পারদ শব্দটি যেভাবে পেলাম

পারদ হলো মহাবিশ্বের একমাত্র ধাতব পদার্থ, যা সাধারণ তাপমাত্রা ও চাপে তরল অবস্থায় থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই এই বিষাক্ত পদার্থটির সঙ্গে মানুষ পরিচিত। ইংরেজিতে এর নাম মার্কারি। আবার সৌরজগতের প্রথম গ্রহটির নামও মার্কারি, যা আমাদের কাছে বুধ গ্রহ বলে পরিচিত। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে দ্রুততম গ্রহ। এই দুটোরই নামকরণ করা হয়েছে দ্রুতগামী রোমান বার্তাবাহক দেবতার নামে। প্রাচীন জ্যোতিষীরা বুধ গ্রহের জন্য যে প্রতীক ব্যবহার করতেন, ওই প্রতীকটিই আবার অ্যালকেমিস্টরা ধাতুর জন্য ব্যবহার করতেন।

বাংলা রসায়ন শব্দের উৎপত্তির মূলেও আছে এই পারদ। প্রাচীন ভারতীয় অ্যালকেমিস্টরা পারদ বা পারদের আকরিক সিনাবার (আরবিতে জিনজিফ্রা) আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করতেন। তাঁদের এই শাস্ত্রকে সংস্কৃতে বলা হতো রসশাস্ত্র, যার আরেক অর্থ পারদের শাস্ত্র বা বিজ্ঞান। এই শব্দ থেকেই সংস্কৃত শব্দ রসায়নের উৎপত্তি। এখানে রস অর্থ নির্যাস বা সারাংশ এবং অয়ন অর্থ পথ।

ইংরেজিতে পারদকে কুইকসিলভার নামেও ডাকা হয়। আবার প্রাচীনকালে রসায়নবিদদের কাছে এটি হাইড্রারজিরাম (Hydrargyrum) নামেও পরিচিত ছিল। গ্রিক শব্দ হাইড্রাজিরোস (hydrargyros) থেকে লাতিনে এই শব্দটির উৎপত্তি। গ্রিক হাইড্রা (hydr) অর্থ পানি এবং আরজিরোস (argyros) অর্থ রুপা। কাজেই হাইড্রাজিরোসের অর্থ পানি-রুপা কিংবা রুপালি পানি। পারদ একই সঙ্গে প্রায় পানির মতো তরল এবং রুপার মতো চকচকে বলেই এমন নাম। এই লাতিন নাম থেকেই পারদের রাসায়নিক সংকেত হয়েছে Hg।