স্বর্ণ কি খাওয়া যায়? স্বর্ণ খেলে কী হয়?

খাবার স্বর্ণ আসলে আলাদা কিছু নয়। এর ইংরেজি, এডিবল গোল্ড। আমরা অলঙ্কারে যে স্বর্ণ ব্যবহার করি, এটা তারই একটি রূপ।

স্বর্ণের প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরকালের। মানুষ যখন থেকে ‘সম্পদ’ বিষয়টা বুঝতে শিখেছে, তখন থেকেই স্বর্ণকে ঘিরে আকর্ষিত হয়েছে মানুষ। দিনে দিনে এ আকর্ষণ বেড়েছে আরও। এর কারণও আছে। স্বর্ণ দেখতে চকচকে, সুন্দর। প্রকৃতিতে পাওয়া মৌলগুলোর মধ্যে স্বর্ণের স্থায়ীত্ব তুলনাহীন। বাতাসের অক্সিজেন বা অন্য কোনো উপাদানের সঙ্গে সহজে বিক্রিয়া করে না বলে দীর্ঘদিন অবিকৃত থাকে। এসব কারণে মানব সভ্যতা যত এগিয়েছে, ততই স্বর্ণ হয়ে উঠেছে মূল্যবান।

একসময় টাকার মূল্য নির্ধারণ করা হতো জমা স্বর্ণের বিপরীতে। আর অলঙ্কার হিসেবে স্বর্ণের ব্যবহার নিয়ে তো নতুন কিছু বলার প্রয়োজন-ই নেই। হাল আমলে শুধু সম্পদ বা অলঙ্কার হিসেবে নয়, খাবার হিসেবেও স্বর্ণের চাহিদা তুঙ্গে। বিশ্বব্যাপী নামীদামী রোস্তারাঁয় স্বর্ণ খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশেও এমনটা দেখা যাচ্ছে ইদানীং। এ নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।

খাবার স্বর্ণ আসলে আলাদা কিছু নয়। এর ইংরেজি, এডিবল গোল্ড। আমরা অলঙ্কারে যে স্বর্ণ ব্যবহার করি, এটা তারই একটি রূপ। তবে অলঙ্কার বা সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য স্বর্ণে সাধারণত কিছু খাদ বা অপদ্রব্য মেশানো হয়। এর ফলে টেকসই হয় অলঙ্কার। খাবার স্বর্ণ এদিক থেকে আলাদা। এতে কোনো খাদ থাকে না। বিশুদ্ধ স্বর্ণকে পাতলা কাগজের মতো করে অন্য কোনো খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।

খাবার হিসেবে গ্রহণ করার পর পাকস্থলীতে স্বর্ণ কোনো বিক্রিয়ায় অংশ নেয় না।
স্বর্ণে মোড়ানো আইস্ক্রিম

স্বর্ণকে খাবার হিসেবে গ্রহণের ইতিহাস অনেক পুরোনো। কথিত আছে, আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে মিশরসহ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের নানা অঞ্চলে খাবার হিসেবে স্বর্ণ গ্রহণ করার চল ছিল। শুধু তা-ই নয়, সেকালে লোকেরা বিশ্বাস করত, স্বর্ণ খেলে দৈহিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধতা আসে। বিভিন্ন রোগ ভালো করার উদ্দেশ্যেও স্বর্ণ খেতেন অনেকে।

এখনকার বিষয় অবশ্য ভিন্ন। এখন আর কেউ নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য স্বর্ণ খায় না। এমনকি রোগ-শোক ভালো হবে, এ চিন্তাও কাজ করে না মানুষের মনে। এখন স্বর্ণ খাওয়ার বিষয়টি একধরনের আভিজাত্যের প্রতীক।

স্বর্ণ রাসায়নিকভাবে প্রায় নিষ্ক্রিয়, তাই খাবার হিসেবে এটা ক্ষতিকর নয়। স্বর্ণের বিশুদ্ধতা নির্ণয় করা হয় ক্যারেট এককে। ২৪ ক্যারেট স্বর্ণকে বলা হয় সবচেয়ে বিশুদ্ধ স্বর্ণ। কারণ, এতে অন্য কোনো মৌল বা খাদ মিশ্রিত থাকে না। এ কারণে খাবার হিসেবে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণকে বৈধতা দেন বিশেষজ্ঞরা। তবে অনেকে মনে করেন, ২২ ক্যারেট স্বর্ণও খাওয়ার যোগ্য। এরচেয়ে কম ক্যারেটের স্বর্ণ খাওয়া উচিত নয়।

খাবার স্বর্ণের এসব পাতের পুরুত্ব খুবই কম হয়। প্রায় ০.০০০১ মিলিমিটার

খাবার হিসেবে গ্রহণ করার পর পাকস্থলীতে স্বর্ণ কোনো বিক্রিয়ায় অংশ নেয় না। আসলে, আগে যেমন বলেছি, এমনিতেও স্বর্ণ অন্যান্য মৌলের সঙ্গে সহসা বিক্রিয়া করতে চায় না। এক্ষেত্রেও বিষয়টি সেরকম। অবিকৃত অবস্থায় বর্জ্য হিসেবে বেরিয়ে যায় দেহ থেকে। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, এজন্যই বিশুদ্ধ স্বর্ণ খেলেও দেহের কোনো ক্ষতি হয় না।

খাওয়ার উপযোগী এই স্বর্ণের আলাদা কোনো স্বাদ নেই। বিশেষ করে যখন অন্য কোনো খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়, তখন আলাদা পার্থক্য বোঝা যায় না। তবে শুধু স্বর্ণের পাত বা গুঁড়ো খেলে একধরণের ধাতব স্বাদ বোঝা যেতে পারে। বলা প্রয়োজন, খাবার স্বর্ণের এসব পাতের পুরুত্ব খুবই কম হয়। প্রায় ০.০০০১ মিলিমিটার, অর্থাৎ ১ মিলিমিটারের প্রায় ১০ হাজার ভাগের একভাগ। খাবার স্বর্ণ তৈরির প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

খাবার নিয়ে কথা বলতে গেলেই স্বাস্থ্যের কথা চলে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বর্ণ যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, তেমনি এর কোনো উপকারও নেই। অর্থাৎ স্বাস্থ্যের প্রশ্নে স্বর্ণ পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: উইকিপিডিয়া, ওয়েব রেস্টুরেন্ট স্টোর ব্লগ