শেষ হলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের বরিশাল আঞ্চলিক পর্ব

পুরস্কার বিতরণী পর্বে অতিথিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরামো. আসাদুজ্জামান
তারপর আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। পুরস্কার বিতরণী। চার ক্যাটাগরিতে মোট ৪০ জনকে পুরস্কৃত করা হয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের বরিশাল আঞ্চলিক পর্বে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৪ জন, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ১০ জন, ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ১৮ জন ও ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত করা হয় ৮ জনকে।

সকাল ৯টা। বাতাসে হালকা শীতের আমেজ। শিক্ষার্থীদের অনেকে হালকা শীতের পোশাক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবাই এসে জড়ো হচ্ছে বরিশাল জিলা স্কুলের প্রাঙ্গণে। একটু পরেই শুরু হবে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের আঞ্চলিক পর্ব। সঞ্চালকের ঘোষণা শুনে সারবেঁধে দাঁড়িয়ে গেল শিক্ষার্থীরা। অতিথিরা মঞ্চে উপস্থিত।

বরিশাল আঞ্চলিক উৎসবের উদ্বোধনী পর্বের প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খোরশেদ আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম দস্তগীর আল কাদেরী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহফুজ আলম, বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম ও বরিশাল অঞ্চলের প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক এম জসীমউদ্দিন। উদ্বোধনী পর্ব সঞ্চালন করেন বরিশাল বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম।

উদ্বোধনী মঞ্চে অতিথিরা
কাজী আকাশ

উদ্বোধনী পর্বে বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে  বলেন, 'এরকম একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় হার জিত থাকবে। তোমরা যাতে সেই ফলাফল মেনে নিতে পার, সেই কামনা করি। তবে হারা মানেই হেরে যাওয়া নয়। মনে রাখবে, এখানে উপস্থিত তোমরা প্রত্যেকেই বিজয়ী।'

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খোরশেদ আলম বলেন, 'এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব চলছে। তোমরা সেই বিপ্লবকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তোমদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে দেশ।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম দস্তগীর আল কাদেরী বলেন, 'আমারা যদি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। এটা একটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অবশ্যই। তবে এটা মূলত পদার্থবিজ্ঞানের জন্য ভালোবাসা। এখানে পাশ ফেলের কোনো ব্যাপার নেই। তোমরা পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসার জন্যই এই পরীক্ষা দিচ্ছ বলে আমার বিশ্বাস।' 

সকাল ৯.৪৫টায় বরিশাল জিলা স্কুলের সবাই একসঙ্গে গেয়ে ওঠেন 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।' এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম। বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম দস্তগীর আল কাদেরী ও ইভেন্টের পতাকা উত্তোলন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খোরশেদ আলম।

বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন
কাজী আকাশ
পরীক্ষার্থীদের একাংশ, সমস্যা সমাধানে মগ্ন
কাজী আকাশ

জাতীয় সংগীত শেষে অতিথিরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে বরিশাল আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। 

এরপর শুরু হয় পরীক্ষা। ১০টা থেকে দুপুর ১১.১৫টা পর্যন্ত চলে এ পরীক্ষা। দুপুর ১১.৪৫টায় বরিশাল জিলা স্কুলের অডিটরিয়ামে শুরু হয় জাদু। রাজীব বসাক জাদু দেখিয়ে মাতিয়ে রাখেন শিক্ষার্থীদের। জাদুর পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দেন, জাদুও একধরনের বিজ্ঞান।

 তারপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। 'পৃথিবীর বৈদ্যুতিক বিভব শুন্য কেন?’ ‘পদার্থ ক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত। এই কণাকে আর ভাগ করা যায় না কেন?’ ‘বিজ্ঞানীরা কেন এখনো ডার্ক ম্যাটার আবিষ্কার করতে পারেননি।’ অনেক জিজ্ঞাসা খুদে পদার্থবিজ্ঞানীদের। সহজ ভাষায় এসব প্রশ্নের জবাব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম দস্তগীর আল কাদেরী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহফুজ আলম ও একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খোরশেদ আলম।

তারপর আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। পুরস্কার বিতরণী। চার ক্যাটাগরিতে মোট ৪০ জনকে পুরস্কৃত করা হয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের বরিশাল আঞ্চলিক পর্বে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৪ জন, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ১০ জন, ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ১৮ জন ও ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত করা হয় ৮ জনকে। পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয় মেডাল, সার্টিফিকেট ও টিশার্ট। 

জাদু দেখাচ্ছেন রাজীব বসাক
কাজী আকাশ

১৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে চারটি ক্যাটাগরিতে। ৫ম-৬ষ্ঠ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা এ ক্যাটাগরি, ৭ম-৮ম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা বি ক্যাটাগরি, ৯ম-১০ম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা সি ক্যাটাগরি এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা ডি ক্যাটাগরি।

২০২৩ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হবে ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। এ লক্ষ্যে প্রতিবারের মতো এবারও দেশব্যাপী ১৩তম ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩ আয়োজন করা হচ্ছে। বাছাইপর্বের নির্বাচিতদের নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ঢাকা ও যশোর আঞ্চলিক পর্ব। এ পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে অফলাইনে, বিভিন্ন আঞ্চলিক ভেন্যুতে। এরপর আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজিত হবে জাতীয় উৎসব। পরে জাতীয় উৎসবের বিজয়ীদের নিয়ে ক্যাম্প আয়োজন করা হবে। ক্যাম্প শেষে বাছাইকৃতদের নিয়ে গঠিত হবে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দল। ওই দলটিই জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠেয় ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

এ অলিম্পিয়াডের আয়োজন করছে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ব্যবস্থাপনায় রয়েছে প্রথম আলো। এ ছাড়া ম্যাগাজিন পার্টনার হিসাবে থাকছে কিশোর আলো ও বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা। টেকনিক্যাল পার্টনার হিসাবে আছে বিডিকম।

দেশের শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে ২০১১ সাল থেকেই আয়োজিত হচ্ছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। এবারেও একই উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হচ্ছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩।

ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ও আঞ্চলিক পর্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে bdpho.org ওয়েবসাইটে।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা