ভরপেট খাওয়াদাওয়া হয়েছে। শেষ পাতে একটু মিষ্টি পড়তেই ষোলোকলা পূর্ণ হয়। খাওয়া শেষে যখন পরম তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন, তখন আপনার সঙ্গে আনন্দ উদযাপনে যুক্ত হয়েছে দাঁতের চারপাশ জুড়ে থাকা প্রতিবেশিরা। অর্থাৎ খুদে ব্যাকটেরিয়ার দল। চিনির আগমনে তাদের মনেও লেগেছে খুশির রং।
চিনি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার খাবার যোগায়, অ্যাসিড তৈরি করে। এই অ্যাসিড দাঁতের এনামেলের অবস্থা খারাপ করে দেয়। ফলাফল, ক্যাভিটি কিংবা প্লাক বা পাথরের আবরণের মতো জমে যায়। ভয়ংকর যন্ত্রণা! এ কারণেই চিনি খাওয়ার সময় হিসেব করে খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। চিনি যে দাঁতের জন্য খারাপ, সেটা ঠিক। কিন্তু চিনি তো আর একরকম না। নানা ধরনের চিনির সবই কি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর? আসলে তা নয়। একটা উদাহরণ দেখা যাক।
মিল্ক চকলেটে থাকে চকলেট, দুধ ও চিনির মিশ্রণ। এটা দাঁতের জন্য বেশ ক্ষতিকর। ডার্ক চকলেটে আবার চকলেট ও চিনি থাকে, কিন্তু দুধ থাকে না। অতিরিক্ত হিসেবে থাকে পলিফেলন। এ কারণে ডার্ক চকলেট মুখের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। পলিফেলন যৌগটি ব্যাকটেরিয়াকে চিনি থেকে অ্যাসিড তৈরিতে বাধা দেয়। দাঁতের এনামেল তাই সুস্থ থাকে। তাই মিষ্টি খাওয়া মানেই দাঁতের জন্য ক্ষতিকর, এটা ঠিক নয়। প্রশ্ন হলো, কী ধরনের মিষ্টি খাচ্ছেন?
চিনি ছাড়াও মিষ্টির একটা বড় উৎস নানা জাতের ফল। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিশোধিত চিনির চেয়ে ফলমূলের মিষ্টি সবসময়ই ভালো। এমনকি কিছু ফল খাওয়ার সময় দাঁত আরও পরিষ্কার হয়। কারণ ওসব ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণ আঁশ বা ফাইবার। যেমন আপেল, স্ট্রবেরি, ডালিম ইত্যাদি। এসব ফল চিবানোর সময় ফলের আঁশ দাঁতে ঘষা খায়। দাঁতের চারপাশে পাথর বা প্ল্যাক তৈরিতে বাধা দেয়। সেই সঙ্গে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবারকণা দূর করতে সাহায্যে করে।
আবার সব ফল কিন্তু দাঁতের জন্য উপকারি নয়। কমলা, আঙুর, লেবুর মতো সাইট্রিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ ফল দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করতে পারে। তাই এসব ফল খাওয়ার পরপরই অ্যাসিডের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে সঙ্গে সঙ্গে মুখ ধুয়ে ফেলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ফল ও শাকসবজিতে পাওয়া যায় জাইলিটল। জাইলিটল মূলত একধরনের রাসায়নিক যৌগ। এর সাধারণ সংকেত, C5H12O5 বা HO(CH2)(CHOH)3(CH2)OH। দাঁতের স্বাস্থ্যরক্ষায় এর ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চিনিতে থাকা আমিষ ও শর্করা দাঁতের ক্যাভিটির জন্য জ্বালানির মতো কাজ করে। আর এ ঘটনা ঘটতে বাধা দেয় জাইলিটল। এটা প্রাকৃতিকভাবে মুখের লালাগ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত করে। ফলে, মুখে লালার পরিমাণ বেড়ে মুখ আর্দ্র হয়ে যায়। দূর করে শুকনো অবস্থায় তৈরি দুর্গন্ধ। আর খাবারের উচ্ছিষ্ট থেকে তৈরি অ্যাসিড কিংবা চিনির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেয় দাঁতকে।
তাই মিষ্টি মানেই দাঁতের জন্য ক্ষতিকর—এটা ভুল ধারণা। সাধারণ চিনি বা চিনির তৈরি মিষ্টি খাবার দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। তবে তা এড়ানোরও উপায় আছে। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখা, চিনি জাতীয় খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার; যেমন শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি পরিমাণ মতো খাওয়া—এরকম কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকলেই মিষ্টি আর দাঁতের শত্রু হয়ে উঠবে না, এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: হেলথ লাইন ডট কম, উইকিপিডয়া, কিডস হেলথি টিথ