বিজ্ঞানে-আনন্দে বিজ্ঞানচিন্তার সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

বিজ্ঞানচিন্তার জন্মদিনে কেক কাটা হচ্ছেছবি: খালেদ সরকার

বিকাল ৪টা। ১৫ অক্টোবর ২০২৩।

প্রথম আলোর সভাকক্ষ মানুষে পরিপূর্ণ। সবাই এসেছে বিজ্ঞানচিন্তার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে। পাঠককে সঙ্গে নিয়ে উদযাপন করবে ম্যাগাজিনটি, সে জন্যই এই আয়োজন। কারণ আজ, রোববার বিজ্ঞানচিন্তার ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বিজ্ঞান আছে, চিন্তা কী—এই স্লোগান নিয়ে সাত পেরিয়ে আট বছরে পা রাখল বিজ্ঞানচিন্তা। এ উপলক্ষে বিজ্ঞানচিন্তার পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, স্বেচ্ছাসেবী ও অতিথিসহ নানা বয়সের মানুষ উপস্থিত হয়েছেন।

সবাইকে শুরুতেই শুভেচ্ছা জানিয়ে বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘দেশব্যাপী বিজ্ঞান সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে বিজ্ঞানচিন্তা। বিজ্ঞান কল্পগল্প, ছড়া, কমিকস, রম্য থেকে শুরু করে বিস্তারিত ফিচারসহ নানা মাধ্যমে সহজভাবে বিজ্ঞান তুলে ধরে বিজ্ঞানচিন্তা। এ ম্যাগাজিন থেকে মানুষ এখন উপকৃত হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ। তারা বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠছে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, বাংলাদেশ ফিজিকস অলিম্পিয়াডের কোচ ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ফিজিক্যাল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন, ছড়াকার ও চিকিৎসক রোমেন রায়হান, বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস ও মেকাট্রনিকস বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল, বিজ্ঞানবক্তা আসিফ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব এনার্জি অ্যান্ড সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ফারসীম মান্নান মোহাম্মাদী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সৌমিত্র চক্রবর্তী, বিকাশের ইভিপি ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স হুমায়ন কবির, চিত্রনায়ক আরেফিন শুভ, প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান এবং প্রথমা প্রকাশনের কর্মকর্তা মেরিনা ইয়াসমিন।

বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম শুভেচ্ছহা জানাচ্ছেন সবাইকে
ছবি: খালেদ সরকার

এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বিকাশের কর্মকর্তা সায়মা আহসান, মাহবুবুর রহমান শাকিল, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন, প্রথম আলোর যুগ্ম ফিচার সম্পাদক জামিল বিন সিদ্দিক এবং জাভেদ হুসেন, কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম, ছড়াকার দন্ত্যস রওশন, বিজ্ঞানচিন্তার মুদ্রণ ব্যবস্থাপক শামসুল হকসহ আরও অনেকে।

আনিসুল হক বলেন, ‘দেশের সব ম্যাগাজিন ও পত্রিকার কথা ধরলেও বিজ্ঞানচিন্তার অবস্থান পাঁচ বা ছয় নম্বরে। একটা বিজ্ঞান ম্যাগজিন হয়ে এ অবস্থায় পৌঁছানো আসলেই অনেক বড় ব্যাপার। আমাদের মধ্যে অনেক অপবিজ্ঞান, বিজ্ঞানহীনতা, যুক্তিহীনতা, আবেগ ও সস্তা লাইকের লোভ আছে। এসব দূর করতেই প্রয়োজন বিজ্ঞানচিন্তা। আজ যাঁরা বিজ্ঞানচিন্তার সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন, তাঁদের মধ্য থেকেই হয়তো ভবিষ্যতে জাহিদ হাসানের মতো বিজ্ঞানীরা বেরিয়ে আসবেন। এ জন্য বিজ্ঞানচিন্তাকে ধন্যবাদ।’

বক্তব্য রাখছেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক
ছবি: খালেদ সরকার

অধ্যাপক আরশাদ মোমেন বলেন, ‘যাঁরা বিজ্ঞানচিন্তার কর্মী, তাঁরা প্রত্যেকে অত্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করেন। আমি মনে করি, শুধু এ কারণেই বিজ্ঞানচিন্তা আজ সাত পেরিয়ে আটে পা রাখল। আমি যে বিষয়ে কাজ করি, সেটা কাঠখোট্টা বিষয়। সেটা সবার কাছে পৌঁছানোর মতো করে লেখার কাজটি আমাকে শিখতে হয়েছে। পাশাপাশি আরও অনেক পড়তে হয়েছে নতুন করে। এখানে বড় অবদান আছে বিজ্ঞানচিন্তার। বিজ্ঞানচিন্তার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে এখন। কারণ এখন ভুল তথ্যের যুগ। তাই, আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা অনেক বেড়েছে। আমি আশা করব, বিজ্ঞানচিন্তা বরাবরের মতোই আরও সামনে এগিয়ে যাবে।’

অধ্যাপক আরশাদ মোমেনের বক্তব্য
ছবি: খালেদ সরকার

সারা দেশে বিজ্ঞানচিন্তার মতো একটা ম্যাগাজিন বের করে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া কঠিন কাজ বলে মন্তব্য করেন মুনির হাসান। তিনি আরও বলেন, ‘বিজ্ঞানচিন্তা খুব ভালো কাজ করছে। সবকিছুর মধ্যেই বিজ্ঞান ও গণিত খুঁজতে হবে। আমাদের দেশে এখন প্রমাণিত সত্য নিয়েও কথা হয়। এটা দূর করছে বিজ্ঞানচিন্তা।’

