এআই নিয়ে বিজ্ঞান বক্তৃতা আয়োজিত

পুরস্কার হাতে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরাজাহিদুল সেলিম

সকাল থেকে অদ্ভুত এক আবহাওয়া। এই রোদ, আবার এই বৃষ্টি। রাস্তায় বৃহস্পতিবারের চেনা যানজট। এর মধ্যেই রাজধানীর বাংলামোটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেল, বিজ্ঞানের বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছে একজন। একটু পাশের মিলনায়তনে ঢুকে দেখা মিলল এক ঝাঁক কিশোর-তরুণ। কারও কারও সঙ্গে বাবা বা মাও এসেছেন। সবাই শুনতে এসেছে ‘এআই ডিকোডেড: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে বিজ্ঞান বক্তৃতা। মিলনায়তনের কোনো সিট আর ফাঁকা নেই।

অনুষ্ঠান শুরু হলো ঘড়ির কাঁটা ধরে ঠিক সাড়ে চারটায়। উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের স্বাগত জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞান বক্তৃতা শুরু করেন সঞ্চালক তথাপি আজাদ। শুরুতেই মঞ্চে ডেকে নেন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুমকে। সম্পাদক তাঁর শৈশবের মজার কথা দিয়ে শুরু করেন। বিজ্ঞানচিন্তা আয়োজিত এ বক্তৃতায় আসার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই হয়তো বিজ্ঞানী হবো না, কিন্তু আমাদের বিজ্ঞানমনস্ক হতেই হবে। তাহলেই আমরা অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে পারব। দেশ এবং সমাজকেও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’

বিজ্ঞান বক্তৃতা শুনতে আসা দর্শকদের একাংশ
জাহিদুল সেলিম
এআই অলিম্পিয়াড টিমের দলনেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন
জাহিদুল সেলিম

এরপর মঞ্চে আসেন আলোচক বাংলাদেশ এআই অলিম্পিয়াড টিমের দলনেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন। শুরুতে তিনি আন্তর্জাতিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের দুটি রৌপ্য ও দুটি ব্রোঞ্জ পদক পাওয়ার সাফল্য নিয়ে কথা বলেন। তারপর সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেন, এআই কীভাবে কাজ করে, কীভাবে আমরা এআই ব্যবহার করতে পারি, এআই আমাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারে, কোথা থেকে আমরা বিনামূল্যে এআই শিখতে পারি—এসব বিষয় উঠে আসে তাঁর বক্তৃতায়। তিনি সবার উদ্দেশে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আমরা একটা কৃত্রিম জিনিস দেখতে পেলাম যেটা ভালো। এটা সবাই ব্যবহার করতে পারেন। আমরা যেভাবে শিখি, এআইও শেখে সেভাবেই। মানুষের মতো এটিও ভুল থেকে শেখে।’

ইন্টেলিজেন্ট মেশিনস লিমিটেড ও ঢাকা এআই ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ অলি আহাদ
জাহিদুল সেলিম

এরপর মঞ্চে ওঠেন ইন্টেলিজেন্ট মেশিনস লিমিটেড ও ঢাকা এআই ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ অলি আহাদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে নতুন এক পৃথিবী অপেক্ষা করছে। এআইয়ের খাতা এখন শূন্য। এখনই সময় সেখানে নিজেদের নাম লেখানোর। প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে এটা শুরু করতে পারেন। আগে সেসব কাজ শুধু বড় প্রতিষ্ঠান করত, সেগুলো এখন আপনারাও করতে পারবেন।’

আলোচনার সময় মোহাম্মদ অলি আহাদ প্রোজেক্টরের সাহায্যে মজার ভিডিও ও অনেক স্লাইড দেখান। এতে আগত পাঠকদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্পর্কে বুঝতে সুবিধা হয়। তাঁর কথায় উঠে আসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর গবেষণার কথা। তিনি সবাইকে এআইয়ের সম্ভাবনা নিয়ে অনেক আশা দেখান।

প্রশ্নোত্তর পর্বে উত্তর দিয়েছেন দুই আলোচক মোহাম্মদ অলি আহাদ ও বি এম মইনুল হোসেন
জাহিদুল সেলিম

মূল আলোচনার পর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। দুই আলোচক এই পর্বে পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। এই পর্ব পরিচালনা করেন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদনা দলের সদস্য শিবলী বিন সারওয়ার। দর্শকরা অনেক মজার মজার প্রশ্ন করেন। ধৈর্য ধরে সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন দুই আলোচক। যেমন, এআই কি ভবিষ্যতে সবকিছু ধ্বংস করে দেবে? এআইয়ের কারণে মানুষের চাকরি চলে যাবে? বাংলাদেশে এআই গবেষণার অগ্রগতি কতটা হয়েছে? কীভাবে এআই নিয়ে কাজ করা শুরু করব? একের পর এক এমন প্রশ্ন আসতেই থাকে। সময় ফুরিয়ে আসে, তবু দর্শকদের প্রশ্ন ফুরোয় না। কিন্তু সময় স্বল্পতার জন্য বাধ্য হয়ে ইতি টানতে হয় প্রশ্নোত্তর পর্বের। যারা প্রশ্ন করেছেন, তাঁদের সবাইকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় বিজ্ঞানচিন্তা।

বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদনা দলের সদস্য শিবলী বিন সারওয়ার

এরপর উপস্থিত দর্শকদের জন্য শুরু হয় কুইজ প্রতিযোগিতা। সঠিক উত্তরদাতাদের জন্য ছিল বিজ্ঞানচিন্তার পক্ষ থেকে আকর্ষণীয় পুরস্কার। মোট ১১ জন বিজয়ীকে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।

জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ
জাহিদুল সেলিম

সবশেষে অতিথি ও বিজয়ীদের ফটোসেশনে অংশ নেয় বিজ্ঞানচিন্তা টিম। শেষ হয়েও যেন শেষ হয় না এই অনুষ্ঠান। পাঠক-লেখক-শ্রোতাদের হাসি আলাপের মাধ্যমে শেষ হয় এই মিলনমেলা।

এ আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন দেশবরেণ্য জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, বিজ্ঞান বক্তা আসিফসহ আরও অনেকে।