বিজ্ঞানচিন্তার আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বিজ্ঞানে নোবেল বক্তৃতা
অনুষ্ঠিত হলো বিজ্ঞানে নোবেল বক্তৃতা ২০২৫। আজ ৬ ডিসেম্বর, শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত চলে এই বক্তৃতা। এর আয়োজক দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা।
‘বিজ্ঞানে নোবেল ২০২৫’ শিরোনামে আয়োজিত এ বক্তৃতায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের ইমিউনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান রোজী সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মিঠুন সরকার এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সেন্টারের পরিচালক ও ইসিই বিভাগের অধ্যাপক মাহ্দী রহমান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইউবির ফিজিক্যাল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ও বিজ্ঞানচিন্তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আরশাদ মোমেন এবং বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। আরও উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার এবং সহসম্পাদক কাজী আকাশসহ অনেকে।
২০২৫ সালে বিজ্ঞানের তিন বিভাগে নোবেল পেয়েছেন নয়জন বিজ্ঞানী। কেন তাঁদের নোবেল দেওয়া হলো, বিজ্ঞান বা মানবসভ্যতার ইতিহাসে তাঁদের আবিষ্কারের ভূমিকা কী, কেন এই গবেষণাগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ—এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয় এই বিজ্ঞান বক্তৃতায়।
শুরুতে মঞ্চে আসেন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। তিনি তাঁর সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। আজকের তরুণেরা যদি বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহী না হয়, তাহলে দেশ বিজ্ঞানে অনেক পিছিয়ে পড়বে। কারণ, সমাজ গঠনেও বিজ্ঞানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।’
এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অধ্যাপক আরশাদ মোমেন। তিনি শুরুতে বিজ্ঞানচিন্তার প্রয়াত উপদেষ্টা রেজাউর রহমানকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিজ্ঞানে তত্ত্ব অনেক সহজ, কিন্তু আমাদের মূল দুর্বলতা গাণিতিক যোগ্যতায়। শুধু তত্ত্ব নয়, গাণিতিক দিক থেকেও এগিয়ে থাকতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের খাতে সিংহভাগ বাজেট প্রযুক্তি খাতে দেওয়া হয়। বিজ্ঞান খাতে বাজেট স্বল্পতায় বিজ্ঞানচর্চা পিছিয়ে পড়ছে। তাই বিজ্ঞানের উন্নয়নের জন্য বেশি বাজেট প্রণয়ন করা উচিত।’
তিনি বিজ্ঞানের গবেষণা এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানচিন্তাকে গোলটেবিল বৈঠক করার পরামর্শ দেন।
এরপর শুরু হয় নোবেল নিয়ে মূল বক্তৃতা। প্রথমেই চলতি বছরের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল নিয়ে সহজ ভাষায় আলোচনা করেন অধ্যাপক রোজী সুলতানা। তিনি বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স বিষয়ে নোবেল দেওয়া হয়েছে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা ইমিউন সিস্টেমকে নিজস্ব টিস্যু আক্রমণ থেকে বিরত রাখে। এই আবিষ্কার ইমিউন সিস্টেমের কাজ বুঝতে সাহায্য করে। বিশেষ করে এটি কীভাবে নিজস্ব টিস্যুকে আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখে, সে সম্পর্কে ধারণা দেয়।
আর এই পেরিফেরাল টলারেন্স বজায় রাখে ‘রেগুলেটরি টি-সেল’ বা ‘ট্রেগ’ (Treg)। এই সেল অন্যান্য টি-সেলের অতিরিক্ত কার্যকলাপ রোধ করে দেহকে রক্ষা করে। অর্থাৎ ট্রেগ হলো ইমিউন সিস্টেমের ব্রেক বা নিয়ন্ত্রণকারী। এই আবিষ্কার ক্যানসার চিকিৎসা, অঙ্গ স্থাপন এবং অটোইমিউন রোগ নিয়ন্ত্রণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এরপর অধ্যাপক মিঠুন সরকার রসায়নে নোবেল নিয়ে বলেন, ‘এবার রসায়নে নোবেল দেওয়া হয়েছে এমওএফ (MOFs) বা মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কসের ওপর। এই আবিষ্কার শুধু গবেষণায় নয়, বাণিজ্যিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাটালিস্ট বা ড্রাগ ডেলিভারিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ইদানীং সমুদ্রে তেলের কনটেইনার থেকে তেল পড়ে পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তাই পানি থেকে তেল আলাদা করার জন্য এমওএফ ব্যবহার করা হয়।’
আলোচনার পাশাপাশি তিনি জৈব-ধাতব রসায়নের বিক্রিয়া কীভাবে হয়, তা স্লাইড দেখিয়ে উপস্থাপন করেন।
এরপর অধ্যাপক মাহ্দী রহমান চৌধুরী পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং এবং ইলেকট্রিক সার্কিট এনার্জি কোয়ান্টাইজেশনের ওপর নোবেল দেওয়া হয়েছে। এই আবিষ্কারের মাধ্যমে উন্মোচিত হয়েছে সুপার কন্ডাক্টিংয়ের নতুন দিগন্ত। এটা কোয়ান্টাম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত দর্শকদের জন্য ছিল কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন। কুইজ শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার মাধ্যমে এই আয়োজন শেষ হয়। আয়োজনে সঞ্চালনা করেন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদনা দলের সদস্য উচ্ছ্বাস তৌসিফ। কুইজ পর্ব পরিচালনা করেন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদনা দলের আরকে সদস্য শিবলী বিন সারওয়ার।