৭ অক্টোবর ২০২২। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স। সারা দেশের নানা কোণ থেকে আসা ৪ শয়ের বেশি শিক্ষার্থীর সমাগমে মুখরিত ভবনটি। ৮ম জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্বের পর্দা নামছে। বিজয়ীদের মধ্যে থেকে নির্বাচিতরা অংশ নেবে ১৯তম আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে। বলা যায়, ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের প্রাণের মিলনমেলা বসেছে এ ভবনে।
সকাল সাড়ে আটটায় সবাই মিলে এক সুরে জাতীয় সংগীত গেয়ে শুরু। তারপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সহ-সভাপতি মুনির হাসান, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের কিউরেটর আনিসুর রহমান ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দ্রুত শিক্ষার্থীরা পা চালাল পরীক্ষা কক্ষের দিকে। দোতলা এবং তিনতলা মিলে সবার বসার ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে তিন তলায় পরীক্ষা কক্ষের সামনে বসেছে স্টল। কোনোটিতে পাওয়া যাচ্ছে বিজ্ঞানবিষয়ক বই, তো কোনোটিতে ম্যাগাজিন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার স্টলও আছে। পরীক্ষা শেষে অংশগ্রহণকারীরা সবাই খুশি। গল্প করছে, নেড়েচেড়ে দেখছে বিজ্ঞানের বই-ম্যাগাজিন। রয়েছে ড্রোনের ওড়া, রোবট প্রদর্শনী ও ৬ডি মুভি দেখার সুযোগ। ঘণ্টা দুয়েকের এই বিরতিতে সবাই মিলে মেতেছে বিজ্ঞানের আমেজে। বিরতির পর সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট। বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির স্বেচ্চাসেবক এসএস সিফাত দেখালেন বিজ্ঞানের কারিকুরি ও নিজের নৈপুণ্য।
তারপর মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব। মঞ্চে আসীন দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মুশতাক ইবনে আইয়ুব এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সৌমিত্র চক্রবর্তী।
সবশেষে সমাপনী পর্ব। মঞ্চে উপস্থিত অতিথিরা। এর মধ্যে আছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মাহমুদুর রহমান, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পরিচালক এ. কে. এম. লুৎফুর রহমান সিদ্দীক, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী, বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সহসভাপতি মুনির হাসান ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী। সভাপতিত্ব করছেন বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
এই চিত্রটির দেখা মিলেছে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ৮ম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্বে। সারা দিন জুড়ে চলেছে বিজ্ঞানের নানা আয়োজন। বিকেলে পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয়েছে অনুষ্ঠানটি। চারশর বেশি ক্ষুদে বিজ্ঞানী, তাদের অভিভাবক, স্বেচ্ছাসেবক ও বিজ্ঞানে আগ্রহীদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে ভবনটি। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনটি ক্যাটাগরিতে ১২জন চ্যাম্পিয়ন, ১৭ জন প্রথম রানার্স আপ ও ২৩ জন দ্বিতীয় রার্নাস আপসহ মোট ৫২ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিজ্ঞান মানুষকে আলোকিত করে। সায়েন্স অলিম্পিয়াডের মতো আয়োজনগুলো থেকে তোমরা নিজেরা আলোকিত হবে ও আশেপাশের সমস্যাগুলো সমাধান করে সেখানেও আলো ছড়াতে পারবে।’
অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘শিক্ষা ও জ্ঞানের পরিধি অসীম। তাই তোমাদের অসীমে চিন্তা করতে হবে। কাঠামোগত প্রশ্ন করা চলবে না। বিজ্ঞানমনস্কতা কেবল বিজ্ঞানের প্রয়োগের ওপর নির্ভরশীল না। সব বিজ্ঞানের মূলে আছে প্রশ্ন। তোমাদের প্রশ্ন করা শিখতে হবে।’
তাছাড়াও এ আয়োজনের বিশেষ অংশ ছিল বিজ্ঞান জাদুঘরের আয়োজনে বিজ্ঞান কুইজ ও বিজ্ঞানবিষয়ক বক্তৃতা। বিষয়, ‘খাদ্য নিরাপত্তায় বিজ্ঞান’ ও ‘বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তির ব্যবহার’। এতে বিজয়ী ১৬ জনকে জাদুঘরের পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়।
জাতীয় পর্ব থেকে নির্বাচিত জুনিয়র ও সেকেন্ডারি ক্যাটাগরির ৪৬ বিজয়ী অংশ নেবে জাতীয় ক্যাম্পে। ক্যাম্পটি অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরের ৮-১০ অক্টোবর। সেখানে নানাভাবে বাছাই শেষে গঠন করা হবে ৬ সদস্যের আইজেএসও বাংলাদেশ দল। কলোম্বিয়ার বোগোতায় অনুষ্ঠেয় ১৯তম আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে এই ৬ ক্ষুদে বিজ্ঞানী-ই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
এবারের ৮ম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (এসপিএসবি), বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ) এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। আয়োজনটির টাইটেল স্পন্সর হিসেবে ছিল আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। সহযোগী হিসেবে ছিল দৈনিক প্রথম আলো ও ম্যাসল্যাব। স্থানীয় আয়োজক হিসেবে যুক্ত ছিল ম্যাসন বিজ্ঞান ক্লাব, অব্যয় ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির খুলনা জেলা ইউনিট। আর ম্যাগাজিন পার্টনার ছিল কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা।