সাবান কীভাবে পরিষ্কার করে?

খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২৮০০ সালে প্রাচীন ব্যাবিলনে সাবানের ব্যবহারের কথা জানা যায়। সে হিসেবে মানুষের সাবান ব্যবহারের ইতিহাস অনেক পুরোনো। তবে এতদিনেও সাবান তৈরির মূল রসায়নে কোনো পরির্বতন আসেনি। পরিবর্তন আসেনি সাবানের কাজেও।

ধুলোবালি, ময়লা বা জীবাণু—যাই হোক না কেন, সেটা পরিষ্কার করতে এখনও সাবানই খুঁজি আমরা। কারণ, খুব সহজে পানির সঙ্গে মিশে ময়লা দূর করতে পারে সাবান। প্রশ্ন হলো, সাবান কীভাবে এসব ময়লা পরিষ্কার করে?

সাবানের মূল উপাদান প্রাণিজ বা উদ্ভিজ চর্বি। এই চর্বিকে ক্ষারের সঙ্গে মেশানোর প্রক্রিয়াটির রাসায়নিক নাম স্যাপোনিফিকেশন। খাঁটি রাসায়নিকভাবে বললে, ক্ষারের সঙ্গে এস্টার জাতীয় এসিড মিশিয়ে স্যাপোনিফিকেশন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় সাবান। আসলে, এস্টারকে সাবান ও অ্যালকোহলে রূপান্তরের প্রক্রিয়ার নামই স্যাপোনিফিকেশন। এজন্য ক্ষারীয় দ্রবণ, যেমন সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড দ্রবণ বা এরকম কিছু ব্যবহার করা হয়।

রসায়নের ভাষায় সাবানকে ফ্যাটি এসিডের লবণও বলা হয়। এই ফ্যাটি এসিড মূলত দীর্ঘ কার্বন-শিকলবিশিষ্ট একধরনের জৈবএসিড (কার্বলিক এসিড)। আমরা জানি, এসিড-ক্ষারের বিক্রিয়ায় লবণ ও পানি তৈরি হয়। সাবান আসলে সেই লবণ—ফ্যাটি এসিডের লবণ।

সাবান অণুর কলাকৌশল

ধুলোবালি বা জীবাণুর মধ্যে থাকে লিপোফিলিক অণু। লিপোফিলিক মানে, লিপিড বা ফ্যাট, অর্থাৎ চর্বি বা তেলজাতীয় অণুর প্রতি আকর্ষিত হয়। পানির প্রতি আকর্ষিত হয় না। দেহ বা কাপড়ের তৈলাক্ত অণুর চারপাশে তাই ময়লা জমে। শুধু পানি এদের সরিয়ে দিতে বা মেরে ফেলতে পারে না। বলে রাখি, সাবানও এসব অণুজীবকে সরাসরি মেরে ফেলতে পারে না। শুধু সরিয়ে দিতে পারে।

সাবানের অণুর দুটো অংশ। একটি অংশ হাইড্রোফিলিক বা জলাকর্ষী, অর্থাৎ পানিকে আকর্ষণ করে। অন্যটি লিপোফিলিক। একদিকে লিপোফিলিক অংশটি চর্বিকে আকর্ষণ করে, অন্যদিকে হাইড্রোফিলিক অংশটি আকর্ষণ করে পানিকে। ফলে, লিপোফিলিক অংশটি ময়লাযুক্ত চর্বির কণাকে আটকে ফেলে। আর আপনি যখন হাত ঘষে ঘষে ধুয়ে নেন, তখন হাইড্রোফিলিক অংশটির সহায়তায় পানির স্রোতের সঙ্গে ময়লাযুক্ত এসব চর্বিকণা সহজেই ধুয়ে যায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস ম্যাগাজিন