নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস
প্রাচীনকাল থেকেই ইউরেনিয়াম অক্সাইডের ব্যবহার ছিল বলে সম্প্রতি প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেকালে সিরামিকে হলুদ রঙ দিতে এ অক্সাইডের ব্যবহার ছিল। তবে মৌলটি সনাক্ত করার কৃতিত্ব জার্মান রসায়নবিদ মার্টিন হেনরিক ক্লাপথের। ১৭৮৯ সালে প্লিচবেন্ড নামের এক খনিজ নাইট্রিক এসিডে গলান বা দ্রবীভূত করেন তিনি। এরপর সেটি সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডে নিস্ক্রিয় করে হলুদ একটি পদার্থ পান। এটি অনাবিস্কৃত কোন মৌলিক পদার্থ বলে অনুমান করেন ক্লাপথ। এরপর এই হলুদ পদার্থকে কয়লার সাথে তাপ দিয়ে কালো রঙের একটি পাউডার পাওয়া গিয়েছিল। এটিই নতুন কোন ধাতু বলে ভেবে বসেন তিনি। অবশ্য সেটি আসলে ছিল ইউরেনিয়ামের একটি অক্সাইড। যাইহোক, এবার নতুন ধাতুর নাম দেওয়ার পালা।
এ ঘটনার মাত্র ৮ বছর আগে ইউরেনাস নামের একটি গ্রহ আবিষ্কার করেছেন উইলিয়াম হার্শেল। গ্রিকদের আকাশের দেবতার নামে গ্রহটির নামকরণ করা হয়েছিল। সেসময় নতুন আবিষ্কৃত গ্রহের নামেও নতুন মৌলের নাম দেওয়াটা ফ্যাশনের মত হয়ে গিয়েছিল। তাই ইউরেনাসের সাথে মিল করে মৌলটির নাম দেওয়া হল ইউরেনিয়াম।
নিউক্লিয়াসে ঠাসাঠাসি অবস্থায় থাকা ৯২টি প্রোটনযুক্ত ইউরেনিয়ামকে বলা হয় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট সবচেয়ে বড় মৌল। অবশ্য এই সবচেয়ে বড় মৌলটি ইউরেনিয়ামে আকরিক মজুত আছে এমন খনিতে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়, তবে তার পরিমাণ খুবই সামান্য। নিউক্লিয়ার শক্তি হিসেবে ইউরেনিয়াম থেকে বিপুল পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়। এক কিলোগ্রাম ইউরেনিয়াম জ্বালানি থেকে যে শক্তি পাওয়া যায়, তা ১৫০০ টন কয়লা থেকে পাওয়া শক্তির সমতূল্য।
এ মৌল ব্যবহার করেই ১৮৯৬ সালে রেডিওঅ্যাকভিটি বা তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী হেনরি বেকেরেল। ইউরেনিয়াম পরমাণুতে ৯২টি প্রোটন, ৯২টি ইলেকট্রন থাকে। এর বেশ কিছু আইসোটপ আছে, যাদের অধিকাংশই অস্থিতিশীল। এদের মধ্যে ইউরেনিয়াম ২৩৮ ও ইউরেনিয়াম ২৩৫ বেশি পরিচিত। এ দুটি আইসোটপে নিউট্রনের পরিমাণ যথাক্রমে ১৪৬ ও ১৪৩। ইউরেনিয়ামের সবগুলো আইসোটোপ অস্থিতিশীল, স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে হালকা মৌলে রূপান্তরিত হয় এবং প্রক্রিয়ায় শক্তি নিঃসৃত হয়। ইউরেনিয়ামের অর্ধজীবন ১৫৯,২০০ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন বছর।
তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম দিয়ে বানানো যুদ্ধক্ষেত্রে প্রথম ব্যবহৃত পারমাণবিক বোমাটির নাম ছিল লিটল বয়। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় বোমাটি ফেলে একটি জনবসতিকে আক্ষরিক অর্থেই স্রেফ ছাই বানিয়ে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই হামলায় অন্তত ৭৫ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল এবং ৫০ হাজার ভবন ধসে পড়েছিল। পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল আরও লাখ লাখ মানুষ।
বর্তমানে শুধু পারমাণবিক অস্ত্রই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন, চিকিৎসাসহ মানবকল্যানেও ব্যবহার করা হচ্ছে ইউরেনিয়াম।