বরিশালে বিজ্ঞান উৎসব জমজমাট

ছবি: মো. সাইয়ান
এরা সবাই বিজ্ঞানী। খুদে বিজ্ঞানী। একদিন তারা সত্যিকার বিজ্ঞানী হতে চায়। সেজন্যই ওরা এসেছে বিজ্ঞানের এই উৎসবে। বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের বরিশাল আঞ্চলিক পর্বে অংশ নেবে সবাই। কেউ কুইজে, কেউ প্রজেক্টে।

এ. আর. এস. মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, বরিশাল। খুদে বিজ্ঞানীরা স্কুলের মাঠে ছুটে বেড়াচ্ছে। বাতাসে শীতের আমেজ। বন্ধুসভার বন্ধুরা শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে দিচ্ছে, প্রজেক্ট নিয়ে কোথায় বসতে হবে। কুইজ কোথায় কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে, তার আসন বিন্যাস দেওয়া আছে বিস্তারিত। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ একাই একশ। নিজেই প্রজেক্টের সব কিছু করেছে। কেউ আবার দল বেঁধে প্রজেক্ট নিয়ে এসেছে। প্রায় সবাই চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে জোট বেঁধে। বিজ্ঞানচিন্তার স্টলের সামনেও ভীড়। আর স্কুলের পুরো মাঠ জুড়ে শিক্ষার্থীদের মেলা। হাসছে, গল্প করছে।

এরা সবাই বিজ্ঞানী। খুদে বিজ্ঞানী। একদিন তারা সত্যিকার বিজ্ঞানী হতে চায়। সেজন্যই ওরা এসেছে বিজ্ঞানের এই উৎসবে। বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের বরিশাল আঞ্চলিক পর্বে অংশ নেবে সবাই। কেউ কুইজে, কেউ প্রজেক্টে।

ছবি: মো. সাইয়ান

সব কোলাহল স্তিমিত হয়ে এল উপস্থাপকের আহ্বানে। সবাইকে প্রাঙ্গনে সারি বেঁধে দাঁড়াতে অনুরোধ করছেন। উপস্থাপক নাঈম ইসলাম সবাইকে স্বাগত জানালেন। স্পিকারে বেজে উঠল জাতীয় সঙ্গীত, 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।' এর মাধ্যমে শুরু হলো বরিশাল বিজ্ঞান উৎসব। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন। আর উৎসবের পতাকা উত্তোলন করেন বিকাশের ইভিপি ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স হুমায়ুন কবির।

উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন, এ. আর. এস মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহফুজ আলম, বিকাশের ইভিপি ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, অ্যাসিট্যান্ট ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান, প্রথম আলোর প্রতিনিধি এম. জসীমউদ্দিন, বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার ও সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ।

পতাকা উত্তোলন শেষে স্বাগত বক্তব্যে এ. আর. এস মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, 'বিজ্ঞান উৎসব আয়োজন করতে পেরে আমরা ধন্য। এই উৎসবে আজকে যারা আসছে, তারাই আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। তোমাদের ওপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।'

ছবি: মো. সাইয়ান

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক এম. জসীমউদ্দিন বলেন, 'চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অংশ আজকের এই আয়োজন। এই শীতের সকালে তোমরা অনেক কষ্ট করে এসেছ। আজকের অতিথি, আয়োজক এবং সর্বপরি শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ।'

বিকাশের ইভিপি ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স হুমায়ুন কবির বলেন, 'আমাদের বাচ্চারা যেন বিজ্ঞানমনস্ক হয়, দেশ এবং বিদেশে বিজ্ঞানের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যেন সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে, সেই উদ্দেশ্যেই বিকাশ ও বিজ্ঞানচিন্তা মিলে এই উৎসবের আয়োজন করছে। তোমরা শিক্ষার্থীরা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছ, এজন্য তোমাদের সাধুবাদ জানাই। তোমরা এ দেশকে এগিয়ে নেবে নিজেদের মেধা-মনন ও মনোবল এবং প্রবল উদ্যোমে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।'

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, 'আগামীর বাংলাদেশ গড়ার কারিগর তোমরা। তোমাদের দক্ষ হতে হবে। সবকিছুকে গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে। সেখান থেকে তোমরা শুধু ভালোটুকু গ্রহণ করবে। তোমরাই সেই মানুষ যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বকে এগিয়ে নেবে। তোমরা বিজ্ঞানমনস্ক, তাই আজ তোমরা এখানে উপস্থিত। তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমি আজকের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করছি'

এর মাধ্যমে শেষ হয় উদ্বোধনী বক্তব্য। তারপর বেলুন উড়িয়ে প্রধান অতিথি বরিশাল বিজ্ঞান উৎসব উদ্বোধন করেন। তারপর শুরু হয় কুইজ প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি চলে প্রজেক্ট প্রদর্শনী।

ছবি: মো. সাইয়ান

কুইজ প্রতিযোগিতার পর অডিটোরিয়ামে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় গান ও নৃত্যের তালে। 'আমার বাংলাদেশের একতারা' গানটি পরিবেশন করেন বরিশাল বন্ধুসভার সংস্কৃতিক সম্পাদক মিজানুর রহমান। এছাড়া নৃত্য পরিবেশন করেন দেবশ্রী পাল ও পূজা মজুমদার।

