চলছে জাতীয় বৃক্ষমেলা ২০২২

দুই বছর পর আবার আয়োজিত হচ্ছে জাতীয় বৃক্ষমেলা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মাসব্যাপী এই মেলা চলছে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

এবারের মেলায় মোট ১১০টি স্টলে রয়েছে প্রায় দু শ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফল, ফুল, বনজ, ঔষধি ও বনসাই উদ্ভিদের চারা ও গাছ।

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের স্টল

মেলার ১৬ তম দিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় নানা বয়সীর এবং নানা পেশার মানুষের পদচারণায় মুখর মেলা প্রাঙ্গণ। তাঁদের কেউ গাছ কিনছেন, কেউ ঘুরে দেখছেন স্টলগুলো। ফুল, ফলসহ দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির গাছ সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো হয়েছে স্টলগুলোতে। নানা জাতের ফুটন্ত ফুল এবং রসালো ফল সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিছু কিছু স্টলে শোভা পাচ্ছে হরেক রকম ক্যাকটাস এবং অর্কিড। দেশি-বিদেশি গাছের মধ্যে রয়েছে—কাজু বাদাম, লাল নাসপাতি, সবুজ আপেল, এপ্রিকট, গোল্ডেন আপেল, ডায়মন্ড রিভার লংগান, আখরোট, বারমাসি থাই মিষ্টি তেঁতুল, সৌদি মরিয়ম খেজুর, লাল আঙুর, অ্যাভোকাডো, ম্যানিলা চেরি, বেরি, সফেদা, লাল লটকন, বুবেরি, রেড আপেল, বিঁচিহীন মাধুরী পেয়ারা, আশ্বিনা আম, চাংমাই আম, ব্যানানা আম, রাম্বুটান, জবা ফুল, ম্যান্ডেভিলা, পলাশ, হাসনাহেনা, কনকচাঁপা, বাসন্তী, আঁশফল, ঘৃতকুমারী, ক্যাকটাস, অর্কিড, বনসাই ইত্যাদি।

হরেক ফুলের সমারোহ

বৃক্ষমেলায় এক বিক্রেতা জানান, ‘দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ছাদ-বাগান। অল্প জায়গার মধ্যে দ্রুত ফুল-ফলের জন্য ক্রেতারা হাইব্রিড ফুল ও ফলের গাছের দিকে ঝুঁকছেন।’

শুধু গাছপালা নয়, বাগান পরিচর্চার সরঞ্জাম, জৈব সার, হরমোন, ম্যাক্রো ও মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট, ফুলের টব, কীটনাশক, ইত্যাদিও মিলবে বৃক্ষমেলায়। রয়েছে গাছ লাগানো ও পরিচর্চা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও।

নানা জাতের আমের চারা পাওয়া যাচ্ছে বৃক্ষমেলায়

উদ্ভিদের যেমন বৈচিত্র আছে, প্রজাতিভেদে দামও আলাদা। কিশোরগঞ্জ থেকে আসা এক নার্সারির স্বত্তাধিকারী বলেন, ‘মেলায় দেশি-বিদেশি গাছের চারার দাম প্রজাতিভেদে আলাদা। ২০ থেকে ৪ লাখ টাকা দামের চারা ও গাছ বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বনসাইগুলো। আবার ফলজ উদ্ভিদের চারার দাম ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ফুল এবং ঔষধি গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকায়।

চায়না বটের বনসাই

দেশে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে অর্কিড। বৃক্ষ মেলায় দেখা গেল বেশ কিছু অর্কিডের স্টল। ব্র্যাক নার্সারির এক বিক্রয়কর্মী জানালেন, বেশিরভাগ অর্কিডই তাঁরা থাইল্যান্ড থেকে আমদানী করেন। তবে দেশে উৎপাদিত কিছু অর্কিডও এখানে আছে। চাহিদা বাড়ার ফলে বর্তমানে দেশে সাভার, মানিকগঞ্জ এবং ময়মনসিংহে অর্কিডের কয়েকটি খামার গড়ে উঠেছে। অর্কিডের চারা বা গাছের দাম দু শ থেকে শুরু করে কয়েক হাজার পর্যন্ত।

মেলায় ইনডোর প্ল্যান্টের বিশাল সংগ্রহ

করোনার কারণে দুবছর বন্ধ ছিল বৃক্ষমেলা। তাই চলতি মেলা নিয়ে ক্রেতাদের উৎসাহ একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে। মেলায় ঘুরতে আসা গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী পিয়াল বলেন, আমি বৃক্ষপ্রেমী। প্রতি বছর অপেক্ষায় থাকি এই মেলার জন্য। পরিচিত গাছ যেমন দেখা যায়, অপরিচিত ও দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদেরও সন্ধান মেলে এখানে।

বাহারী সব অর্কিড মিলবে বৃক্ষমেলায়

উল্লেখ্য, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এ বৃক্ষমেলা শুরু হয়েছে গত ৫ জুন। ‘বৃক্ষপ্রাণে প্রকৃতি-প্রতিবেশ/ আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ’ স্লোগানে মুখরিত এ মেলা চলবে ৪ জুলাই পর্যন্ত।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইউল্যাব, ঢাকা