কাঠে আগুন জ্বললেও ধাতুতে জ্বলে না কেন

কাঠ আগুনে পুড়লেও ধাতু পোড়ে নাছবি: সংগৃহীত

মনে করুন, বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছেন। রাত কাটাচ্ছেন পাহাড়চূড়ায়। রাতে ক্যাম্প ফায়ারের সামনে বসে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছেন। নাকে একটা পরিচিত গন্ধ পাচ্ছেন। চায়ের গন্ধ। আগুনে কাঠ পুড়িয়ে চা বানাচ্ছেন। হঠাৎ আপনার মনে হলো, আগুনের শিখা কাঠের টুকরোকে পুড়িয়ে ছাই করে দিলেও ধাতব পাত্রটি কিচ্ছু করতে পারছে না। কারণ কী? এমন প্রশ্ন পাঠকের মনে জাগাও স্বাভাবিক। কিন্তু জানেন কি, কেন এমন হয়?

আসলে কোনো বস্তুতে আগুন ধরবে কি-না, তা নির্ভর করে আগুনের তাপের ওপর। আরও কিছু বিষয়ের ওপরও নির্ভর করে। সে ব্যাপারে পরে আসছি। যাই হোক, তাপের প্রভাবে কোনো বস্তুর রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে গেলে, সেই বস্তুতে আগুন ধরবে। আগুন জ্বলতে কিছু জিনিস প্রয়োজন। যেমন অক্সিজেন, তাপ ও জ্বালানি। অক্সিজেন পাওয়া যায় বায়ুতে। ঘর্ষণের ফলে উৎপন্ন হয় তাপ। যেমন, ম্যাচের কাঠি বারুদের সঙ্গে ঘর্ষণে জ্বলে ওঠে। এছাড়া বজ্রপাতেও তাপ উৎপন্ন হয়। আর যা কোন বস্তুকে পোড়াতে সাহায্য করে তাই হলো জ্বালানি। এখন জানা দরকার, কেন কাঠে আগুন ধরে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ কার্ল ব্রোজেক। তিনি বলেন, ‘দহন  বিক্রিয়ায়  দুর্বল রাসায়নিক বন্ধনগুলো ভেঙে যায়। কারণ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পদার্থগুলোতে তাপ দেওয়ায় পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। তাই স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য অণুগুলো পুরাতন রাসায়নিক বন্ধন  ভেঙে নতুন বন্ধন তৈরি করে। ফলে শক্তি উৎপন্ন হয়।

কাঠের টুকরো ও ধাতুর পাত্রে আগুন ধরা বা না ধরার বিষয়টি নির্ভর করে, কোনটির রাসায়নিক বন্ধন কতটা শক্তিশালী তার ওপর।

কোনো বস্তুকে আগুনে জ্বালানো হলে, বস্তুটি প্রচুর শক্তি মুক্ত করে। কাঠ বা কাগজের মতো উপাদানে সহজে আগুন ধরে। কারণ এগুলো সেলুলোজ দিয়ে তৈরি। সেলুলোজ হলো কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মধ্যে বন্ধনের সমন্বয়ে গঠিত একটি অণু। কাঠের তৈরি কোনো বস্তুতে আগুন ধরা মানে ওই বস্তুটির সেলুলোজ কার্বন ডাই-অক্সাইড ও জলীয় বাষ্পে রূপান্তরিত হওয়া। এ সময় বিক্রিয়া থেকে নির্গত শক্তি গ্যাসের পরমাণুর ইলেকট্রনকে উত্তেজিত করে। ফলে উৎপন্ন হয় আলো। সেই আলোকে আমরা শিখা হিসেবে দেখি।

এখন আবার জ্বলন্ত কাঠের টুকরো ও চা বানানোর ধাতুর পাত্রে ফিরে যাই। কাঠের টুকরো ও ধাতুর পাত্রে আগুন ধরা বা না ধরার বিষয়টি নির্ভর করে, কোনটির রাসায়নিক বন্ধন কতটা শক্তিশালী তার ওপর। ধাতুর রাসায়নিক বন্ধন অনেক শক্তিশালী। যা সহজে ভাঙা যায় না। তাই এটি আগুনের শিখা থেকে শক্তি শোষণ করতে পারে। অন্যদিকে কাঠের রাসায়নিক বন্ধন ধাতুর মতো শক্তিশালী নয়। কাঠের টুকরোয় শক্তিশালী বন্ধন না থাকায় এটি শক্তি শোষণের পরিবর্তে কাঠে আগুন ধরিয়ে শক্তি ছেড়ে দেয়। কিন্তু একটি ধাতুর পাত্র সেই শক্তি শোষণ করে ধরে রাখে। ফলে ধাতুর পাত্রে স্পর্শ লাগলে আমাদের গরম অনুভূত হয়। কিন্তু যদি কোনো বস্তু কাঠের তৈরি হয়েও তাপ শোষণ করে, তবে কাঠে আগুন ধরবে না। আবার যদি পানি ভর্তি একটি কাগজের কাপে (কল্পনা করুন) আগুন জ্বালানো হয়, তাহলে কাপটি জ্বলবে না। কারণ কাপের পানি তাপ শোষণ করে। ফলে কাগজকেও আগুনে পোড়াতে পারবে না। কিন্তু এ ধরনের পরীক্ষা ল্যাবে না গিয়ে বাসায় বসে করার চেষ্টা করবেন না।

তাহলে কোনো ধাতুই কি আগুনে পোড়ে না? আসলে আগুনে পোড়ার মতো কিছু ধাতু আছে। যেমন, পটাসিয়াম এবং টাইটানিয়াম। এই ধরনের ধাতুকে বলে দাহ্য ধাতু। সাধারণত আতশবাজি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এ ধাতু। আতশবাজিতে থাকা ধাতুগুলি পাউডার আকারে থাকে। ফলে তাপ এবং অক্সিজেনের সঙ্গে খুব দ্রুত বিক্রিয়া করে। যখন এ ধাতুগুলো অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে পর্যাপ্ত তাপের সংস্পর্শে আসে, তখন নির্গত শক্তি বিভিন্ন রঙের আলো তৈরি করে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সিটি কলেজ, ঢাকা

সূত্র: লাইভ সায়েন্স