এরপর শুরু হয় প্রশ্ন উত্তর পর্ব। পদার্থবিজ্ঞানের নিউক্লিয়াস এবং জীববিজ্ঞানের নিউক্লিয়াস কেন আলাদা? ভবিষ্যতে আলোর গতিতে চলা কি সম্ভাবনা কতটুকু? এমন নানা জিজ্ঞাসা শিক্ষার্থীদের।

ধৈর্য ধরে সুন্দরভাবে এসব প্রশ্নের উত্তর দেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. খোরশেদ আলম, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহাফুজ আলম, বরিশাল সরকারি কলেজের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. সাইদুর রহমান এবং এ. আর. এস মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী শিক্ষক রুবানা রহমান। পুরো পর্বটি সঞ্চালনা করেন শিবলী বিন সারওয়ার।

ওদিকে ততক্ষণে প্রজেক্ট পর্বের বিচারকাজও শেষ। শিক্ষার্থীদের দারুণ সব প্রজেক্টের মধ্য থেকে সেরা ৬টি প্রজেক্টে মোট ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আর কুইজের নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে মোট ২০ জনকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

কুইজ প্রতিযোগিতায় নিম্নমাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে প্রথম ও সেরাদের সেরা হয়েছে বরিশাল কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহসিনা বিনতে মোর্শেদ, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে এ. আর. এস মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নওশীন সাকিরীন, তৃতীয় স্থান অর্জন করছে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফীফ আরফান খান।

ছবি: মো. সাইয়ান

কুইজ প্রতিযোগিতায় মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে প্রথম ও সেরাদের সেরা হয়েছে বরিশাল জিলা স্কুলের এসএসসি-২০২২ ব্যাচের শিক্ষার্থী ধ্রুব মন্ডল, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে একই স্কুলের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আজিজুল হক নাফিস, তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে একই স্কুলের এসএসসি-২০২২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আগ্নিক সরকার।

প্রজেক্ট প্রদর্শনীতে প্রথম ও সেরাদের সেরা হয়েছে এ. আর. এস. মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নওশীন সাকিরীন। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে বরিশাল জিলা স্কুলের ১০ম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থী—মুহাইমিনুল ইয়ামিন, অর্ক চক্রবর্তী ও শাদিদুর রহমান। তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে বরিশাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী—মো. ইয়াছিন ও মাহিন উল ইসলাম।

ফলাফল ঘোষণার পর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। এ সময় প্রশ্নোত্তর পর্বের অতিথিদের সঙ্গে যোগ দেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন, এ. আর. এস মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন, বিকাশের ইভিপি ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, প্রথম আলোর প্রতিনিধি জসীম উদ্দিন ও বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার। প্রশ্নোত্তর ও পুরস্কার বিতরণী পর্ব সঞ্চালনা করেন শিবলী বিন সারওয়ার।

ছবি: মো. সাইয়ান

পুরস্কার বিতরণীর মাঝেই এ. আর. এস মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেনের হাতে ভেন্যু স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

বেলা ১টায় শেষ হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান আয়োজনে সার্বিক সহায়তা করেন বরিশাল বন্ধুসভার বন্ধুরা।

‘বিজ্ঞানে বিকাশ’ স্লোগান সামনে রেখে দেশের সাতটি অঞ্চলে আয়োজিত হলো আঞ্চলিক বিজ্ঞান উৎসব। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো শুরু হয় এ উৎসব। স্কুলশিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে যৌথভাবে এ উৎসবের আয়োজন করছে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা।

ইতিমধ্যেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও রংপুরে বিজ্ঞান উৎসবের আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারে বরিশাল আঞ্চলিক পর্বের মাধ্যমে শেষ হলো বিজ্ঞান উৎসবের আঞ্চলিক পর্ব। সবশেষে জাতীয় পর্বের মাধ্যমে শেষ হবে এ আয়োজন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় উৎসবে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে আঞ্চলিক উৎসবের বিজয়ীরা।

ছবি: মো. সাইয়ান

বিজ্ঞান উৎসবে স্কুলের ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রজেক্ট প্রদর্শনী ও কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। প্রজেক্ট প্রদর্শনীতে ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একটি ক্যাটাগরিতে অংশ নেয়। আর কুইজ প্রতিযোগিতায় রয়েছে দুটি ক্যাটাগরি। নিম্নমাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে অংশ নেয় ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, আর মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে অংশ নেয় ৯ম-১০ম শ্রেণি ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। শুধু নিবন্ধনকারী শিক্ষার্থীরা এই দুই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে।

বিজ্ঞান উৎসবের যেকোনো খবর জানতে চোখ রাখুন bigganchinta.com-এ, বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসব ও বিজ্ঞানচিন্তার ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে, প্রথম আলোয় এবং বিজ্ঞানচিন্তার প্রিন্ট সংস্করণে।