সফলভাবে শেষ হলো বাংলাদেশের প্রথম এনএলপি হ্যাকাথন

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের সঙ্গে অতিথিরা

অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের প্রথম ৩৬ ঘন্টাব্যাপী ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (এনএলপি) হ্যাকাথন। গত ২১ জানুয়ারি, শনিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় এ প্রতিযোগিতার পর্দা নামে পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে। এ আয়োজনের চূড়ান্ত পর্বের বিজয়ী দলগুলো পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে মোট এক লক্ষ টাকা মূল্যের প্রাইজমানি। এ ছাড়া সব অংশগ্রহণকারীদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। পাশাপাশি ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও ইন্টার্নশিপ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করার কথাও বলা হয়।

আধুনিক যুগে প্রযুক্তি ছাড়া উন্নয়ন ও জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব। প্রযুক্তিতে ভর করে দরজায় কড়া নাড়ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এ বিপ্লবের অন্যতম হাতিয়ার মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ডিপ লার্নিং ও ব্লকচেইন। এরকম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির নাম ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং বা এনএলপি (NLP)। রোবটকে নির্দেশনা দেওয়া, চ্যাটবটের স্বয়ংক্রিয় জবাব কিংবা মুঠোফোনের ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের মূলমন্ত্র এই ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং।

সেজন্যই এনএলপিতে আগ্রহী ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আয়োজন করা হয় এই হ্যাকাথন। হ্যাকাথন মানে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ব্যবহার করে নানারকম সমস্যা সমাধানের প্রতিযোগিতা। হ্যাকাথন শব্দটি মূলত হ্যাক ও ম্যারাথন-এর সমন্বয়ে তৈরি। মানে, হ্যাকাথনের অর্থ হলো হ্যাক ও সহ্যশক্তির পরীক্ষা। হ্যাকিং বলে এক্ষেত্রে বোঝানো হয়, কোনো সমস্যার গভীরে ঢুকে তার মূল কারণ খুঁজে বের করা ও সেটার কার্যকর সমাধান করা। সাধারণত ৩৬ ঘণ্টা ধরে একটানা চলে হ্যাকাথন। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের জীবনের বাস্তব ধরনের সমস্যা সমাধানের অভ্যাস গড়ে ওঠে এর ফলে।

চ্যাম্পিয়ন বুয়েট সিমান্টিক সেনানিগান্স

বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের যৌথ আয়োজনে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয় এই ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (এনএলপি) হ্যাকাথন। সহযোগিতা করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি বিভাগ) এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)।

দুই দিনের এ হ্যাকাথনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. যারিফ উল আলম, রামিশা আলম ও সামীন সাহগীরের টিম বুয়েট সিমান্টিক সেনানিগান্স। প্রথম রানার্স আপ হয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. আজমাইন মাহতাব, শেখ আয়াতুর রহমান ও আনিকা তাহসিনের টিম লিংগুয়েস্টিক ম্যাভরিক্স। দ্বিতীয় রানার্স আপ হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিদওয়ানুল হাসান তানভির, সিহাত আফনান ও সায়েক বিন ইসলামের টিম রিটার্ন জিরো।

পুরস্কার বিতরণী পর্বে উপস্থিত ছিলেন কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমলুক ছাবির আহমেদ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক নাবিল মোহাম্মেদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিফাত শাহরিয়ার, ইজি সেবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এম আরিফুর রহমান, লিঙ্ক থ্রির ব্র্যান্ড, সেলস ও মার্কেটিং বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার সাব্বির হাসান, উইকিমেডিয়া ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ডেভেলপার নাজিয়া তাসনিম, বিকাশের প্রকৌশলী মো. ইশতিয়াক হোসাইন শিহাব, বিডিওএসএনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমাসহ আরও অনেকে। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার পাশাপাশি এ ধরনের আয়োজন নিয়মিতভাবে করার আশা প্রকাশ করেন মমলুক ছাবির আহমেদ।

প্রথম রানার্স আপ টিম লিংগুয়েস্টিক ম্যাভরিক্স
দ্বিতীয় রানার্স আপ টিম রিটার্ন জিরো

হ্যাকাথনের প্রথম দিন একটি অনলাইন সেশন পরিচালনা করেন ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেসের (এডব্লিউএস) সলিউশন আর্কিটেক্ট মোহাম্মদ মাহদী-উজ-জামান। এ সময় বিডিওএসএনের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটির অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেনসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

দুই দিনের এ হ্যাকাথন পরিচালনা করেন অ্যামাজন অ্যালেক্সার অ্যাপ্লায়েড সায়েন্টিস্ট সুদীপ্ত কর ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারিগ সাদেক।

বাংলাদেশে এই প্রথম এমন আয়োজন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মুনির হাসান জানান, ‘এনএলপি নিয়ে অনেক দিনের পরিকল্পনার ফসল এবারের হ্যাকাথন। এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর বিডিওএসএনের আয়োজনে ও সুদীপ্ত করের পরিচালনায় রাজধানীতে আয়োজন করা হয়েছিল ‘স্টোরি অব এনএলপি’ কর্মশালা। সেই কর্মশালার পরে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানীয় সমস্যার সমাধানে এনএলপিতে দক্ষ লোকজনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই এমন হ্যাকাথন আয়োজন করা হলো। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন টেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মিলিয়ে অর্ধশতাধিক অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো এ হ্যাকাথন।’ হ্যাকাথনের সব স্পন্সর প্রতিষ্ঠানকে কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।

এ হ্যাকাথনের গোল্ড স্পন্সর হিসেবে ছিল ব্রেইন স্টেশন ২৩, সিলভার স্পন্সর হিসেবে ছিল ইজি সেবা এবং ইন্টারনেট পার্টনার হিসেবে ছিল লিঙ্ক থ্রী টেকনোলজিস।