ক্ষতিকর মিথেন নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীর নতুন প্রযুক্তি

জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীদীপু মালাকার

ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস নিয়ন্ত্রণে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী। ২৬ এপ্রিল, সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান আবেদ চৌধুরী।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন এলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বেসিসের সাবেক সভাপতি ও বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর এবং অমল ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ইশরাত করিম।

মিথেন গ্যাস নিয়ে আলোচনা করছেন আবেদ চৌধুরী
দীপু মালাকার

শুরুতে ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস নিয়ন্ত্রণে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কথা বলেন আবেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পৃথিবী দিন দিন গরম হয়ে উঠছে। এর প্রধান কারণ হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। এর জন্য দায়ী বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস। কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন এবং জলীয় বাষ্পের মতো গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আটকে যায়। এগুলো সম্মিলিতভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস হিসাবে পরিচিত। এসব গ্যাসের কারণেই পৃথিবীর দিন দিন উষ্ণ হয়ে উঠছে। এর মধ্যে অন্যতম মিথেন গ্যাস। অনেক ব্যাকটেরিয়া প্রাকৃতিকভাবে মিথেন তৈরি করে। এই ব্যাকটেরিয়া জলাভূমি ও প্রাণীদের অন্ত্রে বাস করে। তবে মিথেন আসে গবাদিপশু, অর্থাৎ গরু, ছাগল আর মহিষের পেট থেকে। জাবর কাটা এই প্রাণীগুলোর হজম প্রক্রিয়ার সময় ঢেকুর, নিঃশ্বাস ও বর্জ্য ত্যাগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ মিথেন গ্যাস নিঃসরণ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবে প্রতিবছর এ ধরনের গবাদিপশু থেকে নির্গত হয় প্রায় ১০০ মিলিয়ন টন মিথেন। বাংলাদেশের গবাদিপশু খাত থেকেও প্রতিবছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমতুল্য মিথেন নির্গত হয়। এই গ্যাস কমাতে আমাদের দল কাজ করছে। কারভুলেরিয়া ফাঙ্গি (Curvularia Fungi) নামে এক বিশেষ ধরনের প্রাকৃতিক ছত্রাক উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। এটি গবাদিপশুর হজম প্রক্রিয়ায় মিথেন গ্যাসের উৎপাদন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম।’

২০২৫ সালের মার্চে নেদারল্যান্ডসের বায়োটেকনোলজি রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত হয় গবেষণাপত্রটি। এই আবিষ্কারের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে নতুন কোম্পানি আরওএএম অ্যাগ্রিকালচারাল। প্রতিষ্ঠানটির মডেল অনুযায়ী খামারীরাই ছোট ছোট ইউনিটে এই ছত্রাক উৎপাদন করতে পারবেন। গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গবাদি পশু থেকে মিথেন নির্গমন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ যদি মিথেন নির্গমন অর্ধেক কমাতে সক্ষম হয়, তাহলে এই “সবুজ অর্থনীতি”র সম্ভাব্য বাজারমূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার। যার অর্থমূল্য প্রায় ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার।’

সম্মেলনে আয়োজিত অতিথিরা
দীপু মালাকার

জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীর এমন একটি উদ্ভাবনের প্রশংসা করে বক্তব্য রাখেন শামসুল হুদা। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের বা সরকারের দায়িত্ব ছাড়াও আমাদের অনেক কিছু করার আছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সমষ্টিভাবে কাজ করা দরকার। শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে, আমাদের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ জায়গা থেকে পরিবেশ রক্ষা এবং সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা উচিত।’

এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘এমন একটি প্রযুক্তি আমাদের মাঠ পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যেহেতু আমরা কৃষিপ্রধান দেশ, সেখানে এমন প্রযুক্তির ব্যাপক চাহিদা থাকবে। আমরা এমন প্রযুক্তি চাইলে আশপাশের দেশেও রপ্তানি করতে পারব। এতে আমাদের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি আরও উন্নত হবে।’

এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে আরওএএম, কৃষাণ ফাউন্ডেশন, মেধাসম্পদ সুরক্ষা মঞ্চ এবং জ্যাকফ্রুট পোস্ট।