পরমাণুর গঠন

মহাবিশ্বের সবকিছুই পরমাণু দিয়ে গঠিত। প্রতিটি পরমাণুর ভেতরে থাকে একটি নিউক্লিয়াস। এটিই পরমাণুর কেন্দ্র। এখানে অতিক্ষুদ্র প্রোটন ও নিউট্রন গুচ্ছকারে থাকে। এদের ভর ও চার্জের পরিমাণও অতি অল্প। সে কারণে সাধারণত তাদের ভর ও চার্জের তুল্যমান দিয়ে হিসাব করা হয়। যেমন প্রোটনের আপেক্ষিক চার্জ ধরা হয় +১ এবং নিউট্রনের আপেক্ষিক চার্জ ০। এই দুটি কণা মিলেই পরমাণুর সিংহভাগ ভর গঠন করে। তবে একটি পরমাণুর মোট ব্যাসের তুলনায় তারা খুব অল্প জায়গা দখল করে থাকে। পরমাণুর বাকি জায়গা থাকে ইলেকট্রনের দখলে। এই অতিক্ষুদ্র কণার আপেক্ষিক চার্জ -১। প্রোটনের ধনাত্মক চার্জকে ভারসাম্যে আনতে ইলেকট্রনের এই ঋণাত্মক চার্জ যথেষ্ট। নিউক্লিয়াসের চারপাশে ঘোরাঘুরি করে ইলেকট্রন।

প্রোটন ও নিউট্রন গঠিত হয় আরও ক্ষুদ্র কণা কোয়ার্ক দিয়ে। একটি প্রোটন দুটি আপ কোয়ার্ক ও একটি ডাউন কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত। অন্যদিকে দুটি ডাউন কোয়ার্ক ও একটি আপ কোয়ার্ক মিলে গঠন করে নিউট্রন। কোয়ার্কগুলো গ্লুয়ন নামের একটি বলবাহী কণার মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

প্রোটন ও নিউট্রন গঠিত হয় আরও ক্ষুদ্র কণা কোয়ার্ক দিয়ে। একটি প্রোটন দুটি আপ কোয়ার্ক ও একটি ডাউন কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত। অন্যদিকে দুটি ডাউন কোয়ার্ক ও একটি আপ কোয়ার্ক মিলে গঠন করে নিউট্রন। কোয়ার্কগুলো গ্লুয়ন নামের একটি বলবাহী কণার মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

পূর্বকথা

প্রাচীনকালে গ্রিকদের ধারণা ছিল, মহাবিশ্বে সব পদার্থের মূল একক অ্যাটম। এর অর্থ অবিভাজ্য। প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিতেরা এই ক্ষুদ্র এককের নাম দেন পরমাণু। তবে পরমাণু কীভাবে কাজ করে, তা ১৮ শতকের আগপর্যন্ত বোঝা যায়নি। এককালে রাসায়নিক বিক্রিয়া ব্যাখ্যার সুবিধার্থে পরমাণুর ধারণা মেনে নিয়েছিলেন অনেক বিজ্ঞানী। কিন্তু এর সত্যিকারের অস্তিত্ব সম্পর্কে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী

১৮৯৭ সালে ইলেকট্রন কণা আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ পদার্থবিদ জে জে টমসন। এরপর প্রথমবার পরমাণুর সম্ভাব্য গঠনের মডেল দেন তিনি। তাঁর মতে, পুডিংয়ের ওপর কিশমিশ যেভাবে ছড়িয়ে থাকে, সেভাবে নিউক্লিয়াসের ওপর ইলেকট্রন থাকে। এই মডেলকে বলা হয় প্লুম-পুডিং মডেল। তবে অচিরেই এ মডেল ভুল প্রমাণিত হয়।

এর কিছুদিন পর স্বর্ণপাত পরীক্ষায় ব্রিটিশ-নিউজিল্যান্ডীয় বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড দেখতে পান, পরমাণুর ভেতর ফাঁকা জায়গা রয়েছে। বেশির ভাগ ধনাত্মকভাবে চার্জিত কণা সোজা স্বর্ণপাতের ভেতর দিয়ে চলে যেতে দেখা গেল। অল্প কিছু কণা উল্টো দিকে ফিরে এসেছিল। এতে বোঝা গেল, পরমাণুর কেন্দ্র দৃঢ় এবং তা ধনাত্মক চার্জযুক্ত। কাজেই ইলেকট্রনগুলোর অবস্থান অবশ্যই নিউক্লিয়াস থেকে দূরে এবং এ দুইয়ের মাঝখানে ফাঁকা জায়গাও থাকতে হবে। তা না হলে স্বর্ণপাতের ভেতর দিয়ে কণা চলে যেতে পারত না।

এটি ব্যাখ্যা করতে ১৯১৩ সালে ডেনিশ বিজ্ঞানী নিলস বোর একটি পারমাণবিক রেখাচিত্র প্রকাশ করেন। তাতে দেখালেন, নিউক্লিয়াসের চারপাশে ইলেকট্রনগুলো ঘুরছে।

ইলেকট্রন

পরমাণুর ঋণাত্মক চার্জধারী অতিপারমাণবিক কণা। এদের e− প্রতীক দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কণা পদার্থবিজ্ঞানমতে, এটা একধরনের লেপ্টন কণা। এর ভর প্রায় 9.109×10−31। বৈদ্যুতিক চার্জ −1 e বা −1.602176634×10−19 কুলম্ব।

প্রোটন

গ্রিক শব্দ প্রোটন। এর অর্থ প্রথম। প্রতীক p+। ধনাত্মক চার্জধারী কণা। প্রোটনের ভর ইলেকট্রনের ভরের প্রায় ১৮৩৬ গুণ। চার্জ +1 e বা 1.602176634×10−19 কুলম্ব।

নিউক্লিয়াস

পরমাণুর দৃঢ় কেন্দ্রস্থল হলো নিউক্লিয়াস। লাতিন এই শব্দের অর্থ ছোট্ট বাদাম। এতে প্রোটন ও নিউট্রন গুচ্ছাকারে থাকে। পরমাণুর সিংহভাগ ভর থাকে নিউক্লিয়াসে।

নিউট্রন

‘নিউট্রাল’ বা ‘চার্জ নিরপেক্ষ’ শব্দ থেকে নিউট্রন শব্দের উৎপত্তি। এর চার্জ ০। প্রতীক n বা n0। নিউট্রনের ভর প্রোটনের চেয়ে সামান্য বেশি। ১৯৩২ সালে বিজ্ঞানী জেমস চ্যাডউইক নিউট্রন আবিষ্কার করেন।

কক্ষপথ

নিউক্লিয়াসের চারপাশে ইলেকট্রন যে পথে ঘুরপাক খায়, তাকে বলা হয় কক্ষপথ বা শেল।

পারমাণবিক সংখ্যা

কোনো পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা বা অ্যাটমিক নম্বর দিয়ে তার প্রোটন কতগুলো, তা বোঝা যায়।

ভরসংখ্যা

পরমাণুর ভরসংখ্যা দিয়ে তার নিউট্রন ও প্রোটনের মোট সংখ্যা বোঝা যায়।

সারসংক্ষেপ

ধনাত্মক প্রোটন ও চার্জ নিরপেক্ষ নিউট্রন থাকে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে। এদের আপেক্ষিক ভর ১। ঋণাত্মক ইলেকট্রনের ভর প্রোটনের চেয়ে ১৮৩৬ ভাগ কম। নিউক্লিয়াসের চারপাশে থাকে ইলেকট্রন।

সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস, উইকিপিডিয়া