৯০ শতাংশ মাইক্রোপ্লাস্টিক দূর করতে পারে যে দুটি প্রাকৃতিক উদ্ভিদ

ঢেঁড়স রান্না করে খেয়েছেন নিশ্চয়ই! আঠালো ও পিচ্ছিল হওয়ায় এই উদ্ভিদ যেমন অনেকে পছন্দ করেন, তেমনি একই গুণের কারণে অনেকে অপছন্দও করেন। (অবশ্য আমরা সবজি বললেও বৈজ্ঞানিকভাবে ঢেঁড়সকে ‘ফল’ গণ্য করা হয়।) মেথিরও রয়েছে একই বৈশিষ্ট্য। মেথি পানিতে ভেজালে পানি জেলির মতো আঠালো হয়ে যায়। এই জিনিস অনেকেই স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন উপকারিতার জন্য খান। যাহোক, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, পানিতে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক ৯০ শতাংশ দূর করতে পারে ঢেঁড়স ও মেথির এই আঠালো ও পিচ্ছিল রস। এই দুটি প্রাকৃতিক উদ্ভিদের নির্যাস মাইক্রোপ্লাস্টিক আটকে রাখতে পারে।

গবেষকেরা দেখেছেন, ঢেঁড়স ও মেথির নির্যাস সমুদ্রের লোনা পানি, মিঠা পানি এবং ভূগর্ভস্থ পানি থেকে শতকরা ৯০ ভাগ পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক সরিয়ে ফেলতে পারে। গবেষণাটি সম্প্রতি যুক্ররাষ্ট্রের এসিএস ওমেগা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের টার্লেটন স্টেট ইউনিভার্সিটির রজনী শ্রীনিবাসন এবং তাঁর গবেষক দল অনেকদিন ধরে পানি থেকে দূষক পদার্থ সরানোর নিরাপদ ও উদ্ভিদভিত্তিক উপায় খুঁজছিলেন। শুরুতে তাঁরা ঢেঁড়স, মেথি ও তেঁতুলের নির্যাস পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় দেখতে পান, এই প্রাকৃতিক পলিমারগুলো মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণাগুলোকে আঁকড়ে ধরে। ফলে সেগুলো একত্রিত হয়ে পানির তলায় জমা হয়। এতে পানি থেকে সহজে মাইক্রোপ্লাস্টিক আলাদা করা যায়।

২০২২ সালে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির এক সভায় শ্রীনিবাসন মিঠা পানি ও সমুদ্রের পানিতে উদ্ভিদের নির্যাসের সফল পরীক্ষার কথা জানিয়েছিলেন। এরপর গবেষকেরা আরও নানা উপায়ে পানিতে ঢেঁড়স ও মেথির নির্যাস মিশিয়ে পরীক্ষা করে প্রক্রিয়াটি আরও উন্নত করেছেন।

উদ্ভিদের নির্যাসের কার্যকারিতা পানির উৎসের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়েছে। সমুদ্রের পানিতে ঢেঁড়সের কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি ছিল ৮০ শতাংশ। ভূগর্ভস্থ পানিতে মেথি ৮০-৯০ শতাংশ কার্যকর।

প্রথমে ঢেঁড়স কেটে এবং মেথির বীজ ভেঙে দুটি আলাদা পাত্রে সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখেন এই গবেষকেরা। এরপর প্রতিটি দ্রবণ থেকে দ্রবীভূত নির্যাস সংগ্রহ করে শুকিয়ে গুঁড়া তৈরি করেন। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই গুঁড়াগুলোতে পলিস্যাকারাইড রয়েছে। এগুলো প্রাকৃতিক পলিমার।

প্রাথমিকভাবে পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক মেশানো এক লিটার বিশুদ্ধ পানিতে এক গ্রাম গুঁড়া মেশালে মাইক্রোপ্লাস্টিক সবচেয়ে ভালোভাবে আটকে যায়। শুকনো ঢেঁড়স ও মেথির নির্যাস এক ঘণ্টায় যথাক্রমে ৬৭ ও ৯৩ শতাংশ প্লাস্টিক কণা অপসরণ করতে সক্ষম। কিন্তু ঢেঁড়স ও মেথির গুঁড়া মিশিয়ে যদি একই পরিমাণ পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখা যায়, তাহলে ৭০ শতাংশ মাইক্রোপ্লাস্টিক দূর করতে পারে। প্রাকৃতিক এই পলিমারগুলো পানি পরিশোধনে ব্যবহৃত কৃত্রিম পলিঅ্যাক্রিলামাইড পলিমারের চেয়ে অনেক ভালো কাজ করেছে।

তবে গবেষকেরা এখানেই থেমে থাকেননি। এরপর তাঁরা আসল মাইক্রোপ্লাস্টিক মিশ্রিত দূষিত পানিতে উদ্ভিদের নির্যাস পরীক্ষা করেছেন। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বিভিন্ন জলাশয় থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে এনেছিলেন। উদ্ভিদের নির্যাসের কার্যকারিতা পানির উৎসের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়েছে। সমুদ্রের পানিতে ঢেঁড়সের কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি ছিল ৮০ শতাংশ। ভূগর্ভস্থ পানিতে মেথি ৮০-৯০ শতাংশ কার্যকর। আর মিঠা পানিতে ঢেঁড়স ও মেথির মিশ্রণ ৭৭ শতাংশ কার্যকর। গবেষকদের ধারণা, প্রতিটি পানির নমুনায় বিভিন্ন ধরন ও আকারের মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকায় প্রাকৃতিক পলিমারগুলোর কার্যকারিতা আলাদা হয়েছে।

বর্তমানে বর্জ্য পানি পরিশোধনে দূষক সরানোর জন্য পলিঅ্যাক্রিলামাইড ব্যবহৃত হয়। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, ঢেঁড়স ও মেথির নির্যাস এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, এগুলো জৈব পচনশীল ও বিষমুক্ত।

সূত্র: সাইটেক ডেইলি ও আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি