চিকিৎসাবিজ্ঞান বা শারীরতত্ত্বে নোবেল নিয়ে বিজ্ঞান বক্তৃতা আয়োজিত হলো চট্টগ্রামে। ২ ডিসেম্বর, শনিবার চট্টগ্রাম মিলনায়তনের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে এই বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এবারের নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তি উদযাপন করতেই এই আয়োজন করা হয়েছে।
আয়োজনে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম মাহবুবুর রশীদ। প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালযয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) ল্যাব ইন চার্জ ও অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মো. জাকির হোসেন এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক এ এম এ এম জুনায়েদ সিদ্দিকী।
এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন দৃষ্টি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ বকুল, চিটাগং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটির সম্পাদক আল আমিন, ইউএসটিসি ফার্মা সায়েন্স ক্লাবের সহকারী মডারেটর আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী, দৃষ্টি চট্টগ্রামের সভাপতি সাইফ চৌধুরি ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মুন্না এবং একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আদনান মান্নান।
'প্রতিষেধক আবিস্কার না হলে ২০২১ সালের মধ্যে ২ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ মারা যেত। বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা আমাদের দেশে কম। তরুণদের সঠিকভাবে পরির্চাযা করতে পারলে দেশ থেকেই গবেষক তৈরি করা সম্ভব।’
এমআরএনএ ভ্যাকসিনের গুরুত্ব ও এই ভ্যাকসিন বানানোর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন এস এম মাহবুবুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে নোবেল পেয়েছেন ক্যাতালিন ক্যারিকো ও ড্রু ওয়াইজম্যান। তাঁরা এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কার করায় এ পুরস্কার পেয়েছেন। যেকোনো প্রতিষেধক সাধারণত ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস বা অন্যান্য জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে এগুলো। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি প্রতিষেধক তৈরি করতে ১০ থেকে ৩০ বছর সময় লাগে। তারপরও নিশ্চিত হওয়া যায় না। বেশির ভাগ প্রতিষেধক ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ কার্যকর হয়। এ দিক থেকে এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যতিক্রম।’
সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘মানবসেবা করতে হলে বিজ্ঞানীদের লেগে থাকতে হয়। এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি প্রতিষেধক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের মাধ্যমে বড় পরিসরে মানবসেবা করা যায়। এ বছর শারীরত্বত্ত্বে নোবেল পেয়ে সেটাই প্রমাণ করেছেন ওই দুই বিজ্ঞানী।’
জাকির হোসেন বলেন, ‘২০২০ সালে যেভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল, কল্পনাও করতে পারিনি আজকের এ অনুষ্ঠানে আসতে পারব। করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার করে দুই বিজ্ঞানী মানুষকে নতুন জীবন দিয়েছেন। এমআরএনএ প্রযুক্তির সাহায্যে খুব দ্রুত প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পেরেছেন। গবেষণার তথ্যমতে, প্রতিষেধক আবিস্কার না হলে ২০২১ সালের মধ্যে ২ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ মারা যেত। বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা আমাদের দেশে কম। তরুণদের সঠিকভাবে পরির্চাযা করতে পারলে দেশ থেকেই গবেষক তৈরি করা সম্ভব।’
সাইফ চৌধুরী বলেন, ‘গবেষকরা হলেন একেকটা ইনস্টিটিউট। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে গবেষকরা দেশকে পরিবর্তন করে দিতে পারেন। যত বেশি গবেষণা হবে, দেশ তত উন্নত হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের সমস্যা অন্য দেশ এসে সমাধান করবে না। আমাদেরকেই সমাধান করতে হবে। এটা একমাত্র বিজ্ঞানের সাহায্যে সমাধান করা যেতে পারে। দেশকে পরির্বতন করতে হলে তাই এগিয়ে আসতে হবে গবেষকদের।’
চট্টগ্রামের সাতটি বিজ্ঞান সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এই বক্তৃতা আয়োজিত হয়। সংগঠনগুলো হলো দৃষ্টি চট্টগ্রাম, ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ, চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি, এনওয়াইবিবি নেটওয়ার্ক অব ইয়ং বায়োটেকনোলজিস্ট বাংলাদেশ, হোয়াইট বোর্ড সায়েন্স ক্লাব, ইউএসটিসি ফার্মা সায়েন্স ক্লাব ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি রোবোটিক্স ক্লাব। আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। পৃষ্টপোষক মার্কস ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার। ম্যাগাজিন পার্টনার হিসেবে ছিল বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা।