ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড এশিয়া-প্যাসিফিক ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের তিন পদক
ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের শিক্ষর্থীরা মোট তিনটি পদক পেয়েছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর, রোববার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফিউচার ইঞ্জিনিয়ার্স ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। একই সঙ্গে পেয়েছে দুটি বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার। ২৫ টি দেশের ১৬০টি দল এখানে অংশ নিয়েছে।
অলিম্পিয়াডে ফিউচার ইঞ্জিনিয়ার্স সিনিয়র বিভাগে অংশ নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের আনাস বিন আজিম ও রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সৈয়দ মো. মহিউদ্দিন সামির দল টিম ‘প্লেডিট্রন’। এই দলটি ডিজাইন ইনোভেশন পুরস্কারও জিতেছে।
বিজয়ী আনাস বিন আজিম জানিয়েছে, ‘হোটেলের লবিতে পুরো রাত জেগে অনুশীলনের পর এই অর্জন আমাদের জন্য সত্যিই বিশেষ এক অনুভূতি। প্রতিটি মুহূর্তের পরিশ্রম যেন আজ সার্থক হয়েছে। এই পুরস্কার শুধু আমাদের নয়, বরং বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন এবং সম্ভাবনার প্রতীক।’
অন্যদিকে ফিউচার ইনোভেটরস সিনিয়র বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে স্টার্টআপ আইডিয়া পুরস্কার জিতেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবরার আবির এবং ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের আ জ ম ইমতেনান কবিরের দল ‘সাফ এআই’।
বাংলাদেশ দলের সঙ্গে দলনেতা হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন ও ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক অধ্যাপক আসিফ ইকবাল। তিনি দলের সব সদস্যকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘যাত্রাপথের ঝামেলা সত্ত্বেও আমাদের শিক্ষার্থীদের এই জয় অসাধারণ। বিশেষ করে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের রোবট উপকরণের ঘাটতি রয়েছে। এমনকি আসার পথে চীনে ব্যাটারিগুলো রেখে দেওয়ার পরও নতুন করে সবকিছু সংযোজন করে তারা দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে লড়াই করেছে।’
এর আগে, গত ১৪ জুন বাংলাদেশ দল নির্বাচনের জন্য আয়োজিত হয় জাতীয় পর্ব। সেখানে ২৬টি দল অংশ নেয়। এই পর্বে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরাই দেশের হয়ে বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করছে। নির্বাচিত ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বীসহ মোট ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ দল ১৭ সেপ্টেম্বর ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় পৌঁছায়। এরপর শিক্ষার্থীরা ১৮-২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নানা ধাপে প্রতিযোগিতা অংশ নেয়।
এই আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশীপ মোট আটটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে তিনটি ক্যাটাগরিতে চারটি দল অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ফিউচার ইনোভেটরস জুনিয়র ক্যাটাগরিতে একটি দল ও সিনিয়র ক্যাটাগরিতে একটি দল এবং ফিউচার ইঞ্জিনিয়ার্স ক্যাটাগরি ও রোবোস্পোর্টস ক্যাটাগরিতে একটি করে দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ছিলেন একজন দলনেতা, একজন মেন্টরসহ ২ জন দলীয় সহযোগী। রোবোস্পোর্টস বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে টিম অটোক্রেটসের ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত এইচ রহমান, আন-নাফিউ ও মুয়ায ইবনে বাসার। রোবোস্পোর্টস বিভাগের এই দলটি প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাদ পড়ে যায়। এ ছাড়া ফিউচার ইনোভেটরস জুনিয়র বিভাগে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয় দুই সদস্যের দল টিম রোবোক্লিন। এই দলে ছিল চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের আকিদ ইকবাল হক ও ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট হাই স্কুলের আকিব সিরাজী।
বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক ও ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এই আয়োজনের বাংলাদেশ পর্ব আয়োজিত হয়। বাংলাদেশ পর্বের আয়োজনের সহযোগী হিসেবে ছিল ক্রিয়েটিভ আইটি এবং ব্রেইন স্টেশন ২৩।