অনুষ্ঠিত হলো ‘ফ্রম রোবট হ্যান্ডস টু ডিএনএ স্ট্র্যান্ডস’ আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা ও রোবট গবেষক লাফিফা জামালের আলোচনায় উঠে আসে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগপৎ পথচলার নানা দিক। গত ১৭ এপ্রিল, বুধবার চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) কার্যালয়ে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
এ আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল। তিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি। তাঁর অনুপ্রেরণায় শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পরিসরে বারবার উজ্জ্বল করেছে বাংলাদেশের নাম। তিনি নিজের পথচলার কথা বলেন, গবেষণার কথা বলেন। এভাবে অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে সাধারণ আলোচনার অনুষ্ঠানের চেয়েও প্রাণবন্ত, অনুপ্রেরণাদায়ক এক আয়োজন।
রোবটিকস কীভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করেন সেঁজুতি সাহা। লাফিফা জামালের আলোচনায় উঠে আসে তাঁর দলের সাম্প্রতিক উদ্ভাবন—আইওটি ব্যবস্থার মাধ্যমে রোগীদের স্যালাইন দেওয়ার প্রযুক্তির কথা। তাঁদের পেটেন্ট করা এ প্রযুক্তি চিকিৎসায় রোবটিকসের প্রয়োগের আদর্শ উদাহরণ। এতে রোগীদের যেমন সুবিধা হবে, তেমনি অনেক সহজ ও উন্নতি হবে চিকিৎসাব্যবস্থা।
রোবটিকস কীভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করেন সেঁজুতি সাহা। লাফিফা জামালের আলোচনায় উঠে আসে তাঁর দলের সাম্প্রতিক উদ্ভাবন—আইওটি ব্যবস্থার মাধ্যমে রোগীদের স্যালাইন দেওয়ার প্রযুক্তির কথা।
আলোচনার পরবর্তী পর্যায়ে উঠে আসে যৌথ গবেষণার কথা। যেমন স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং সময়ের সঙ্গে মাইক্রোবায়োমের (নির্দিষ্ট পরিবেশে বসবাসকারী অণুজীবের গুচ্ছ) পরিবর্তনের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করা—এসব ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের মেলবন্ধনে মিলতে পারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান। বিজ্ঞানের অন্য অনেক শাখার ক্ষেত্রেও এ ধরনের যুগ্ম গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সেসব বিষয়ও উঠে আসে আলোচনায়।
আলোচনায় লাফিফা জামাল শুধু বক্তব্যই রাখেননি, দর্শকদের প্রশ্ন করেছেন, তাঁদের কথা শুনেছেন, সিএইচআরএফের গবেষকদের গবেষণার কথা জেনেছেন, মত বিনিময় করেছেন তাঁদের সঙ্গে। এ সময় তিনি যেসব আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণাগারে গিয়েছেন, সেগুলোর সঙ্গে সিএইচআরএফের তুলনা করেন। বলেন, সিএইচআরএফ আসলেই আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার হয়ে উঠেছে।
সেঁজুতি সাহা ও লাফিফা জামাল বৈজ্ঞানিক নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন গুণাবলী নিয়েও আলোচনা করেন। বলেন, নিজেদের মেন্টরিং ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা। এভাবে পরবর্তী প্রজন্মের গবেষকদের তাঁরা বিজ্ঞানের জগতে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তাঁদের যৌথ গবেষণার সম্ভাবনার আশাবাদ ব্যক্ত করার মাধ্যমে এ আলোচনা অনুষ্ঠান শেষ হয়।
এর আগে ২০২০ সালে অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা পেয়েছেন অধ্যাপক লাফিফা জামাল এবং অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। সে বছর তাঁরা ছাড়াও আরও আট নারী নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ সম্মাননা পান। এ ছাড়াও বঙ্গমাতা পদক, এশিয়ান সায়েন্টিস্ট-এর সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পাওয়াসহ বেশ কিছু সম্মাননা পেয়েছেন অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশে প্রথম সিঙ্গেল সেল জিনোমিক্স ডাটা সংশ্লেষণ করেছেন চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞানীরা। আর অধ্যাপক লাফিফা জামালের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড দল আন্তর্জাতিক পরিসরে অর্জন করেছে স্বর্ণ ও রৌপ্যপদক। দুজনই বাংলাদেশকে বিজ্ঞান জগতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের কর্মের মাধ্যমে। তাঁদের এ ধরনের আলোচনা তাই নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়, জোগায় অনুপ্রেরণা।