শক্তিশালী ও দুর্বল অ্যাসিড কী

অ্যাসিড শব্দটার সঙ্গে হামেশাই ভয়ংকর শব্দটা শোনা যায়। শিক্ষার্থীদের কাছেও এটি মারাত্মক এক তরল, যাকে ধরা বা ছোঁয়া যায় না। কিন্তু আসলেই কি সব অ্যাসিড মারাত্মক? ছুঁলেই হাত ঝলসে যাবে? উত্তরটা, বলা যায়—হ্যাঁ এবং না। আসলে অ্যাসিড ভেদে নির্ভর করে, সেটা মারাত্মক নাকি সাধারণ। কোনটা মারাত্মক অ্যাসিড আর কোনটা সাধারণ, তা বোঝার আগে বুঝতে হবে অ্যাসিড জিনিসটা কী।

বইয়ের ভাষায়, যে সব যৌগে এক বা একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে এবং পানির সঙ্গে বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন করে, সেগুলোই অ্যাসিড। এবার এই সংজ্ঞাটি একটু ব্যাখ্যা করা যাক। এখানে কয়েকটা বিষয় উল্লেখযোগ্য। যৌগ, বিক্রিয়া ও আয়ন।

প্রথমে যৌগ বোঝার চেষ্টা করি। হাইড্রোজেন একটা মৌল, যার সংকেত H। আবার অক্সিজেনও একটা মৌল, সংকেত O। এই ভিন্ন ভিন্ন মৌল দুটি যদি একসঙ্গে মিশে যায়, তাহলে পানি উৎপন্ন হতে পারে। এই যে দুটি আলাদা মৌল মিলে পানি (রাসায়নিক সংকেত: H2O) তৈরি হলো, এটাই যৌগ। অনেকটা ব্যাকরণের বর্ণ ও শব্দের মতো। ক, খ, গ… হলো বর্ণ। এখন ক, ল ও ম—এই তিনটা বর্ণ একত্রে লিখলে হবে কলম। অর্থাৎ তিনটা বর্ণ মিলে একটা শব্দ হলো। তেমনি রসায়নে একাধিক মৌল মিলে একটা যৌগ গঠন করে।

আর বিক্রিয়া মানে, ওই যে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনে একে ওপরের সঙ্গে ‘মিশে’ যায়, এ সময় এগুলো বদলে গিয়ে ‘নতুন কিছু’ তৈরি করে—এটাই বিক্রিয়া। এখানে ‘মিশে যাওয়া’ কথাটি একটু বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। চিনি আর বালু একসঙ্গে মিশিয়ে ফেললেও তা মিশে যাবে, তবে এ ক্ষেত্রে নতুন কোনো কিছু তৈরি হবে না। এটাকে বলা হয় মিশ্রণ। এটা বিক্রিয়া নয়। বিক্রিয়ায় যে মৌলগুলো মিশছে, সেগুলোর বৈশিষ্ট্য বদলে যায় ও নতুন কিছু তৈরি হয়। বইয়ের ভাষায়, দুই বা ততোধিক মৌল বা যৌগ রাসায়নিকভাবে মিলিত হয়ে এক বা একাধিক ভিন্ন যৌগ উৎপন্ন করলে তাকে বিক্রিয়া বলে। এখানে যেমন দুটি ভিন্ন মৌল বিক্রিয়া করে একটা ভিন্ন যৌগ উৎপন্ন করেছে।

আরেকটা বিষয় হলো আয়ন। খেয়াল করলে দেখবেন, মাঝেমধ্যে হাইড্রোজেনের পাশে ‘+’ বা ‘যোগ’ চিহ্ন দেওয়া থাকে। যেমন H+। কোনো কোনো মৌলের ক্ষেত্রে আবার বিয়োগ চিহ্নও থাকে। যেমন Cl­­-। এই যোগ ও বিয়োগ চিহ্ন দিয়ে বোঝায়, এতে যে পরিমাণ ইলেকট্রন থাকার কথা, তারচেয়ে কম বা বেশি আছে। যোগ চিহ্ন দেওয়া থাকলে বোঝায় ইলেকট্রন কম আছে, আর বিয়োগ চিহ্ন মানে বেশি আছে। এ অনুযায়ী চিহ্নটি আধান বা চার্জও বোঝায়। এই চার্জ দুই ধরনের হয়। ধনাত্মক ও ঋণাত্মক।

