন্ধনের কারণে রঙিন হয়। কিন্তু বিষয়টি আসলে এদের রং ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়। এ রকম একক ও দ্বিবন্ধনযুক্ত রাসায়নিকের সংখ্যা অনেক। কিন্তু হাইলাইটারের কালির মতো রঙিন রাসায়নিকের সংখ্যা হাতে গোনা। রাসায়নিকের গঠন এবং এর শোষণক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়।

দৃশ্যমান আলো শোষণের পাশাপাশি হাইলাইটার কালিতে ব্যবহৃত রঞ্জকগুলোর রাসায়নিক কাঠামোও বর্ণালির অতিবেগুনি আলো শোষণ করে। অণুর ইলেকট্রন যখন এ আলো শোষণ করে, তখন তারা উত্তেজিত হয় এবং লাফ দিয়ে উচ্চ শক্তিস্তরে চলে যায়। কিন্তু এ উচ্চ শক্তির অবস্থায় তারা থাকতে পারে না। তখন ইলেকট্রনগুলো আগের অবস্থায় ফিরে আসে বা শিথিল হয়ে যায়। শিথিল হতে হলে বাড়তি (শোষিত) শক্তিটুকু ছেড়ে দিতে হবে না? এই শক্তি ইলেকট্রনগুলো ছেড়ে দেয় আলো হিসেবে। এই আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য মূল শোষিত আলোর চেয়ে দীর্ঘ হয়। যেমন মূল শোষিত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বর্ণালির অতিবেগুনি অংশে থাকা সত্ত্বেও বেরিয়ে আসে দৃশ্যমান অংশে, মানে দৃশ্যমান আলো হিসেবে।

উজ্জ্বল রঞ্জকগুলো ক্রমাগত এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় এবং অতিবেগুনি আলো শোষণ করে নিঃসরণ করে দৃশ্যমান আলো। সাধারণ দিনের আলোয় এটা দেখা যায় না। তবে অতিবেগুনি আলোতে দেখলে হাইলাইটার কালিগুলোর বিভিন্ন রং স্পষ্ট দেখা যায়।

এসব রঞ্জক হাইলাইটার কালির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তবে কালিতে এর পরিমাণ ৫ শতাংশের কম। বাকি কালির বড় অংশ হলো গ্লাইকল দ্রাবক এবং পানির সংমিশ্রণ। কালিতে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধক বায়োসাইডও থাকতে পারে।

েলখক: শিক্ষার্থী, টেক্সটাইল বিভাগ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, ঢাকা

সূত্র: কম্পাউন্ড কেমিস্ট্রি