সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো প্রোগ্রামিং বিশ্বকাপ হিসেবে খ্যাত আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার (আইসিপিসি) চূড়ান্ত পর্ব (ওয়ার্ল্ড ফাইনালস)। গত ১০ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, বসুন্ধরার (আইসিসিবি) ৪ নম্বর হলে এ আয়োজনের পর্দা ওঠে। মূল প্রতিযোগিতা চলে পাঁচ ঘন্টা ধরে। সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে রাত পৌনে ৯টায় ঘোষণা করা হয় ফলাফল। প্রথম স্থান অধিকার করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। দ্বিতীয় হয়েছে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়। মোট ৬৯টি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ১৩৭টি দল এবারের আইসিপিসিতে অংশ নিয়েছে। এমআইটির দলটি পাঁচ ঘণ্টায় ১২টি প্রোগ্রামিং সমস্যার মধ্যে সমাধান করেছে ১১টি। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের দলটি ১০টি এবং টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের দলটি ৯টি সমস্যা সমাধান করেছে।
আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম বি পাউচার চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার সফল আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ ও জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি) এবং আইসিপিসি ঢাকার পরিচালক কামরুল আহসান, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমারসহ আরও অনেকে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এক হাজার অতিথি এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন। এটা একটা বড় ব্যাপার। আইসিপিসির ওয়ার্ল্ড ফাইনালস দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই প্রথমবারের মতো হলো।’
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণ করে আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের পথে এগিয়ে চলেছি। চূড়ান্ত পর্ব বাংলাদেশে আয়োজন করার জন্য আইসিপিসি ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ।’
প্রতিযোগিতার পুরোটা সময় বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রোগ্রামিং আগ্রহীরা চোখ রেখেছিলেন লিডবোর্ডে। এই আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। ভেন্যুতে প্রতিযোগিতার সময় দেখা যায় কোনো কোনো দলের পাশে বাড়ছে বেলুনের সংখ্যা। অর্থাৎ সেই দলটির সমাধানের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিটি বেলুন একটি করে সমাধান বোঝাচ্ছে।
আইসিপিসির নিয়ম অনুযায়ী অনুষ্ঠানে শীর্ষ চারটি দল স্বর্ণপদক পায়। এরপর পঞ্চম থেকে অষ্টম রুপা এবং নবম থেকে দ্বাদশ স্থান অর্জনকারী দল পায় ব্রোঞ্জপদক।
শীর্ষ তিন দলের পর চতুর্থ স্থান অর্জন করে এবারে স্বর্ণপদক পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। তারাও ৯টি সমস্যা সমাধান করেছে, তবে সময় নিয়েছে কিছুটা বেশি। তবে এই দলটিই ১১ মিনিটের মাথায় সবার আগে একটি সমস্যা সমাধান করেছিল।
রৌপ্যপদক পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখ, ফ্রান্সের ইকোল নরমাল সুপিরিয়র ডি প্যারিস, যুক্তরাষ্ট্রের কার্নিগিও মিলন ইউনিভার্সিটি ও পোল্যান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়। ব্রোঞ্জ পেয়েছে রাশিয়ার ন্যাশনাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি হায়ার স্কুল অব ইকোনমিকস, সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিয়েতনামের ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (ভিএনইউ)।
স্বাগতিক বাংলাদেশের আট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮টি দল চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ৫১তম এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৫৬তম স্থান অর্জন করে। দুটি দলই চারটি করে সমস্যার সমাধান করে। এ ছাড়া বাকি ছয়টি দল বিশেষ সম্মাননা (অনারেবল মেনশন) পেয়েছে। এ দলগুলো হলো আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এশিয়া মহাদেশে চতুর্থ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস অনুষ্ঠিত হলো। আয়োজন শুরু হয়েছিল ৬ নভেম্বর। বাংলাদেশে আয়োজক হিসেবে ছিল সরকারের আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। স্বাগতিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ইউএপি।