কফির রসায়ন

দুধে ভরা লাতে কিংবা সফেন বড় এক কাপ এসপ্রেসো। সারা বিশ্বে অনেকের সকালটা শুরু হয় এভাবেই। যা চাঙা রাখে সারাটা দিন। কিন্তু জানেন কি, প্রতিটি কফির কাপে ১ হাজারের বেশি জটিল রাসায়নিক আছে? যার মধ্যে রয়েছে অ্যাসিড, অ্যালকালয়েড, কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন। আর এসব মিলেমিশেই তৈরি হয় কফির মন মাতাল করা গন্ধ

অ্যাসিড

কফিতে বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিড আছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড। এর দুটি যৌগিক গ্রুপ রয়েছে। এর একটি ডিক্যাফেয়ল অ্যাসিড, যার স্বাদ ধাতব এবং অন্যটি তেতো স্বাদের মনোক্যাফেয়ল অ্যাসিড। এই দুই অ্যাসিড থেকে উৎপন্ন হয় কুইনিক এবং ক্যাফেয়িক অ্যাসিড। এরাই মূলত কফির তিতকুটে স্বাদের কারণ।

অ্যালকালয়েড

ক্যাফেইন ছাড়াও বীজ থেকে কফি উৎপাদনে আরও কিছু অ্যালকালয়েড তৈরি হয়। এর মধ্যে একটি ট্রাইগোনালিন। এটি বিভিন্ন ক্ষতিকারক অ্যাসিডের উপজাত এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। এ রকম আরও একটি যৌগের নাম পাইরিডাইন। এটি কফির মিষ্টি স্বাদেরও কারণ।

কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন

শুকনো কফির ওজনের অর্ধেকই কার্বোহাইড্রেট। সেই সঙ্গে কফির সুগন্ধি তৈরিতেও ভূমিকা রাখে এটি। অন্য দিকে কফির বীজ ভাজার সময় এর মুক্ত প্রোটিনগুলো চিনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে সুগন্ধি যৌগ তৈরি করে।

ক্যাফেইন

ক্যাফেইন মূলত এক ধরনের অ্যালকালয়েড যা মানবমস্তিষ্কে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এর ফলে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে অ্যাড্রেনালিন হরমোন নির্গত হয়। অন্য দিকে ক্যাফেইনের প্রভাবে এনজাইমের যৌগিক ধরন ভেঙে যায়। এ থেকে উৎপন্ন থিয়োব্রোমিন মস্তিষ্কে পুষ্টি ও অক্সিজেন–প্রবাহ বৃদ্ধি করে, প্যারাক্সেনথিন চর্বি ভাঙতে সহায়তা করে এবং থিয়োফাইলিন হার্ট রেট বাড়িয়ে দেয়।

ক্যাফেইন গ্রহণে সহনীয় মাত্রা প্রতিদিন ৪০০ মিলিগ্রাম। কিন্তু দিনে ১০ গ্রামের বেশি (৭৫ কাপ কফি) ক্যাফেইন গ্রহণ দেহের জন্য ক্ষতিকর এবং এতে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডোপামিন নিয়ন্ত্রণ

অ্যাডেনোসিন মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক হরমোনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে, যা আনন্দ অনুভূতির কারণ।

কফি খেলে যা হয়

ক্যাফেইন অ্যাডেনোসিনকে বাধা দিয়ে মস্তিষ্কের রিসেপ্টর সেলের সঙ্গে বন্ধন তৈরি করে।

কফি না খেলে যা হয়

অ্যাডেনোসিন সাধারণত মস্তিষ্কের রিসেপ্টর কোষের সঙ্গে বন্ধন তৈরি করে স্নায়ুকে শিথিল করে। এতে তন্দ্রাভাব হয়।

সতর্কতা বৃদ্ধি

ক্যাফেইন তন্দ্রাভাব কাটিয়ে স্নায়ুকে জাগিয়ে তোলে।

স্বাভাবিক উদ্দীপক

অ্যাডেনোসিন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ডোপামিন খুব ভালোভাবে কাজ করতে পারে। এতে মন প্রফুল্ল থাকে।

সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস

*লেখাটি ২০১৮ সালে বিজ্ঞানচিন্তার অক্টোবর সংখ্যায় প্রকাশিত