বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যাসিড কোনটি? সেটা কতটা ভয়ংকর?
সাইকো ক্রাইম জনরার মুভির একটা ভয়ংকর ও বীভৎস দৃশ্যের কথা কল্পনা করুন। মনে করুন, একটা শরীর বা মৃতদেহকে নিমিষেই গলিয়ে অদৃশ্য করে দেওয়া হলো বাথটাবে। ফলে মৃতদেহের আর কোনো চিহ্নই অবশিষ্ট থাকল না। এমন বীভৎস কাজে যে অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়, তার নাম ফ্লোরোঅ্যান্টিমনিক অ্যাসিড। একেই বলা হয়, এখন পর্যন্ত পাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর ও শক্তিশালী অ্যাসিড।
ফ্লোরোঅ্যান্টিমনিক অ্যাসিড আসলে কী
এই অ্যাসিড তৈরি হয় দুটি রাসায়নিক উপাদানের সাহায্যে। হাইড্রোজেন ফ্লোরাইড (HF) এবং অ্যান্টিমনি পেন্টাফ্লোরাইড (SbF₅)। এই দুটি উপাদান একত্রে মিশে সুপার অ্যাসিড ফ্লোরোঅ্যান্টিমনিক অ্যাসিড তৈরি করে। এই অ্যাসিড অন্য অ্যাসিডের সঙ্গে মেশালে মিশ্রণের সক্রিয়তা আরও বাড়ে। অর্থাৎ অ্যাসিড আরও শক্তিশালী হয়।
কতটা শক্তিশালী
কোনো অ্যাসিড বিক্রিয়ায় কত দ্রুত প্রোটন (হাইড্রোজেন আয়ন H⁺) দান করে, সে হিসেবে তার সক্রিয়তা বিচার করা হয়। এটি মাপা হয় পিএইচ স্কেলে ০ থেকে ৭-এর মধ্যে। পানি নিরপেক্ষ, এর পিএইচ মান ৭। অন্যদিকে সালফিউরিক অ্যাসিড খুবই শক্তিশালী, তাই এর পিএইচের মান শূন্য।
আর ফ্লোরোঅ্যান্টিমনিক অ্যাসিড সালফিউরিক এসিডের তুলনায় ১০ কোয়াড্রিলিয়ন গুণ শক্তিশালী। এক কোয়াড্রিলিয়ন মানে ১-এর পরে ১৫টি শূন্য। প্রচলিত বাংলায় এক কোয়াড্রিলিয়ন সমান ১ লাখ কোটি।
এই অ্যাসিড এতই সক্রিয় যে কাচ ও বিভিন্ন ধাতুকে গলিয়ে অদৃশ্য করে ফেলতে পারে। রাসায়নিকভাবে বলতে গেলে, ফ্লোরোঅ্যান্টিমনিক অ্যাসিডের প্রোটনেটিং ক্ষমতা এত বেশি যে, এটি এমন যৌগগুলোকেও প্রোটনেট করতে পারে, যেগুলো সাধারণত প্রোটন গ্রহণ করে না। এ কারণে একে হাইপারঅ্যাসিডও বলা হয়।
এই অ্যাসিড এতই সক্রিয় যে কাচ ও বিভিন্ন ধাতুকে গলিয়ে অদৃশ্য করে ফেলতে পারে। রাসায়নিকভাবে বলতে গেলে, ফ্লোরোঅ্যান্টিমনিক অ্যাসিডের প্রোটনেটিং ক্ষমতা এত বেশি যে, এটি এমন যৌগগুলোকেও প্রোটনেট করতে পারে, যেগুলো সাধারণত প্রোটন গ্রহণ করে না।
কীভাবে সংরক্ষণ করা হয়
এটি প্লাস্টিক, কাঁচ বা বিভিন্ন ধাতুকে সহজেই দ্রবীভূত করতে পারে। তাই একে টেফলনের প্রলেপ দেওয়া বিশেষ ধরনের পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। নির্দিষ্ট কিছু গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয় এই অ্যাসিড। এই অ্যাসিডকে কার্বোক্যাটায়ন গবেষণায়, অর্থাৎ ধনাত্মক চার্জযুক্ত কার্বন পরমাণু তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য আয়নীকরণ, পলিমারাইজেশন ইত্যাদি বিক্রিয়ায়ও ব্যবহার করা যায়।
সাধারণ গবেষণাগারে এই অ্যাসিড ব্যবহার করা যায় না। উন্নত গবেষণাগারেই বিশেষ অনুমোদন সাপেক্ষে শুধু প্রশিক্ষিত গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরা এই অ্যাসিড ব্যবহার করতে পারেন।
গবেষণাগারে এই অ্যাসিড ব্যবহারের সময় অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়। কারণ এটি মানবদেহের ত্বকে খুব সামান্য পরিমাণে লাগলেও সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে গভীর ক্ষত তৈরি হবে। কেবল বাহ্যিকভাবে নয়, অভ্যন্তরীণ টিস্যুও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এই অ্যাসিড নিয়ে কাজ করার সময় ব্যবহার করতে হয় কেমিক্যাল রেসিস্ট্যান্ট গ্লাভস, মাস্ক, গগলস এবং বিশেষভাবে তৈরি স্যুট। এগুলো ব্যবহারের পরেও এর ধোঁয়ায় শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই সবসময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।