কুরিয়াম শব্দটি যেভাবে পেলাম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস

পর্যায় সারণির ৯৬ নম্বর মৌলটির নাম কুরিয়াম। কুরিয়াম নামকরণ করা হয়েছে কুরি দম্পতির সম্মানে। উনিশ শতকের শেষ দিকে তেজস্ক্রিয়তা–সম্পর্কিত গবেষণায় পিয়েরে কুরি ও মেরি কুরি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

কুরিয়াম মৌলটিও আবিষ্কৃত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে। কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে তা গোপন রাখা হয়েছিল। আবিষ্কারের দীর্ঘ তিন বছর পর ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে মৌলটি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।

পরে জানা যায়, ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলির ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানী দল ৬০ ইঞ্চি সাইক্লোট্রন পার্টিকেল অ্যাকসিলারেটরে মৌলটি আবিষ্কার করে। প্লুটোনিয়াম মৌল লক্ষ্য করে আলফা পার্টিকেল (হিলিয়াম নিউক্লিও) ছোড়ার ফলে মৌলটির পারমাণবিক সংখ্যা বেড়ে ৯৬-এ দাঁড়ায়। সেই নতুন মৌলের নামকরণ করা হয় কুরিয়াম। এর সংকেত Cm।

এ মৌলও প্রচণ্ড তেজস্ক্রিয়। এটা এতই তেজস্ক্রিয় যে তা অন্ধকারে রক্তবর্ণের আভা বিকিরণ করে। কুরিয়ামের এখন পর্যন্ত জানা আইসোটোপের সংখ্যা ২১। এর সব কটিই তেজস্ক্রিয়। এসব আইসোটপের মধ্যে সবেচেয়ে বেশি অর্ধায়ু Cm-247-এর। এ আইসোটোপের অর্ধায়ু ১৬ মিলিয়ন বছর। তবে Cm-242 ও Cm-244 আইসোটোপই বেশি তৈরি হয়।

মৌলটি বিরল ও দামি। প্রতি মিলিগ্রাম কুরিয়ামের দাম ১৬০–১৮৫ মার্কিন ডলার। সে কারণে এর বাণিজ্যিক ব্যবহার সীমিত। কুরিয়াম আলফা বিকিরণ নিঃসরণ করে। তাই এটি আলফা কণার উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে। মহাকাশ অনুসন্ধান যানে এক্স-রে স্পেকট্রোমিটারে আলফা পার্টিকেলের উৎস হিসেবে এ মৌল ব্যবহার করা হয়। সে উদ্দেশ্যে মার্স রোভার স্পিরিট, অপরচুনিটি ও কিউরিওসিটির স্পেকট্রোমিটারে এ মৌল ব্যবহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে স্যাটেলাইটের ব্যাটারিতে এর ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। আবার মৌলটি ব্যবহার করে ছোট আকারের পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরির সম্ভাবনাও দেখেছেন অনেকে।