কুরিয়াম নামটি যেভাবে পেলাম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লেন সিবর্গের নেতৃত্বাধীন একটি দল আমেরিসিয়াম মৌলের সঙ্গে কুরিয়ামও আবিষ্কার করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫২ সেমি (৬০ ইঞ্চি) সাইক্লোটন ব্যবহার করে প্লুটোনিয়াম পরমাণুতে তীব্র বেগে নিউট্রন কণা ছুড়েছিলেন তাঁরা। এতে প্লুটোনিয়ামের নিউক্লিয়াসে অতিরিক্ত নিউট্রন যুক্ত হয়। এতে তৈরি হয়েছিল কিছু আমেরিসিয়াম এবং কিছু কুরিয়াম (পারমাণবিক সংখ্যা ৯৬) মৌল।

অ্যাকটিনাইড সিরিজের ঠিক ওপরে ল্যানথানাইড সিরিজের মৌলটির নাম গ্যাডোলিনিয়াম। ফিনিস বিজ্ঞানী জোহান গ্যাডোলিনের প্রতি সম্মান জানিয়ে মৌলটির জন্য এ নাম বেছে নেওয়া হয়েছিল। তাই একইভাবে অ্যাকটিনাইড সিরিজের নতুন আবিষ্কৃত মৌলের জন্যও বেছে নেওয়া হয়েছিল দুজন বিজ্ঞানীর নাম। তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছিলেন ফরাসি কুরি দম্পতি মেরি কুরি ও পিয়েরে কুরি। তাঁদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এ মৌলের নাম রাখা হয় কুরিয়াম। আর এর প্রতীক দেওয়া হয় Cm। তবে বলে রাখা ভালো, শুরুতে মৌলটির নাম দেওয়া হয়েছিল ডেলিরিয়াম, লাতিন ভাষায় যার অর্থ পাগলামি।

এখন পর্যন্ত কুরিয়ামের ২১টি আইসোটোপের কথা জানা গেছে। এদের মধ্যে বেশি পরিচিত Cm-242 এবং Cm-244। এসব আইসোটোপের মধ্যে Cm-247-এর অর্ধজীবন সবচেয়ে বেশি, যা ১৬ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৬০ লাখ বছর। কুরিয়াম সবচেয়ে বিরল আর দামি মৌল। সে কারণে দৈনন্দিন জীবনে এর ব্যবহারও কম। তবে চন্দ্র ও মঙ্গল অভিযানে পাঠানো রোভারে পাথর ও মাটি বিশ্লেষণের জন্য এক্স-রে স্পেকট্রোমিটারে এটি ব্যবহার করা হয়। আবার কুরিয়াম অতিরিক্ত আলফা কণার নিঃসরণ করে। সে কারণে ভবিষ্যতে ক্ষুদ্রাকার পারমাণবিক অস্ত্রে এর ব্যবহার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন অনেকে।