আমি হব বিজ্ঞানী

চারপাশের সবকিছু জানতে–বুঝতে চাওয়ার নামই আসলে বিজ্ঞান। তারুণ্যের প্রধান শক্তি এই বিজ্ঞান। এ দুটি বিষয় এক সুতায় গাঁথা। মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা এই বন্ধন দৃঢ়তর করতে চায়। নিয়মিত বিজ্ঞানচিন্তা পড়লে আপনি নিজেই বলবেন আমি হব বিজ্ঞানী।

প্রতিটি শিশু–কিশোর–তরুণের অন্তরে রয়েছে সুপ্ত প্রতিভা। আমরা সবাই চাই সেই প্রতিভার বিকাশ। ছয় বছর পার হয়ে বিজ্ঞানচিন্তা আজ সাতে পা রাখল। আগামী বছরগুলো হবে বিজ্ঞানচিন্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, এখন বলা হয় চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগ। সামনের দিনগুলোয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ আরও অনেক কিছু হবে আমাদের জীবন ও জীবিকার অপরিহার্য অংশ। এসব বুঝতে, জানতে না পারলে আমরা পেছনে পড়ে থাকব। আর এগিয়ে যাবে বিশ্ব।

আমরা তো সামনের সারিতে থাকতে চাই। বলা যায়, আজ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা থেকে শুরু করে গুগল—সবখানেই উঁচু স্তরের পদে বাংলাদেশের কোনো না কোনো বিজ্ঞানী অবদান রেখে চলেছেন। তার মানে, আমাদের মেধার অভাব নেই। অভাব বড় কিছু চিন্তা করার সুযোগ ও সুবিধার।

বিজ্ঞানচিন্তা বড় স্বপ্ন দেখার, বড় কিছু চিন্তার ভিত্তি তৈরি করতে চায়। সে জন্যই তরুণদের জন্য সহজ ভাষায়, বিজ্ঞানের কঠিন বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করি। এভাবে যদি বিজ্ঞান সচেতনতা বাড়াতে পারি, তাহলে আমরা আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারব।

এখানে একটা কথা আছে। আমরা সাধারণত মনে করি বিজ্ঞান মানে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান অথবা বিগ ব্যাং বা সিঙ্গুলারিটির মতো জটিল বিষয়গুলো নিয়ে কঠিন তত্ত্বকথা। এটা ঠিক নয়। ভাষার মধ্যেও বিজ্ঞান আছে। অর্থনীতিও বিজ্ঞান ছাড়া অচল। ইতিহাসও বাদ যাবে না। তাই বিজ্ঞান বলতে আমরা বুঝব জ্ঞানের সব শাখা সম্পর্কে সঠিক ও যুক্তিপূর্ণ ধারণা লাভ।

আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে পশ্চাৎপদ ধ্যানধারণা এখনো রয়ে গেছে। এই সব ভুলভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেখানে বিজ্ঞানচিন্তা বড় অবদান রাখছে।

যেমন ধরা যাক ক্রিপ্টোকারেন্সির কথা।

আমরা দেখছি আজ বিশ্বের অনেক দেশ এই আজব মুদ্রা ব্যবহার করছে। দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, শুধু কিছু জটিল সফটওয়্যার ফর্মুলার মধ্যে যার অস্তিত্ব, সেই জিনিসটা কী? আমাদের জানতে বুঝতে হবে। না হলে তো আমরা আধুনিক বিশ্বে অচল হয়ে পড়ব। তাই গত সংখ্যায় আমরা ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছি। সেটা ছিল গত মাসে বিজ্ঞানচিন্তার মলাটকাহিনি। এখন আমাদের তরুণেরা অন্তত বলতে পারবে যে ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে আমরা মোটামুটি একটা ধারণা পেয়েছি।

চলতি অক্টোবর সংখ্যায় আমরা পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞানে যে বিজ্ঞানীরা এ বছর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, তাঁদের গবেষণা ও যুগান্তকারী আবিষ্কার কীভাবে মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছে, তা সহজ ভাষায় লিখেছি। আমাদের তরুণেরা এখন সাহস করে বলতে পারবে আমরা পিছিয়ে নেই।

বিশ্বকাপ ফুটবল, টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে শুরু করে দাবার দুই চালে মাত—সব ধরনের খেলা নিয়েও আমাদের বিজ্ঞানচিন্তা লিখছে। বিজ্ঞান ছড়া, কল্পবিজ্ঞান থেকে শুরু করে, বিজ্ঞান কমিকস—সবই আছে বিজ্ঞানচিন্তায়। আমাদের জীবনের প্রতিটি পরতে বিজ্ঞান। আর সেই সব কথা বিজ্ঞানচিন্তা গুরুত্ব দিয়ে সামনে নিয়ে আসছে।

আর কী চাই। বিজ্ঞানচিন্তা আমাদের তরুণদের বিশ্বমানের বুদ্ধিমত্তা অর্জনে বিশেষ অবদান রাখবে। এই আমাদের প্রত্যাশা।

আব্দুল কাইয়ুম: সম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা