শেষ হলো বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবে জাতীয় পর্ব। সাতটি বিভাগীয় শহরে আঞ্চলিক পর্ব শেষে দেশসেরা খুদে বিজ্ঞানীদের নিয়ে ২০ মার্চ, সোমবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয় এ আসরের জাতীয় পর্ব।
সোমবার সকাল ৯টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির শেখ রাসেল মঞ্চে জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা ও উৎসব পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে পর্দা ওঠে দিনব্যাপী দারুণ এ উৎসবের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক ও ছড়াকার আনজীর লিটন, রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লফিফা জামাল, বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল শেখ মো. মনিরুল ইসলাম (অব.) এবং প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ। এরপরই আসে আকর্ষণীয় উদ্বোধনীর পালা। মঞ্চে উপস্থিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাটনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের আনা রোবট ‘নাও’। উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করে রোবট নাও বলে, ‘আমি বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের জাতীয় পর্বের উদ্বোধন ঘোষণা করছি। সবাইকে শুভেচ্ছা!’
উদ্বোধনীর পর শুরু হয় কুইজ প্রতিযোগিতা পর্ব। প্রজেক্ট প্রদর্শনী ও বিজ্ঞান কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় আঞ্চলিক পর্বগুলো থেকে বাছাইকৃত ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও প্রায় সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থী অংশ নেয় সবার জন্য উন্মুক্ত বিশেষ কুইজে।
বিজ্ঞান প্রজেক্ট প্রদর্শনীদে প্রায় অর্ধশত প্রজেক্ট নিয়ে হাজির হয় খুদে বিজ্ঞানীরা। ‘হিউম্যান হেল্পিং প্রজেক্ট’, ‘প্রজেক্ট ট্রেন দুর্ঘটনা প্রতিরোধ’, ‘স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ ও ‘মিনি এয়ার কুলার’ ইত্যাদির মতো চমৎকার সব প্রজেক্ট এসেছে প্রতিযোগিতায়। তবে সেরাদের সেরারা মাছের আঁশ থেকে তৈরি করেছে জৈবপ্লাস্টিক। এ প্লাস্টিক ভেঙে যায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। হাতে-কলমে পুরো প্রজেক্টটি করেছে তারা, বানিয়ে এনেছে নিজেদের বানানো প্লাস্টিকও।
এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এ পর্বে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে কৌতূহল মেটান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম, পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক পরিচালক এ কে এম আব্দুল হাকিম, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ফারজানা রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সৌমিত্র চক্রবর্তী এবং বিজ্ঞানবক্তা আসিফ।
সমাপনী পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রম্যলেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, পাখিবিশেষজ্ঞ শরীফ খান, অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা, অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগ, ভারত্তোলক মারিয়া আক্তার সীমান্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন হাফিজ মুহম্মদ হাসান, বিকাশের ইভিপি ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, অভিনেত্রী সাবিলা নূরসহ আরও অনেকে।
এ পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান। সঙ্গে ছিলেন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। তাঁদের বক্তব্যের পর শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী।
শিক্ষার্থীরা এত পুরস্কার নিয়ে যেন খানিকটা দ্বন্ধেই পড়ে যায়। এত এত পুরস্কার সেরাদের জন্য! কীভাবে নেবে! পুরস্কার হিসেবে ছিল ল্যাপটপ, বই, বিজ্ঞান বাক্স, ট্রফি, মেডেল ও সনদসহ আরও নানা কিছু। তবে দন্দ্ব ও বিদায়ের রাগের মধ্যেই তাদের মুখে দেখা যায় বাঁধভাঙা আনন্দ। সবাই খুব খুশি! এই খুশির প্রতিফলন ধরা পড়ে সাংবাদিকদের ক্যামেরায়।
এ জাতীয় পর্বে নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ের কুইজে সেরাদের সেরা হয়েছে খুলনা জিলা স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির অরিত্র দেবনাথ। মাধ্যমিক পর্যায়ে সেরাদের সেরা হয়েছে একই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. নাজিব মাহমুদ। অন্যদিকে প্রজেক্ট প্রদর্শনীতে সেরাদের সেরা হয়েছে রাজধানীর হলি ক্রস গার্লস হাই স্কুলের দুই শিক্ষার্থী—সুমাইয়া আহমেদ ও অংকিতা হালদার। আর বিশেষ কুইজে প্রথম হয়েছে রাজশাহীর কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইফতিখার আহমেদ সাজিদ। বিশেষ আয়োজন হিসেবে সুডোকু প্রতিযোগিতা ছিল আগ্রহীদের জন্য। এ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে ভিকারুননেসা নুন কলেজের লামিসা তাবাসসুম নুহা।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ছাড়াও মঞ্চে সারা দিন ধরেই ছিল গুফির পাপেট শো, মনি কুন্তলা, অটামনাল মুন ও আন্তনগর দলের গান এবং পূজা সেনগুপ্ত ও তাঁর দলের নাচ। এ ছাড়া জাদু দিয়ে খুদে বিজ্ঞানীদের আনন্দ দেন ম্যাজিশিয়ান স্বপন দীনার। এর মাধ্যমে পর্দা নামে বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের দ্বিতীয় আসরের।
লেখক: শিক্ষার্থী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়