রসায়নবিদরা তামাকে ইংরেজিতে কপার নামে ডাকেন। খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৫ হাজার বছর আগেই মানুষ তামার সঙ্গে পরিচিত ছিল। তবে অনেকের মতে এ সংখ্যা আসলে খ্রিস্টপূর্ব ১০ হাজার বছর। খ্রিষ্টপূর্ব আড়াই হাজার বছর আগে তামার সঙ্গে টিন মিশিয়ে সংকর ধাতু ব্রোঞ্জ তৈরির পদ্ধতি শেখে মানুষ। সে যুগটি ব্রোঞ্জ যুগ নামে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। ব্রোঞ্জ তৈরির পদ্ধতি শেখার পর মানুষ পাথরের তৈরি যন্ত্রপাতি ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছিল।
ইংরেজিতে কপার (Copper) নামটি এসেছে লাতিন নাম কিউপ্রাম (Cuprum) থেকে। এই কিউপ্রাম শব্দটির উৎপত্তি সাইপ্রাস (Cyprus) থেকে। প্রাচীনকালে সাইপ্রাস দ্বীপের তামাখনিগুলো ছিল বিখ্যাত এবং তামার প্রধান যোগানদাতা।
বিশুদ্ধ তামা উজ্জ্বল ও চকচকে। কিন্তু তামা দীর্ঘদিন খোলা বাতাসে ফেলে রাখলে ধীরে ধীরে তাতে হালকা সবুজ স্তর পড়ে। এতে তামা অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ে।
তামার সবুজ এই স্তরকে বলে প্যাটিনা। এটা আসলে বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে তামার দীর্ঘদিন রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে হয়। ঠিক একই কারণে লোহাকে বেশি দিন বাতাসে ফেলে রাখলে তাতে মরিচা ধরে। রসায়নের ভাষায়, এই বিক্রিয়াকে বলা হয় অক্সিডেশন বা জারণ। এই প্রক্রিয়ায় কপারের সঙ্গে অক্সিজেন বিক্রিয়া করে কপার ডাই-অক্সাইড (Cu2O) তৈরি হয়। তামার গায়ের এই স্তরের সঙ্গে এরপরও অক্সিজেনের বিক্রিয়া চলতেই থাকে। এ ছাড়া জলীয়বাষ্প বা কার্বন ডাই-অক্সাইডের সঙ্গেও এই স্তরের বিক্রিয়া হতে থাকে। এর ফলে তৈরি হয় কপার কার্বনেট নামে একধরনের লবণ। এই লবণের রং সবুজ। একেই বলা হয় প্যাটিনা। এই প্যাটিনা স্তরের কারণেই স্তরের নিচের কপার বা তামা নষ্ট হয় না।
তামার এই দোষ বা গুণের কারণে অনেক দেশে তামা দিয়ে বাড়ির ছাদ মুড়ে দেওয়া হয়। ফলে এই সব বাড়ির ছাদ দেখতে সবুজ রঙের হয়। অনেকে হাতে তামার আংটি বা বালা পরেন। সেগুলোতেও একসময় সবুজ দাগ পড়তে দেখা যায়। আসলে আমাদের দেহ থেকে যে ঘাম বের হয়, তা অ্যাসিডিক বা অম্লীয়। তামা এই অ্যাসিডের সংস্পর্শে সবুজ রং ধারণ করে।