আন্তর্জাতিক ক্রু অ্যাওয়ার্ড পেল বাংলাদেশ

তৃতীয় আন্তর্জাতিক কিবো রোবট প্রোগ্রামিং চ্যালেঞ্জে ‘ক্রু অ্যাওয়ার্ড’ পেল বাংলাদেশ দল। গত ২৯ অক্টোবর ২০২২, শনিবার স্টেমএক্স-৩৬৫ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল ‘এনিগমা সিস্টেম’ এ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার জিতে নেয়। প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ ২০টিরও বেশি দেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে বাংলাদেশ দল।

এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দল প্রোগ্রামিং করে দেয় রোবট ‘অ্যাস্ট্রোবি’কে। প্রোগ্রামিংয়ের নির্দেশানুযায়ী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের একটি লিক মেরামত করে রোবটটি। এর মাধ্যমে এনিগমা সিস্টেম দ্বিতীয়বারের মতো এই পুরস্কার জিতে নিল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ দলের তত্ত্বাবধায়ক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক খলিলুর রহমান জানান, ‘আমাদের বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা কিবো রোবট প্রোগ্রামিং চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়েছে এবং ক্রু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে, এটি আমাদের জন্য গৌরবের। আমরা যে এতে অংশ নিয়েছি, সেটাই গৌরবের। পুরস্কার পাওয়াটা তো আরও বড় বিষয়। আমরা মহাকাশ নিয়ে ভাবছি, মহাকাশ গবেষণা নিয়ে ভাবছি, এটি নিঃসন্দেহে পরবর্তী প্রজন্মকে প্রেরণা দেবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের এ ধরনের প্রতিযোগিতায় আরও অংশ নেওয়া উচিৎ। তারা সুযোগ পেলে বিশ্বজয় করতে পারে, এই প্রতিযোগিতার ফলাফল আমাদের সে কথাই বলছে।’

 কিবো রোবট প্রোগ্রামিং চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জাক্সা)। এর ফাইনাল বা চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস)। এতে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার তৈরি ‘অ্যাস্ট্রোবি’ রোবটটিকে প্রোগ্রামিং করে দিতে হয়। এই রোবটটি নভোচারীদের নানাভাবে সাহায্য করে। কিবো রোবট প্রোগ্রামিং চ্যালেঞ্জের চূড়ান্ত পর্বের কাজ ছিল এই রোবটটিকে প্রোগ্রাম করে দিয়ে একটি লিক বন্ধ করা।

‘অ্যাস্ট্রোবি’ একটি ‘ফ্রি-ফ্লায়িং’ রোবট। ‘ফ্রি-ফ্লায়িং’ মানে, রোবটটি কোনো নির্দিষ্ট কক্ষপথ বা পথ অনুসরণ করে ওড়ে না, ইচ্ছেমতো যেদিকে খুশি উড়ে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীদের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে এটি। রিমোট কন্ট্রোল ও প্রোগ্রামিং করে দিয়ে এটি পরিচালনা করা যায়। সেই সঙ্গে এটি গবেষণাকাজেও সাহায্য করে। ভবিষ্যতের চন্দ্র অভিযান, মঙ্গলযাত্রা ও অন্যান্য মহাকাশ অভিযানেও এ ধরনের রোবট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলকে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে স্টেমএক্স-৩৬৫। এটি কেমব্রিজভিত্তিক একটি সংস্থা। উন্নয়নশীল দেশে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনবিষয়ক শিক্ষাদান ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে। সংস্থাটি একটি অনলাইনভিত্তিক আইএসএস সিমুলেশন প্ল্যাটফর্মও তৈরি করেছে, যেন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের সহজে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সহজে শেখানো যায়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রোগ্রামিং শেখানো এবং তাদের বিভিন্ন মহাকাশ প্রকল্পে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া।

২০২১ সালে স্টেমএক্স-৩৬৫ এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ কিবো রোবট প্রোগ্রামিং চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় হয়েছিল। এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ধনিয়া বীজ পাঠানো হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। এই বীজ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গবেষণার পাশাপাশি, বীজগুলোর কিছু ফিরে এসেছে দেশে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে আরও গবেষণা করবেন।

এ প্রতিযোগিতার ফলাফল আরও স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিল, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেলে বিশ্বমঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে পারেন। এটি আমাদের জন্য দারুণ আশাজনক।