আয়নটি ধনাত্মক হবে না ঋণাত্মক, তা নির্ভর করে পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসের ওপর। যদি কোনো মৌলের সবশেষ কক্ষপথে ১, ২ বা ৩টি ইলেকট্রন থাকে, তাহলে এক বা একাধিক ইলেকট্রন ছেড়ে দিয়ে মৌলটি সাধারণত ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয়। আবার এর বিপরীতও দেখা যায়। শেষ কক্ষপথে ৫, ৬ বা ৭টি ইলেকট্রন থাকলে এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে মৌলটি ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয়। তবে যে সব মৌলের শেষ কক্ষপথে ২ বা ৮টি ইলেকট্রন থাকে, সেগুলো সহজে আয়নিত হতে চায় না। কারণ, সাধারণত সব মৌল চায় দ্বিত্ব বা অষ্টক পূরণ করতে। এর ব্যতিক্রমও আছে। সেটা ভিন্ন এবং বড় পরিসরের আলোচনা। প্রসঙ্গে ফিরি।

অ্যাসিড কী? একদম সহজ ভাষায় বললে, যে সব রাসায়নিক দ্রব্য পানিতে বিক্রিয়া করে ধনাত্মক হাইড্রোজেন (H+) ছেড়ে দেয়, সেগুলো অ্যাসিড। যেমন হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl)। আমাদের পাকস্থলীতে এই অ্যাসিড অল্প মাত্রায় থাকে। পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে এই অ্যাসিড হাইড্রোজেন (H+) ও ক্লোরিন আয়ন (Cl-) উৎপন্ন করে। যেহেতু এটি হাইড্রোজেন আয়ন ছেড়ে দিতে পারে, তাই এটি একটি অ্যাসিড।

এখন এই হাইড্রোজেন আয়ন কতটা ছাড়তে পারবে, তার ওপর নির্ভর করে অ্যাসিডটি শক্তিশালী হবে, নাকি দুর্বল। বেশি পরিমাণ হাইড্রোজেন ছেড়ে দিতে পারলে সেটা সাধারণত শক্তিশালী অ্যাসিড হয়। আর কম সংখ্যক হাইড্রোজেন আয়ন দান করলে তাকে বলা যায় দুর্বল অ্যাসিড।

এখানে সংকেতসহ ৭টি শক্তিশালী অ্যাসিডের নাম দিচ্ছি। ক্লোরিক অ্যাসিড (HClO3), হাইড্রোব্রোমিক অ্যাসিড (HBr), হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl), হাইড্রোআয়োডিক অ্যাসিড (HI), নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3), পারক্লোরিক অ্যাসিড (HClO4), সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4)।

এবার আসি দুর্বল অ্যাসিডে। যে অ্যাসিড পানিতে মিশলে তুলনামূলক কম সংখ্যক হাইড্রোজেন আয়ন দান করতে পারে, সেগুলোই দুর্বল অ্যাসিড।

অ্যাসিড কতটা শক্তিশালী বা দুর্বল, তা মাপা হয় পিএইচ দিয়ে। যে অ্যাসিডের পিএইচ (pH) মান যত বেশি, অ্যাসিড তত দুর্বল। দুর্বল অ্যাসিডের পিএইচ মোটামুটি ৪ থেকে ৬-এর মধ্যে থাকে।

দুর্বল অ্যাসিডের উদাহরণ হলো অক্সালিক অ্যাসিড (C2H2O4), সালফিউরাস অ্যাসিড (H₂SO₃), ফসফরিক অ্যাসিড (H₃PO₄), নাইট্রাস অ্যাসিড (HNO₂), হাইড্রোফ্লোরিক অ্যাসিড (HF), মিথেনিক অ্যাসিড (CH₂O₂), অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH₃COOH) ইত্যাদি।

সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস