বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি সংবাদ প্রচারে সিলেট বিভাগের গণমাধ্যমকর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ। এপ্রিল ১৯ সিলেটের নিরভানা ইন হোটেলে এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগের ২৭টি সংবাদমাধ্যমের ৩০ জনের বেশি সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তৃতা দেন ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের সিইও এবং নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফ হোসেন। আরও উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিএসএমএমইউর অধ্যাপক ও পরিচালক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) জ্যেষ্ঠ যোগাযোগ কর্মকর্তা এম আবদুল মমিন এবং ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ।
ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের সিইও এবং নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফ হোসেন উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকেরা আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের তথ্য প্রচার ও সম্প্রসারণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পরিপূরক ভূমিকা পালন করেন। গণমাধ্যম, গণযোগাযোগকর্মী ও সাংবাদিক—সবার মধ্যে একটি সেতুবন্ধ তৈরি করা যেতে পারে, এর মাধ্যমে আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রসার নিশ্চিত করা সম্ভব।
বিএসএমএমইউর অধ্যাপক ও পরিচালক মো. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘জৈবপ্রযুক্তির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ–সংক্রান্ত গবেষণা ও উদ্ভাবনে আরও বেশি বিনিয়োগ করা উচিত, যাতে আমরা ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের নিজস্ব সক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে পারি।’
ব্রির জ্যেষ্ঠ যোগাযোগ কর্মকর্তা এম আবদুল মোমিন বলেন, আধুনিক জৈবপ্রযুক্তি ফসলকে তার পুষ্টির মান অক্ষুণ্ন রেখে মানুষের পুষ্টিমান উন্নয়ন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফিলিপাইনের পর গোল্ডেন রাইসের বাণিজ্যিক মুক্তি বাংলাদেশের জন্য ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব পূরণে আশার কারণ হতে পারে।
কৃষিবিষয়ক সংবাদ পরিবেশনে সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, যেমন কৃষিতে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার, খাদ্যনিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সম্ভাবনা, কৃষিপ্রযুক্তির ওপর বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিবেদন তৈরিতে গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয় এ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের বিশিষ্ট সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন, যাঁরা বিভিন্ন সেশনে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত থেকে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কৃষিতে জৈবপ্রযুক্তি, খাদ্যনিরাপত্তা, জিনোম সম্পাদনা, বিজ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবন ও কৃষিশিক্ষার অন্যান্য দিক সম্পর্কে তাঁদের অবহিত করেন। প্রশিক্ষণটি কৃষিতে জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার, সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে প্রথিতযশা সাংবাদিক ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মতবিনিময় করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। ফলে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের একটি আন্তসম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যার ফলে আলোচ্য বিষয়ে অংশগ্রহণকারী সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে বলে উপস্থিত সবাই আশা প্রকাশ করেন।
ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ (এফএফবি) সামাজিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা উন্নয়নে নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান। এর মূল লক্ষ্য বাংলাদেশে টেকসই খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কৃষি খাতে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার সহজলভ্য করা, যার মধ্যে শস্য উৎপাদনে জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার অন্যতম। বাংলাদেশভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায়, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালায়েন্স ফর সায়েন্স, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। এফএফবি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করছে, যাঁরা সমন্বিতভাবে খাদ্যনিরাপত্তা, পরিবেশের স্থিতিশীলতা ও জীবনমান উন্নয়নে বিজ্ঞানের উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।