মুনির হাসান জানাচ্ছেন তাঁর অভিমত
ছবি: খালেদ সরকার

অধ্যাপক লাফিফা জামাল বলেন, ‘টানা সাত বছর নিয়মিতভাবে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা কঠিন ব্যাপার। বিজ্ঞানচিন্তা তা করে দেখিয়েছে। নতুন প্রজন্মের মনোযোগ ধীরে ধীরে কমছে। তাই আমাদের পড়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে। তাহলে মানুষ আরও বিজ্ঞান সচেতন হবে।’

অধ্যাপক লাফিফা জামালের বক্তব্য
ছবি: খালেদ সরকার

বিজ্ঞানবক্তা আসিফ বলেন, ‘বিজ্ঞানের পত্রিকা হিসেবে এত বছর ধরে বিজ্ঞানচিন্তার এ অগ্রযাত্রা দেখে মনে হয়, বাংলাদেশ বেশ ভালোই এগোচ্ছে ভবিষ্যতের পথে। এ পথচলায় বিজ্ঞানচিন্তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।’

বক্তব্য রাখছেন বিজ্ঞানবক্তা আসিফ
ছবি: খালেদ সরকার

চিত্রনায়ক আরেফিন শুভ বলেন, ‘আমি বিজ্ঞানের মানুষ নই। তারপরেও আমাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ায় ধন্যবাদ। বিজ্ঞানচিন্তার অনেক অনেক সাফল্য কামনা করি। আরও এগিয়ে যাক বিজ্ঞানচিন্তা।’

আরেফিন শুভ শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন বিজ্ঞানচিন্তাকে
ছবি: খালেদ সরকার

ছড়াকার রোমেন রায়হান বলেন, ‘বিজ্ঞানচিন্তায় আমি বিজ্ঞান ছড়া লিখি। ছড়ার মাধ্যমে সামান্য হলেও বিজ্ঞান ছড়িয়ে দিতে চাই সবার মধ্যে। বিজ্ঞানচিন্তার অংশ হতে পেরে আমি আনন্দিত।’

ছড়াকার রোমেন রায়হান
ছবি: খালেদ সরকার

সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘বিজ্ঞানচিন্তায় কঠিন তাত্ত্বিক বিষয়ের পাশাপাশি হালকা জিনিসও থাকা জরুরি। চাইলেই মানুষের জানা ভুল বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করা যায় না। ধীরে ধীরে বোঝাতে হয়। আবেগ-অনুভূতির মধ্য দিয়ে কাছে পৌঁছাতে হয়। বিজ্ঞানচিন্তা এ কাজটাই করছে। বিজ্ঞানচিন্তার প্রতি অনেক শুভকামনা।’

সৌমিত্র চক্রবর্তী বক্তব্য রাখছেন
ছবি: খালেদ সরকার

বিকাশ ও বিজ্ঞানচিন্তা যৌথভাবে শিশু কিশোরদের জন্য বিজ্ঞান জনপ্রিয় করার কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন বিকাশের কর্মকর্তা হুমায়ন কবির। তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশে ভবিষ্যত প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক করার জন্য বিজ্ঞানচিন্তা যে কাজ করছে, তা বিরল।’

বিকাশের কর্মকর্তা হুমায়ন কবির
ছবি: খালেদ সরকার
অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মাদীর বক্তব্য
ছবি: খালেদ সরকার

অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মাদী বলেন, ‘বিজ্ঞানচিন্তা এ দেশের বিজ্ঞান পত্রিকার শূন্যস্থানটি পূরণ করেছে। তবে জীববিজ্ঞান নিয়ে আরও লেখা প্রয়োজন। বিজ্ঞানচিন্তা জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।’

অতিথিদের বক্তব্য শেষে পাঠকদের জন্য আয়োজিত হয় কুইজ প্রতিযোগিতা। পাঠকদের বিজ্ঞানচিন্তা সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করা হয়। কুইজে সঠিক ৭ উত্তরদাতাকে পুরস্কৃত করা হয়।

কুইজের এক বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম
ছবি: খালেদ সরকার

এরপর বিজ্ঞানচিন্তার সেরা ৫ স্বেচ্ছাসেবীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। সারা বছর বিজ্ঞানচিন্তায় যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্য থেকে নির্বাচিতদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। অতিথি ও পাঠকদের নিয়ে কাটা হয় কেক। ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে চলে বিজ্ঞানচিন্তার থিম সং, ‘কাগজের মলাটে জ্ঞানের তল্লাটে আটকে রাখে সারা দিনটা, বিজ্ঞানচিন্তা।’ এরপর ফটোসেশনের মাধ্যমে শেষ হয় এ আয়োজন।

আব্দুল কাইয়ুমের সম্পাদনায় ২০১৬ সালের অক্টোবরে আত্মপ্রকাশ করে বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা। এ পর্যন্ত ম্যাগাজিনটির ৮২টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানবিষয়ক লেখা প্রকাশের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে বিজ্ঞানকে পৌঁছে দিতে বিজ্ঞানচিন্তা নিয়মিত আয়োজন করছে বিজ্ঞান উৎসব, বিজ্ঞান বক্তৃতা, বিজ্ঞান মেলাসহ আরও অনেক কিছু।