হাসি-আনন্দে শেষ হলো ময়মনসিংহ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড

ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীরাছবি: কাজী আকাশ

শিক্ষার্থীদের কৌতুহলের শেষ নেই। মাথায় কত প্রশ্ন! সেসবের জবাব দেবে কে? ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের প্রশ্নোত্তর পর্বে সেই প্রশ্নের ঝাঁপি খুলে বসে শিক্ষার্থীরা। এ পর্ব শুরু হয় ১২.১৫ মিনিটে। 'প্যারালাল ইউনিভার্স কি শুধুই একটা হাইপোথিসিস?' 'মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করছে। আবার মহাবিশ্ব প্রসারিতও হচ্ছে। এটা কেন হচ্ছে?' 'মহাবিশ্ব বলতে আদৌ কি কিছু আছে?' একের পর এক প্রশ্ন করে যায় শিক্ষার্থীরা। ধৈর্য ধরে সহজ ভাষায় প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেন মঞ্চে উপস্থিত আনন্দ মোহন কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক আশিকুল হক, একই বিভাগের শিক্ষক আলিমুল ইসলাম, রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নুরুল হক, শেখ মুজিব কলেজ, তারাকান্দ-এর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হাসনাত জামান, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক মো. হাসিব উল্লাহ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাই স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সুলতান আহমেদ, প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আশরাফুজ্জামান, ফুলবাড়িয়া কে. আই. ফাজিল মাদরাসাহর রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাইহান উদ্দিন, বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসিমা আক্তার, ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো. সাইফুর রহমান এবং প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চান মিয়া।

জাদু দেখাচ্ছেন রাজীব বসাক
ছবি: কাজী আকাশ

এর আগের পর্বটি ছিল জাদুর। আধুনিক জাদু একটা শিল্প। হাত সাফাই ও বিজ্ঞানের কলাকৌশলে সাধারণ জিনিসকে অসাধারণ করে তোলেন একজন জাদুকর। ময়মনসিংহে ছিলেন ঠিক সেরকম একজন। জাদুশিল্পী রাজিব বসাক মঞ্চে আসেন ১১.৩০টায়। জাদুর গোলাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করেন। টানা ৪৫ মিনিট একের পর জাদু দেখান তিনি। সবাই তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ চোখে। প্রতিটি জাদুর পাশাপাশি নানান শিক্ষামূলক কথাও বলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ময়মনসিংহ প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুলের অডিটোরিয়াম।

এ উৎসব শুরু হয় সকাল ৯টায়। সকাল ৮টা থেকে প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুলে জড়ো হতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ময়মনসিংহ বন্ধুসভার বন্ধুরা সকাল ৯টায় গেয়ে ওঠে জাতীয় সঙ্গীত। তারপর অতিথি ও শিক্ষার্থীরা একযোগে বেলুন উড়িয়ে শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করে ময়মনসিংহ আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের।

এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক গাজি হাসান কামাল, ময়মনসিংহ শাখার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ম্যানেজার মো. গোলাম কিবরিয়া, প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চান মিয়া, পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম, প্রথম আলোর ময়মনসিংহ প্রতিনিধি কামরান পারভেজ এবং ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সভাপতি সুব্রত কুমার সিংহ।

বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন
ছবি: কাজী আকাশ

উদ্বোধনী পর্বের শুরুতে শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ময়মনসিংহ শাখার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ম্যানেজার মো. গোলাম কিবরিয়া  বলেন, 'গণিত এবং ফিজিক্সকে আমরা সবসময় কঠিন মনে করতাম। কিন্তু ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে ফিজিক্স বিষয়টা এখন আর কঠিন নেই। এই অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে কিছুটা হলেও ফিজিক্সভীতি কমেছে।'

প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চান মিয়া বলেন, 'আমরা এখানে যারা উপস্থিত আছি, তারা সবাই যেন মানুষ হতে পারি, সেই চেষ্টা সব সময় করব। কারণ, মানুষ হতে পারলে বাকি সব হবে।'

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক গাজি হাসান কামাল বলেন, 'পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। এগোচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও। গণিত ও ফিজিক্সে আমাদের ভীতি আছে। সেই ভীতি কীভাবে কাটানো যায়, তার প্রাথমিক শুরুটা এই ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে হচ্ছে। এ জন্য প্রথম আলো ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংককে ধন্যাবাদ।'

এরপর সকাল ৯.৩০টায় শুরু হয় পরীক্ষা, চলে এক ঘন্টা ১৫ মিনিট। শেষ হয় বেলা ১০.৪৫টায়। পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয় অডিটোরিয়ামে। জাদু ও প্রশ্ন উত্তর পর্ব আয়োজিত হয় সেখানেই। এরপর প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চান মিয়ার হাতে ভেন্যুস্মারক তুলে দেন প্রথম আলোর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রতিবেদক কামরান পারভেজ। দুপুর ১২.৩০টায় সমাপনী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে শেষ হয় বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পর্ব। 

ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে চার ক্যাটাগরিতে ১১০ জনকে বাছাই করা হয়েছে। 'এ' ক্যাটাগরিতে ৭ জন, 'বি' ক্যাটাগরিতে ৩২ জন, 'সি' ক্যাটাগরিতে ৫০ জন এবং 'ডি' ক্যাটাগরিতে ২১ জনকে পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয় মেডাল, সার্টিফিকেট ও টি-শার্ট। 

ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পর্বের পরীক্ষার্থীদের একাংশ
ছবি: কাজী আকাশ

১৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে চারটি ক্যাটাগরিতে। ৫ম-৬ষ্ঠ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা এ ক্যাটাগরি, ৭ম-৮ম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা বি ক্যাটাগরি, ৯ম-১০ম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা সি ক্যাটাগরি এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা ডি ক্যাটাগরি। 

২০২৩ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হবে ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। এ লক্ষ্যে প্রতিবারের মতো এবারও দেশব্যাপী ১৩তম ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩ আয়োজন করা হচ্ছে। বাছাইপর্বের নির্বাচিতদের নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ঢাকা, যশোর, দিনাজপুর ও রাজশাহী আঞ্চলিক পর্ব। এর ধারাবাহিকতায় আগামীকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবার অনুষ্ঠিত হবে ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের চট্টগ্রাম ও সিলেট আঞ্চলিক পর্ব। এ পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে অফলাইনে, বিভিন্ন আঞ্চলিক ভেন্যুতে। এরপর আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজিত হবে জাতীয় উৎসব। পরে জাতীয় উৎসবের বিজয়ীদের নিয়ে ক্যাম্প আয়োজন করা হবে। ক্যাম্প শেষে বাছাইকৃতদের নিয়ে গঠিত হবে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দল। ওই দলটিই জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠেয় ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

এ অলিম্পিয়াডের আয়োজন করছে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ব্যবস্থাপনায় রয়েছে প্রথম আলো। এ ছাড়া ম্যাগাজিন পার্টনার হিসাবে রয়েছে কিশোর আলো ও বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা। টেকনিক্যাল পার্টনার হিসাবে আছে বিডিকম।

দেশের শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে ২০১১ সাল থেকেই আয়োজিত হচ্ছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। এবারেও একই উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হচ্ছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩।

ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ও আঞ্চলিক পর্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে bdpho.org ওয়েবসাইটে।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা